সিঙ্গাপুরে অভিবাসীদের ক্যারিয়ার আপগ্রেড বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত

শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। চাকরিজীবীদের অনেকেই তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের কথা ভেবে ব্যস্ততা, নানা ঝামেলায় তা পেরে উঠেন না। পরিবেশকে মানিয়ে নিয়ে কীভাবে নিজের কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করা যায়, সেই লক্ষ্যেই একটি বিশেষ আয়োজন করেছিলেন ২৪এশিয়া.নিউজের প্রতিষ্ঠাতা মো. নাজমুল খান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আরএম‌আইটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. এনামুল হক রাকিব, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থী মো. মুজাহিদুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসলের শিক্ষার্থী মো. নজরুল ইসলাম।

আয়োজনের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল কীভাবে অভিবাসী শ্রমিকদের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করা যায়, কাজে ব্যস্ততার সময় থেকে কীভাবে পড়াশোনা করার সময় বের করতে হয় এবং কোথায় কোন বিষয়ে ভর্তি হলে কর্মক্ষেত্রে উন্নতি করা সহজ হয়।

মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর এমন একটি দেশ, যেখানে অন্য দেশের তুলনায় শ্রমিকদের কাজের ফাঁকে পড়াশোনা করার সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। তবে কোথাও ভর্তি হতে হলে নিজের বর্তমান অবস্থা ও কাজের সঙ্গে মিল রয়েছে, এমন বিষয় নির্বাচন করতে হবে।

কর্মজীবনে পড়াশোনা করার সময় আশপাশের কিছু লোক হয়তো তিরস্কার করবে, তাদের কথায় থেমে না থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তবেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। পড়াশোনার খরচ জোগানোর বিষয়ে বলেন, আপনার টার্গেটের সঙ্গে সঙ্গে আপনার বেতনের নির্দিষ্ট পরিমাণ আলাদা করে রাখুন। কারণ, এখানকার প্রায় প্রতিষ্ঠানে কিস্তিতে কোর্স ফি পরিশোধ করার সুবিধা রয়েছে।

সেফটি কোঅর্ডিনেটর মো. ওমর সাকিবের সিঙ্গাপুরের Polytechnic ও NUS-এ ভর্তিসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদানকালে মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুরে স্টুডেন্ট পাস বা শিক্ষার্থী পাস সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং শিক্ষার্থী পাসের জন্য কী কী নথি প্রয়োজন, তার বিস্তারিত আলোচনা করছিলেন। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে কর্মরত ওয়ার্ক পারমিটধারী বা SPass অথবা এমপ্লোয়েন্ট পাসধারীর জন্য কোনো প্রকার শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনের প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, এনইউএসে ভর্তির ক্ষেত্রে, বিভাগীয় পার্থক্যের কারণে ভর্তির প্রয়োজনীয় নথির পার্থক্য থাকতে পারে, আইইএলটিএস (IELTS) 6 point এবং যাবতীয় এডুকেশনাল সার্টিফিকেট অ্যাটাস্টেড সম্পন্নকরণের পরই এনইউএসে ভর্তি হওয়া যায়। সেই জন্য সময় লাগতে পারে প্রায় ১০ থেকে ১২ মাস। জীবনের দিকনির্দেশনায় নিজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা প্রয়োজন। কারণ, যদি কেউ নিজের অবস্থান থেকে নিচের কারও সঙ্গে তুলনা করে, তখন নিজের মধ্যে অহংকার বোধ চলে আসবে এবং তা এতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মো. মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের দেশের অনেকে অভিবাসী ভাই এসএসসি, এইচএসসি বা ডিগ্রি পাস করার আগেই পরিবারের প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর কাজে চলে আসেন, যাদের অনেকেরই পড়াশোনা শেষ করার সুযোগ থাকে না। আমাদের দেশের সরকার ও সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন যদি উদ্যোগ নেয়, তাহলে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে তারা অনলাইনে পড়াশোনা করে বাংলাদেশ কমিশনের তত্ত্বাবধানে এখানে তারা পরীক্ষা দিতে পারে। হাইকমিশন যদি এই বিষয়ে উদ্যোগ নেয়, তাহলে লোকালি আমরা সবাই এই ব্যাপারে সহযোগিতা করতে রাজি আছি।

বিষয় নির্বাচন সম্পর্কে মো. এনামুল হক রাকিব বলেন, বর্তমানে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিঙ্গাপুরও টেকনোলজির উচ্চপর্যায়ে। তাই আমার যেহেতু সবাই এ দেশে কর্মরত সে ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। তবে আমাদেরকে ধাপে ধাপে উন্নীত করার জন্য এ দেশে অনেক সরকারি ও বেসরকারি ইনস্টিটিউট রয়েছে। ভর্তি ও বিষয় নির্বাচন করা নিয়ে যদি নিজের মধ্যে সংকোচ বোধ থাকে, যিনি ভালো জানেন তাদের থেকে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

নাজমুল খান বলেন, বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধি করাও প্রয়োজন। কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, যেহেতু সিঙ্গাপুর মাল্টিন্যাশন কান্ট্রি, তাই বিশেষ করে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, মহামারির সময়ে বা পরবর্তীকালে কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হলে ছোট–বড় যেকোনো ধরনের কোর্স সহায়ক হবে। ২৪ এশিয়ার লক্ষ্য সম্বন্ধে তিনি বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের পাশাপাশি নিজের মতো করে দক্ষতাকে এগিয়ে নিতে মানুষ দিন দিন অনলাইন কোর্সের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। অনলাইন কোর্সগুলো বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী বেশ জনপ্রিয়, আর প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিগগিরই ২৪.এশিয়া কয়েকজন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে কিছু অনলাইন কোর্সের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে স্বাধীনভাবে সবাই শিখতে পারবেন।

পরিশেষে বলা যায়, ইচ্ছাশক্তিই হলো পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান শক্তি। বর্তমানে সবার কাছে ভালো স্মার্টফোন, ট্যাব, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে। কিন্তু আমরা সময়গুলোকে অবসরে বা অন্যভাবে ব্যয় করি। অথবা কাজের চাপেও হয়তো দক্ষতা বাড়াতে বাইরে গিয়ে ক্লাস করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমাদের ইচ্ছশক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাইলেই আমরা নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে সময় ও প্রযুক্তিগত যন্ত্রকে কাজে লাগাতে পারি। বর্তমানে বাংলাদেশেই বিশ্বমানের কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। ঘরে বসেই এসব কোর্স থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা সম্ভব। দেশে ক্যারিয়ারবিষয়ক অনেক কোর্স রয়েছে, তবে অবশ্যই নিজের প্রয়োজনবোধটা ভালোভাবে জেনে এবং বুঝে কোর্স নির্বাচন করতে হবে।

অনুষ্ঠান শেষে সঞ্চালক নাজমুল খান দর্শক ও অতিথিদের ধন্যবাদ দেন। তিনি দর্শকের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জানিয়ে দেন, ২৪ এশিয়া অভিবাসী ভাইদের পাশে থাকবে এবং ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার নিয়ে আরও অনেক গঠনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।