চীন-ভারত সংঘর্ষ এবং আমাদের পর্যবেক্ষণ

সম্প্রতি লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ফাইল ছবি রয়টার্স
সম্প্রতি লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ফাইল ছবি রয়টার্স

মাঝেমধ্যে লেখালেখি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আজকাল নাকি মানুষ পড়তে চায় না। অন্য কেউ পড়ে শোনায় এ রকম একটি মেন্টালিটি হয়ে গেছে বেশির ভাগ মানুষেরই। কিন্তু আমি একটি বিষয় বুঝে উঠতে পারছি না, এই যে মানবসভ্যতার এই উন্নতি তো একমাত্র সম্ভব হয়েছে পড়ালেখার মাধ্যমে। আর যদি তা–ই সত্য হয়, তবে পড়ালেখা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার একটি ভয়াবহ দিক আমি দেখতে পাচ্ছি। ধীরে ধীরে সেই সভ্যতার অবসান, নিম্ন প্রবাহ অথবা সেই অবক্ষয় অঞ্চলভিত্তিকও হতে পারে। যেমন যে জাতি যতই লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে পড়বে ততই অবনতি ডেকে নিয়ে আসবে। অবস্থা দেখে মনে হয় এখন মেজরিটি মানুষ নিজের জীবনকে কীভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এনজয় করা যায়, তা নিয়েই বেশি ব্যতিব্যস্ত। এখন পুরো পৃথিবীরই একই অবস্থা। পার্শ্ববর্তী গ্রামে, পার্শ্ববর্তী শহরে কিংবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কী হচ্ছে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু প্রত্যেক সচেতন মানুষমাত্রই নিজের সুবিধার জন্য, নিজে সুন্দরভাবে নির্ভেজাল জীবন যাপন করার জন্যই বরং প্রতিবেশীকে যেমন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন, অথবা বলতে পারি এগিয়ে আসা উচিত, তেমনি নিজেকে সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিবেশী সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সেদিক থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, সে বিষয় গভীরভাবে সতর্ক থাকতে হয়, সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

চীন–ভারত সংঘর্ষে আমাদের মাথাব্যথা নেই বলে বসে থাকা বোকামিরই নামান্তর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি, আমরা শান্তি চাই, চাই না যুদ্ধে জড়াতে। ভালো কথা। কিন্তু আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত-চীনের ইতিহাস গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ হলেও ভারত ও চীনের সঙ্গে আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক মিত্রতা। সতর্কতার সঙ্গে ভারত ও চীনের বিরোধ পর্যবেক্ষণ করা যেমন আমাদের জন্য জরুরি, তেমনি ভারত ও চীনের যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের নিজেদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের দুই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানানো উচিত।


চীন–ভারত একমাত্র যুদ্ধ
ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ শাসন করে, তখন তারা চায়নিজদের একবার পরাজিত করে হংকং চীনের কাছ থেকে এক চুক্তির মাধ্যমে ইজারা নিয়ে নেয় ১০০ বছরের জন্য। হংকংয়ে স্থাপন করে দীর্ঘ উপনিবেশ। প্রায় ৬০ বছর আগে, ২০ অক্টোবর ১৯৬২, দুনিয়ার দুই বৃহৎ পারমাণবিক শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবার সীমান্তে যখন সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অতীব কাছে অবস্থান করছিল এবং পুরো বিশ্ব আতঙ্কিত দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছিল, কী ঘটে দেখতে, ঠিক তখনই চীন ভারত আক্রমণ করে বসল। তিব্বত নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ, উত্তেজনা ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের পরিণতি ছিল সে যুদ্ধ। যুদ্ধ সংক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং ভারত সে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে। তবে সেই যুদ্ধ এখনো চীন-ভারত সম্পর্কের ওপর দীর্ঘ ছায়া ফেলে রেখেছে। সেই যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দুই দেশের বৈদেশিক নীতি তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

প্রথমত, ১৯৬২ সালের যুদ্ধ চীন-ভারত সম্পর্কের চিরস্থায়ী উত্তেজনার বিষয় তিব্বত ইস্যুটির ভাগ্যকে সিলমোহর করে দেয়। যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই তিব্বত নিয়ে বেইজিং ও দিল্লির সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। কারণ, ভারত তিব্বতে চীনের শাসন ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছিল চীনারা। অন্যদিকে ভারত তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন তুলে নিয়ে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাচ্ছে, এই মর্মে চীনকে অভিযুক্ত করে আসছিল; সেই যুদ্ধ যদিও সেই সন্দেহগুলোকে আরও দৃঢ় করল, কিন্তু সেই যুদ্ধে চীন-ভারত সীমান্ত নির্ণীত হয়ে গেল। দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন থাকলেও মোটামুটি একটি দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধপরিহার নীতি অবলম্বন করে আসছিল দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে।

