বিজ্ঞান গবেষণা ও বাংলাদেশ

আমাদের দেশে গবেষণায় বরাদ্দ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণার সুযোগ–সুবিধার অপ্রতুলতার কথা কমবেশি সবারই জানা। এর পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাকে প্রতিনিয়ত ভাবায়। বিশেষ করে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে আসার পর প্রশ্নটি আরও বেশি প্রকট হতে থাকে; তা হলো আমাদের দেশের পরিবেশ, গবেষণা এবং গবেষণায় নিযুক্ত গবেষকদের জন্য আসলে কতটা উপযোগী? বাস্তবতা খুবই হতাশাজনক।

আমরা জাতি হিসেবে যেকোনো ইস্যুতেই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যাই। সে হোক রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা সাংস্কৃতিক। তবে সম্প্রতি লক্ষ করা গেছে শিক্ষা বা গবেষণাও এই বিভাজনের বাইরে নয়। এর প্রমাণ মেলে পাট বা করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং, করোনা শনাক্তকরণের কিট উদ্ভাবন এবং এই মুহূর্তে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রাথমিক সাফল্যের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর। প্রতিটি খবরেই জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত হতে দেখা গেছে, যেটা খুবই হতাশাজনক।

সাত বছর ধরে প্রথমে দক্ষিণ কোরিয়া এবং বর্তমানে আমেরিকায় গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি বিমোহিত করেছে তা হলো এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা, গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে কমিউনিটির মানুষের জড়িত থাকার ঘটনা। আমাদের দেশে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে গবেষণা হচ্ছে গবেষকদের বিষয় যেটা গবেষণাগারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এখানে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কমিউনিটিভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যেমন আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি সেখানে প্রতিবছর ডে অব গিভিং (day of giving), বসন্ত উৎসব (Spring fest), ওপেন হাউস (Open house), ক্যানসার ডে (Cancer day) ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এসব অনুষ্ঠানের লক্ষ্যই হলো শিশু–কিশোরসহ কমিউনিটির বিভিন্ন বয়সী মানুষজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং আর্থিক অনুদানের জন্য উৎসাহিত করা।

এসব অনুষ্ঠান কমিউনিটির মানুষজন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা শক্ত বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। ফলে, আমেরিকায় গবেষণার জন্য অর্থের একটা বিশাল অংশ আসে লোকহিতৈষীদের (philanthropist) অনুদান থেকে।

উদাহরণস্বরূপ গিভিং ইউএসএ-এর (https: //givingusa. org/) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু গত বছরই আমেরিকান ব্যক্তি এবং করপোরেশনগুলো দাতব্য সংস্থাগুলোকে আনুমানিক ৪২৭.৭১ বিলিয়ন ইউএস ডলার পরিমাণ অর্থ অনুদান করেছে। এর একটা বিশাল অংশই ব্যয় হবে শিক্ষা এবং গবেষণায়। এর ফলে এসব দেশের মানুষেরা গবেষণায় নিযুক্তদের যেমন প্রতিনিয়ত তারিফ করে থাকে, বিপরীতে গবেষকদের মধ্যেও কমিউনিটির প্রতি একটা দায়বদ্ধতা কাজ করে। অপ্রিয় হলেও সত্যি যে এটা আমাদের দেশে এখনো বেমানান।

প্রতীকী ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটিভিত্তিক কার্যক্রম, যার উদ্দেশ্য হলো কমিউনিটির মানুষজনকে গবেষণা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া।
প্রতীকী ছবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটিভিত্তিক কার্যক্রম, যার উদ্দেশ্য হলো কমিউনিটির মানুষজনকে গবেষণা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া।


বিজ্ঞানের ভিত্তিই হচ্ছে প্রমাণ। আর এই প্রমাণ জোগাড় করতে দরকার সময়ের। এটা জোর করে হয় না। গবেষণায় প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। সেটা গবেষণা প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। এর জন্য উন্নত বিশ্ব কখনো গবেষণা থামিয়ে দেয় না বা গবেষকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করায় না। এর কারণ গবেষণায় অনেক সময় ফল আসতে দেরি হলেও এর ফল ভোগ করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সেটা ভ্যাকসিন বিকাশের ইতিহাস ঘাঁটলেই বোধগম্য হয়। উদাহরণস্বরূপ প্রথম পোলিওর প্রকোপ থেকে শুরু করে এর ভ্যাকসিন তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৬০ বছর। এত দীর্ঘ সময় লাগলেও এর ফলে পোলিওকে পুরোপুরি নির্মূলের করা সম্ভব হয়েছে। ফলে লাখ লাখ মানুষকে এর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। পোলিওসহ অন্যান্য ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে গবেষকদের দিনের পর দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম, ত্যাগ আর কাজের প্রতি একাগ্রতা।

