কানাডার ১৫৩তম জন্মদিন উদযাপন

ক্যালগেরিতে বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন নতুন প্রজন্মের মাঝে ‘চারা রোপণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন গাছের বীজ/চারা, সার, মাটি বিতরণ করে। ছবি: সংগৃহীত
ক্যালগেরিতে বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন নতুন প্রজন্মের মাঝে ‘চারা রোপণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন গাছের বীজ/চারা, সার, মাটি বিতরণ করে। ছবি: সংগৃহীত

বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনা না থাকলেও কানাডাবাসীর মধ্যে ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা দেশটির ১৫৩তম জন্মদিনে। বছরের বেশির ভাগ সময় বরফাচ্ছন্ন থাকা কানাডার জন্মদিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিবছর অনাড়ম্বর ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে ‘কানাডা ডে’ (প্রতি বছরের ১ জুলাই) আর এর সঙ্গে যোগ হন প্রবাসী বাঙালিরাও। কিন্তু এ বছর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমভাবে উদযাপিত হলো কানাডা দিবস।

সেই চিরচেনা কানাডার ক্যালগেরির স্থানীয় জেনেসিস সেন্টার, প্রেইরি উন্ডসপার্ক, রকিভিউ অ্যালায়েন্স, ডাউন টাউনসহ ক্যালগ্যারির প্রায় প্রতিটি স্থানেই প্রতিবছর যে উপচে পড়া ভিড় থাকে, তা ছিল না সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর করোনাভাইরাসের কারণে।

কানাডার ক্যালগেরিতে বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কানাডা দিবস উপলক্ষে ‘কানাডা ডে’ আরও সবুজ করতে নতুন প্রজন্ম এর মাঝে ‘চারা রোপণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন গাছের বীজ/চারা, সার, মাটি বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগারির সভাপতি মো. রশিদ রিপন, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত বসু, সহসভাপতি মো. কাদির ও সহসভাপতি রিতা কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ মজুমদারসহ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা।

মো. রশিদ রিপন বলেন, ‘কানাডা অন্য অনেক দেশের চেয়ে সবুজ। আমাদের এই চারা রোপণ কর্মসূচি কোমলমতি শিশুদের সবুজের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে এবং কানাডাকে আরও বেশি সবুজে ভরে তুলতে অনুপ্রেরণা দেবে। এটি একই সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেম ও দেশপ্রেমের সংমিশ্রণ। ফলে তারা সুনাগরিক হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’

জয়ন্ত বসু বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের নতুন প্রজন্মের মানসিক ও শিক্ষা বিকাশের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকাণ্ডে ও দক্ষতা অর্জনে পারদর্শী হয়ে উঠুক আর সেই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের এই কর্মসূচি।’

মো. কাদির বললেন, ‘ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগ আমাদের কোমলমতি শিশুদের আগামী দিনের পথচলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।’

রিতা কর্মকার জানান, বৈশ্বিক মহামারির করোনাকালীন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চারা বীজ বিতরণের এই কর্মসূচি ছোট ছোট শিশু–কিশোরদের তাদের অবসর সময়টুকুকে আরও আনন্দময় করে তুলবে।

দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত
দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সদস্যরা।

আয়তনের দিক থেকে কানাডা ৯ হাজার ৯৮৫ মিলিয়ন কিলোমিটার হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৩৬ মিলিয়ন। যার রয়েছে ১০টি প্রভিন্স এবং ৩টি টেরিটোরিজ।

১৯৭১ সালে কানাডাই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয় মাল্টিকালচারিজমের, যার মূলমন্ত্র হলো সব নাগরিকের থাকবে সমান অধিকার ও দায়িত্ব। যার ফলে দেশটির জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৭ মিলিয়নের বেশি লোক অভিবাসী হয়ে দেশটিতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কানাডা শান্তি রক্ষায় সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

কানাডার ইমিগ্রেশন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী পাড়ি দেয় কানাডায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কানাডার বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা যোগাযোগব্যবস্থা, জীবনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীল অর্থনীতি, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণে দেশ হিসেবে বিশ্বের সবার কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং আলবার্টা প্রিমিয়ার জেসন কেনী পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন।

ক্যালগেরির এ বি এম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট এবং বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মো. বাতেন বলেন, ‘দূর প্রবাসে থাকলেও মাতৃভূমি আমাদের হৃদয়ে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা আমাদের আশার আলো দেখায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম রোল মডেল দেশ। কানাডার জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা প্রচুরসংখ্যক বাঙালিরা এ দেশে আসুক, জ্ঞানার্জন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক।’

ক্যালগেরির ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান চিকিৎসক মো. জাকির আজম সিকদার বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে কানাডায় বসে কানাডার ১৫৩তম জন্মদিনে উদযাপন করছি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশিরা এ দেশে এসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুক, এমনটাই কামনা করছি।’

বেঙ্গল ফার্মেসি ও কমিউনিটি আর এক্স বাংলাদেশি ফার্মেসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম খান বলেন, বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশ নিয়ে ভাবছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী হয়েও আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করি, অহংকার করি। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ও কানাডার দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। কানাডার ১৫৩তম জন্মদিনে এটাই আমার প্রত্যাশা।

ক্যালগেরির মাহমুদ হাসান দিপু বললেন, ‘বাংলাদেশ যেমন আমাদের অহংকার পাশাপাশি কানাডার আমাদের কাছে অহংকার, কানাডার জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’

১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যেসব দেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল তাদের মধ্য অন্যতম দেশ কানাডা। সেই কানাডার জন্মদিনেই দেশটির আরও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক, প্রচুরসংখ্যক বাঙালিরা এখানে এসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং প্রবৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা রাখুক এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার প্রবাসী বাঙালিদের।