দ্বিতীয়ত, ১৯৬২ সালে চীন ও ভারতের যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিল সীমান্ত বিরোধ, যা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। আজ অবধি চীন ভারতের অরুণাচল প্রদেশের দাবি অব্যাহত রেখেছে এবং নয়াদিল্লি চীন নিয়ন্ত্রিত আকসাই ভূখণ্ড দাবি করে আসছে। এ বিতর্কটি প্রায় দীর্ঘ ৬০ বছর আলোচনার পরও এবং প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ির ২০০৩ সালে চীন সফর সত্ত্বেও সম্পর্কের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। ইস্যুটিকে শুরু করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও এটি কেবল দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুই থেকে যায়নি, বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শক্তিশালীভাবে বিষয়টি পুনঃ স্থাপিত হয়েছে নিঃসন্দেহে বলা যায়, যার ফল বর্তমান যুদ্ধ।

এ ছাড়া অঞ্চলগত বিরোধের ফলে চীন-ভারত সীমান্ত বিশেষত বিতর্কিত অঞ্চলে বিপজ্জনক সামরিকীকরণের কারণ ঘটেছে। উভয় পক্ষই পরিবহনের অবকাঠামো, বিমান ও ফাঁড়ি তৈরি করেছে এবং সীমান্তে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে। ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে প্রায়ই স্থবিরতা এবং এমনকি মাঝেমধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে। বিতর্কিত অঞ্চলে সীমান্ত আক্রমণ এবং টহল দিয়ে উসকানি, এ–জাতীয় ঘটনাগুলো বৃহত্তর সশস্ত্র সংঘর্ষের আভাস দিচ্ছিল প্রতিনিয়ত। এই বছরের শুরুর দিকে, চীন ও ভারত সীমান্ত প্রবেশের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের জন্য একটি ব্যবস্থা স্থাপনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। তা ছাড়া চীনের পাকিস্তানের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক ভারত সহজভাবে মেনে নিতে পারছিল না। তাই ভারত মার্কিনদের সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় মৈত্রী চুক্তিসহ মার্কিনদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়।

তৃতীয়ত, সীমান্ত যুদ্ধ উভয় পক্ষের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। আজ অবধি বেইজিং সন্দেহ করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তির বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে তিব্বতে চীনের শাসনব্যবস্থা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত। এ সন্দেহগুলো কেবল ভারতের দালাই লামাকে আশ্রয় এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক উন্নতির ফলে আরও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তার অংশ হিসেবে, ভারত এখনো চীনকে একটি জাতীয়তাবাদী, আগ্রাসী শক্তি হিসেবে দেখছে, যারা এশিয়ার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। অধিকন্তু ভারত সন্দেহ করে আসছে যে ১৯৬২ সালের মতো আকস্মিকভাবে চীন আবারও অপ্রত্যাশিতভাবে ভারত আক্রমণ করে বসতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, সীমান্ত ইস্যুতে চীনের সাম্প্রতিক দৃঢ়তা এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির বিশাল সামরিক কাঠামো ভারতের জন্য অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে। এই স্টেরিওটাইপগুলো, প্রায়ই অতিমাত্রায় মিডিয়া ইন্টারেস্ট দ্বারা প্রভাবিত। আগের ইতিহাস এবং বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক উন্নতিতে ঈর্ষান্বিত ভারত একটি শক্ত ও স্থিতিশীল চীন-ভারত সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

১৯৬২-এর যুদ্ধ মূলত চীন-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হয়, যা উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈরী মনোভাবাপন্ন নীতিতে রূপ দিয়েছে। অন্যদিকে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে প্রতিটি দেশ এমন পলিসি নিয়েছে, যা একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়, বেইজিংয়ের ইসলামাবাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বন্ধুত্ব এবং মস্কোর সঙ্গে দিল্লির অংশীদারত্ব ইত্যাদি। প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ হিসেবে, বিশেষত মিয়ানমার ও নেপালে উভয় দেশে অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশ লিপ্ত। দুই দেশের প্রতিযোগিতা এবং তাদের সীমান্তের কাছাকাছি দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক দেশ অপরের ওপর অসন্তুষ্ট। তাই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চীনা অনুপ্রবেশ এবং ভারতের সামুদ্রিক সীমান্তের আশপাশে চীনের ‘মুক্তোর ঝাঁকুনি’ নিয়ে দিল্লি প্রায়ই অখুশি এবং তা তাদের বিভিন্ন আচরণ থেকে প্রমাণিত। উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারত ও চীন দুই দেশই বিলম্ব না করে মিয়ানমারকে সাপোর্ট দেওয়া উল্লেখযোগ্য। যখন বেইজিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগরে ভারতের স্বত্বাধিকার অস্বীকার করেছে, তখন এবং উল্লিখিত কারণগুলো দুই দেশকে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

