দ্য গডসেন্ড

সাংস্কৃতিক সংগঠন কলাকারের প্রতিষ্ঠাতা সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত
সাংস্কৃতিক সংগঠন কলাকারের প্রতিষ্ঠাতা সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত

সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তী আর তাঁর সাংস্কৃতিক সংগঠন কলাকার গত এপ্রিল মাস থেকে পৃথিবীবিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে ফেসবুক অনলাইনে চমৎকার সব অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। এই অনুষ্ঠানগুলো গুরু পণ্ডিত এ কাননের জন্মশতবর্ষে চন্দ্রার শ্রদ্ধাঞ্জলি। উস্তাদ রাশিদ খান থেকে শুরু করে একানব্বইয়ের যুবক পণ্ডিত বিজয় কিছলু, কে আসেননি এই অনুষ্ঠানে।

১৮ জুন এ কানন সাহেবের জন্মদিন গেল। ওই দিন রীতিমতো চাঁদের হাট। উস্তাদ শাহিদ পারভেজ, উস্তাদ মাশকুর আলী খান, পুষ্পবীণার স্রষ্টা পণ্ডিত দেবাশীষ ভট্টাচার্য, বিদূষী শুভ্রা গুহা, পণ্ডিত কুমার বোস দর্শক–শ্রোতাকে চমকিত করেন। আর কোনো অনলাইন অনুষ্ঠানে এত মাস ধরে এমন সব বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের তো পাওয়া যায়নি। তাই কলাকারের দর্শকসংখ্যাও বাড়তে বাড়তে প্রায় দুই লাখ।

সংগীতানুষ্ঠান চলছে সমানেই। এখন সারা পৃথিবী থেকে নতুন প্রতিভাবানদের খুঁজে আনছেন চন্দ্রা আর কলাকারের অন্য কুশীলব ডক্টর সিদ্ধার্থ করগুপ্ত, ডক্টর ইমতিয়াজ আহমেদ, ইমরান খান, শতরূপা ঘোষ প্রমুখ। নতুন প্রতিভাবানদের সংগীত, তাঁদের জীবনের কথা পৌঁছে দিচ্ছেন লাখো মানুষের কাছে। নিজে একজন স্বনামধন্য শিল্পী বলেই হয়তো চন্দ্রা এভাবে অন্য শিল্পীদের কদর করতে পারছেন। অন্যের প্রশংসা করতে পারাও তো গুণী মানুষেরই লক্ষণ।

কলাকার উৎসুক ছাত্রছাত্রীদের গুণী শিল্পীদের কাছে শেখার সুযোগও করে দিচ্ছে নামমাত্র মূল্যে। ইতিমধ্যে তবলা, সেতার, ভোকাল আর কথক নাচের ওয়ার্কশপ হয়েছে। আগামী মাসে থাকছে বিশেষ সামার ওয়ার্কশপ। সেখানে তবলা শেখাবেন পণ্ডিত শুভঙ্কর ব্যানার্জি, কথক শেখাবেন সন্দীপ মল্লিক আর ভোকাল ওয়ার্কশপ করবেন বিদূষী শুভ্রা গুহা। অসাধারণ সুযোগ! ওয়ার্কশপ আয়োজন ও পরিচালনায় কলাকারের সঙ্গে আছেন সোয়াস সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ডক্টর সংযুক্তা ঘোষ।

১২ জুলাই দ্য গডসেন্ড-এর প্রথম অনুষ্ঠানে সঙ্গে থাকছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শেফ রৌনক পাল। ছবি: সংগৃহীত
১২ জুলাই দ্য গডসেন্ড-এর প্রথম অনুষ্ঠানে সঙ্গে থাকছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শেফ রৌনক পাল। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু শুধু গানবাজনার মধ্যেই আর নিজেকে ধরে রাখলেন না চন্দ্রা। কলাকার এই মাস থেকে শুরু করছে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কাজ, আর সেই কাজের কথা ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড সাড়া ফেলেছে মানুষের মনে। এই নতুন কাজের নাম দ্য গডসেন্ড। সাধারণ চোখে যাদের অসুস্থ মনে হয়, যাদের পোশাকি ভাষায় আমরা বলি ‘পারসন উইথ লার্নিং ডিফিকাল্টি’, তাদের নিয়ে এই কাজ।

সংগীতশিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তী বললেন, ‘আমাদের চারপাশেই এমন অনেক মানুষ আছেন, আমরা অনেকেই খবর রাখি না যে সেই মানুষগুলো মনের জোরে সব শারীরিক অসুবিধাকে এক কথায় পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে এসেছেন। আমরা যাঁদের ডাক্তারি ভাষায় ডাউন সিনড্রোম বলি, ওদের একজন যে নিজের পছন্দের জীবিকা বেছে নিয়ে আর ১০ জন সাধারণ সুস্থ মানুষের মতোই জীবন কাটায়; এই খবর কয়জন রাখেন? আর একজন যখন পেরেছেন, তখন অন্যরাও নিশ্চই পারবেন। তাই এই সব হার না মানা মানুষদের কথা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই আমি, অসুস্থ সন্তানের জন্য মা–বাবা যেন বিন্দুমাত্র মনোকষ্টে না ভোগেন; বরং সেই সন্তানের পাশে থেকে যেন তাকেও অন্য মানুষের মতো বেড়ে উঠতে সাহায্য করেন। আমার এই নতুন অনুষ্ঠানে থাকবেন এমন অনেক শিল্পী, যাঁরা আমাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নন। তাঁদের জীবনের কথা সবার জানা দরকার। এই শিল্পীরা আমার সেশনে এসে কেউ গান শোনাবেন, কেউ নৃত্যশৈলীর প্রদর্শন করবেন, কেউ ছবি আঁকবেন আমাদের জন্য, কেউবা লোভনীয় রান্না শিখিয়ে যাবেন।’

কলাকারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত
কলাকারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

দ্য গডসেন্ডের প্রথম অনুষ্ঠান আগামী রোববার ১২ জুলাই লন্ডনের সময় বেলা ১১টা, ভারতে বেলা ৩টা ৩০ মিনিট, বাংলাদেশে বিকেল ৪টা। এদিন সঙ্গে থাকছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শেফ রৌনক পাল। বছর ২২-এর রৌনক জন্ম থেকেই হয়তো অন্য শিশুদের মতো নয়, কিন্তু নিজের মনের জোর আর বাবা শুভ্র পাল এবং মা অনিন্দিতা পালের সহযোগিতায় রৌনক এখন জোহানেসবার্গের নামকরা শেফদের একজন! রৌনকের হাতে তৈরি রকমারি কেক আর পেস্ট্রির জন্য উৎসুক হয়ে থাকেন অগণিত মানুষ। অনুষ্ঠানে নিজের কথা বলা ছাড়াও রৌনক কিছু সুস্বাদু পেস্ট্রিও বানাতে শেখাবেন দর্শকদের।

এমন অভাবনীয় উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ করেছেন দেশ–বিদেশ থেকে কলাকারের শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষজন। কলাকারের নিয়মিত সংগীতানুষ্ঠান বা ওয়ার্কশপের জন্য https://www.facebook.com/artskalakar/ এ চোখ রাখুন।