অপেক্ষায় আছি সেই সুদিনের

বাবা ও মেয়ে।
বাবা ও মেয়ে।

মেয়ে একটু একটু করে বড় হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম পিএইচডিতে এসে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে মেয়ে আর মেয়ের মা চলে আসবে। ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎই করোনার ধাক্কা। তাদের যাত্রার মাত্র দুই দিন আগে ফ্লাইট বাতিল।

এরপর দেশের করোনা পরিস্থিতি বাবা-মেয়েকে আলাদা করে রেখেছে! এখনো কথা ঠিকমতো বলতে পারে না। কিন্তু বাবার সঙ্গে তার কথা বলা চাইই। বাবা কোথায় জিজ্ঞাসা করলে নাকি ওর মায়ের মোবাইল এনে দেখিয়ে দেয়!

ঈশ্বর বাবা-মেয়ের মাঝে অসাধারণ এক বন্ডিং দিয়ে পাঠিয়ে দেন। হাজার মেইল দুরে থেকেও তা ফ্যাকাশে হয়ে যায় না। আর তাইতো বাবাকে ভিডিও করে হা করে মেয়ের এগিয়ে দেওয়া চামচের খাবার খেয়ে বলতে হবে ‘ওয়াও কি টেস্টি!’ শুনে মেয়ে তৃপ্তির হাসি দেবে। শুনেছিলাম, মেয়েরা বাবাদের জীবনকে স্বর্গ বানিয়ে দেয়! দূরে থেকেও এটাই তার বাস্তব প্রমাণ!

করোনা পরিস্থিতি আমাদের সবার জীবনকেই কিছু না কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। বিশেষত যারা দেশের বাইরে থেকে দেশে পরিবার পরিজন রেখে এসেছেন তাদের মানসিক অস্থিরতা অনেক বেড়ে গেছে। সারা দিন ল্যাব শেষে ঘণ্টাখানেক বাবা-মেয়ের মাঝে আলাপ আলোচনা আর খুনসুটি দারুণভাবে এই বিষণ্নতা কাটাতে সহায়তা করে। মেয়ের সঙ্গে বাবাকে ফোনেই লুকোচুরি খেলতে হবে! আহারে জীবন!! প্রতিটি মানুষকেই কিছু না কিছু বিষয়ে হাপিত্যাশ করতে হয়। অপেক্ষায় আছি, পরিস্থিতি একদিন ঠিক হবে, মেয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে বাবার বুকে! দিন শেষে গবেষণাগার থেকে ফিরে বাবা-মেয়ে মোবাইলের পর্দায় না হয়ে সরাসরি লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠব। পৃথিবীতে একদিন স্বস্তি ফিরে আসবে কেটে যাবে মহামারির এই ভয়াবহতা। অপেক্ষায় আছি, কবে আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।

*পিএইচডি গবেষক, বুসান, দক্ষিণ কোরিয়া