দুই পারমাণবিক সশস্ত্র প্রতিবেশীর মধ্যে ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটারের (২ হাজার ১০০ মাইল) বেশি অঞ্চলজুড়ে সীমান্ত রয়েছে এবং দুই দেশের সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে। সর্বশেষ লড়াইয়ে ভারত হারিয়েছে ২০ জনের মতো সৈন্য। সীমান্ত টহল বাহিনীগুলো প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অনেক আগে থেকেই, যার ফলে মাঝেমধ্যে ছোট ছোট যুদ্ধ লেগেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ছয় দশকে থেকে অন্যের ওপর কোনো গুলি চালায়নি বলে জানা যায়।

কিন্তু দীর্ঘ উত্তেজনার পর বর্তমানে যে সংঘর্ষ সংঘটিত হয়েছে, তা অনেককে অবাক করে দিয়েছে। ভারত যখন অর্থনৈতিকভাবে তরতর করে উঠে আসছিল, তখনই চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং পুরো বিশ্বে এর সংক্রমণ, যার কারণে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা, তথা ভারতের অর্থনৈতিক চরম দুর্দশা, ইত্যাদি কারণে ভারতের সাধারণ মানুষ তথা সৈন্যদের মনে চীন নিয়ে বিরূপ মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। ফলাফল যা–ই হোক না কেন, সর্বশেষতম ঘটনাটি সম্ভবত ভারতে চীনবিরোধী মনোভাবের এক নতুন তরঙ্গকে সঞ্চারিত করবে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের আপসহীন বৈদেশিক নীতি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে (সে এক মহা ইতিহাস) কিছুটা হলেও ডানপন্থীদের ভারতবাসীদের মধ্যে তার ইমেজকে সমুন্নত করে রেখেছিল, কিন্তু চীনের সঙ্গে এই ২০ জন সৈন্যের জীবন (আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে চীনের কোনো নিহত নেই), নরেন্দ্র মোদি সরকারের সীমান্ত সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ হিসেবে অনেকেই দেখছেন—এই চীন–ভারত বর্তমান অবস্থায়। যখনই ভারত কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করতে এবং অর্থনৈতিক মন্দা থেকে দেশকে তুলে নিয়ে আসতে হিমশিম খাচ্ছিল, তখনই এ যুদ্ধ নিতান্ত ভারতের কামনা ছিল না। ভারত যদিও পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিশালী চীনের মতোই, কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহে ভারত চীনের কাছে একবার পরাজিত হয়েছে যেমন সত্যি, তেমনি অর্থনৈতিক ও টেকনোলজির উন্নয়নে ভারত চীন থেকে অনেক পিছিয়ে। এমতাবস্থায় কোনো অবস্থাতেই ভারতের জন্য চীনের সঙ্গে একটি সম্মুখ যুদ্ধ শুভ নিয়ে আসতে পারে না। আর ভারত যদি কোনো কারণে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়, বাংলাদেশের পক্ষে সে ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা হবে কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এ রকম যুদ্ধবিগ্রহ বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।

বর্তমানে যদিও থমথমে অবস্থা, কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভারত চীনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাইবে না। যুদ্ধবাদী মোদি সরকার ক্ষমতায় থাকুক অথবা না থাকুক, ভারতের পলিসি হলো—চীনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত না হওয়া। আর তার অন্যতম কারণ হলো, ভারতের দীর্ঘদিনের অভিপ্রায় পাকিস্তান আক্রমণ করে দেশটাকে নিউক্লিয়ার অস্ত্রমুক্ত করে নেওয়া। রিয়ালিটি হলো, পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে চীন পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবে। চীন কখনো ভারতকে এই উপমহাদেশে একচ্ছত্র শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে দেবে না। সে কারণেই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে, চীন প্রক্সি দিতে কার্পণ্য করবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সীমান্তে অবস্থা যদিও থমথমে, সংগত কারণেই উভয় দেশ যুদ্ধ পরিহারের নীতিই অবলম্বন করবে। দুই দেশের অতীত আচরণ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, দুই দেশই যুদ্ধবিগ্রহ এড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তা ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি একটি সম্মুখ যুদ্ধ মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে না কোনো দেশের জন্যই।

* ব্যারিস্টার