গর্বের ধন অধ্যাপক ড. ইউনূস

ড. ইউনূসের সঙ্গে লেখক
ড. ইউনূসের সঙ্গে লেখক

আমি তখন কম্বোডিয়াতে একটা ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া প্রতিষ্ঠানে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করি। সম্ভবত ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কম্বোডিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সেমিনারে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। যেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়োজন, স্বভাবতই সেখানে অন্য সব মন্ত্রণালয়সহ গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি ছাড়াও দেশ-বিদেশের অনেক পরামর্শকের অবধারিত উপস্থিতি তো বটেই।

বিভিন্ন বিষয়ে কথা চলছে। হঠাৎ গ্রামীণ ব্যাংক প্রসঙ্গ। উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে স্বয়ং দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কণ্ঠে মন্তব্য যে ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে কী অসাধারণ কাজ করে চলেছে। এ কথা শুনেই সবার দৃষ্টি আমার প্রতি, কারণ আমি বাংলাদেশি। অসাধারণ এক মুহূর্ত, গর্বে বুক ভরে যাওয়ার মতো অবস্থা।

রুয়ান্ডাতে ২০১৬ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এসেছি। অফিসের জন্য গাড়ি কিনব। একজন এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, যিনি গাড়ি কিনে দিতে সহযোগিতা করতে পারবেন। জানতে চাইলেন আমি ইন্ডিয়ান কি না! জবাবে বাংলাদেশি বলতেই উৎফুল্ল ভাব। কারণ, তিনি ড. ইউনূসকে চেনেন। আমি চিনি কি না জানতে চাইলেন এবং জবাবে যা বলার তা–ই বললাম।

যা–ই হোক, তিনি কীভাবে অধ্যাপক ড. ইউনুসকে চেনেন জানতে চাইতেই খুশিতে ডগমগ এবং গর্বিত উত্তর যে তিনি নিজে কখনো ড. ইউনূসকে সরাসরি না দেখলেও বিদেশি এক ভদ্রলোকের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে এত জেনেছেন যে এতেই তিনি বাংলাদেশের ভক্ত হয়ে গেছেন। তাঁদের দেশে আমাদের উপস্থিতি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করব জেনে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর বিশ্বাস আরও অধিক পরিমাণে বেড়ে গেছে। মানে বাংলাদেশ, অধ্যাপক ইউনূস, ক্ষুদ্রঋণ—এসব কিছুই তাঁর কাছে অধিকতর উৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রুয়ান্ডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আয়োজনে এক অনুষ্ঠান হয় সব ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ইত্যাদির অংশগ্রহণে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উপস্থিতি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর একসঙ্গে বসে আছেন। সুযোগের সন্ধানে থাকা আমি কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম। বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনেই মন্তব্য, ‘অধ্যাপক ইউনুস কেমন আছেন এবং শিগগিরই আমরা তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতে যাচ্ছি।’

মনে শান্তি, চিত্তে শান্তি । এ যেন এক অমূল্য সম্ভাষণ!

যখন কম্বোডিয়াতে কাজ করি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নমপেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ২০১৪ সালে একবার কম্বোডিয়া গেলেন। আমরা সব বাংলাদেশি সব কাজকর্ম রেখে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত, কারণ আমাদের গর্বের ধন এসেছেন। অনুভূতিই অন্য রকম।

কথা বলা এবং ছবি তোলারও সুযোগ পেলাম । সুযোগ পেয়েই বলে দিলাম আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। যেন অন্য রকম ভালোবাসায় আরও কাছে টেনে নিলেন তিনি।

ক্ষুদ্র মানুষ আমি। এমন বটবৃক্ষসম মানুষকে নিয়ে লিখব, সেই সাহস বা যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। তবু শুধু অভিজ্ঞতাটুকু লিখে মনের অনুভূতি প্রকাশ করার সাহস দেখিয়েছি। এমন একজন মানুষ তিনি, যাঁকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি।

২৮ জুন ছিল তাঁর ৮০তম জন্মদিন।

স্যার, বেঁচে থাকুন আরও ৮০টি বছর এমন করেই, দেশে এবং বিশ্বে আপনার বিচরণ দেখুক না সারা বিশ্ব আরও অনেকটি বছর।

শুভ জন্মদিন, স্যার!