একইভাবে বর্তমানে কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্যও বিশ্বজুড়ে চলছে গবেষণা। এ মুহূর্তে ভ্যাকসিনের জন্য একটা অভূতপূর্ব চাপ থাকলেও সত্যি বলতে ভ্যাকসিনের বিকাশ (vaccine development) একটি দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল বিকাশ (clinical development) বেশ কয়েকটি ধাপের সম্পন্ন হয়ে থাকে (ধাপগুলো চিত্রে দেখানো হয়েছে)।

ভ্যাকসিন বিকাশের বিভিন্ন ধাপ।
ভ্যাকসিন বিকাশের বিভিন্ন ধাপ।

সম্ভাব্য ভ্যাকসিন (অ্যান্টিজেন) তৈরি করার পর প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো (phase I clinical trial) সাধারণত সুরক্ষার দিকে মনোনিবেশ করে এবং এই ধাপে ২০-১০০ জন স্বাস্থ্যকর স্বেচ্ছাসেবককে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রথম ধাপে বিজ্ঞানীরা সাধারণত ভ্যাকসিনের বিভিন্ন ডোজের (dose) সঙ্গে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, সেটা জানার চেষ্টা করে থাকেন। এই পর্যায়ে যদি সম্ভব হয়, তবে বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনটি কতটা কার্যকর হতে পারে, তা–ও জানার চেষ্টা করেন। যদি প্রথম পর্যায়ের কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না পাওয়া যায়, তবে দ্বিতীয় ধাপে কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে এটি পরীক্ষা করা হয়। তৃতীয় ধাপে সাধারণত কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে এবং সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

উচ্চ ব্যয় এবং ব্যর্থতার হার বেশি হওয়ার কারণে, গবেষকেরা সাধারণত তথ্য বিশ্লেষণ বা প্রতিটি ধাপের ফলাফল নিপুণভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একাধিক বিরতিসহ ধাপগুলোর একরৈখিক ক্রম অনুসরণ করে থাকেন। তবে মহামারি চলাকালীন দ্রুত ভ্যাকসিন বিকাশের জন্য এই ধাপগুলো সমান্তরালভাবে একই সঙ্গে করা যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে আর্থিক ঝুঁকির হার অনেক বেশি হয়।

ভ্যাকসিন বিকাশের সময়কাল। বিকাশের এই প্রক্রিয়া সাধারণত এক দশক বা তার চেয়ে দীর্ঘ হয়ে থাকে।
ভ্যাকসিন বিকাশের সময়কাল। বিকাশের এই প্রক্রিয়া সাধারণত এক দশক বা তার চেয়ে দীর্ঘ হয়ে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত ওষুধ পরীক্ষার (Drug trial) ১০ শতাংশের কম চূড়ান্তভাবে খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক (Food and Drug Administration) অনুমোদিত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এর মধ্যে সব কটিই কি সাফল্যের মুখ দেখবে? হয়তো না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, গবেষণাকর্ম কি এখানেই থেমে থাকবে? মোটেও না। কারণ, এটাই বিজ্ঞান এবং এই ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই গবেষকেরা প্রতিনিয়ত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ মেলে কোভিড-১৯–এর ওপরে চলমান ওষুধ এবং ভ্যাকসিন বিকাশের গবেষণার দিকে তাকালে। আজ অবধি বিশ্বে কোভিড-১৯–এর ওপরে ইতিমধ্যে থেরাপি, ভ্যাকসিনসহ প্রায় ২৪৪৭টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলমান অবস্থায় রয়েছে (উৎস: clinicaltrials.gov)। এর মধ্যে মোট ১৪৫টি ভ্যাকসিন বিকাশিত (under development) অবস্থায় আছে, যার মধ্যে ২১টি মানুষের মধ্যে ট্রায়াল করা হচ্ছে।

তবে দুঃখজনক হলেও এত দিন ধরে আমাদের দেশে জিনোম রহস্য এবং শনাক্তকরণ কিট নিয়ে কাজ হলেও ভ্যাকসিন বিকাশের গবেষণার কোনো প্রমাণ মেলেনি। এর উত্তর মেলে গবেষণায় আমাদের ব্যয়ের দিকে তাকালে। শুধু গত বছরই স্বাস্থ্য খাতে গবেষণায়, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (NIH) এর বাজেট ছিল ৪১.৬৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার, সেখানে আমাদের দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সাকল্যে শিক্ষা খাতে মাত্র ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর খুবই সামান্য অংশ হয়তো ব্যয় হবে গবেষণায়। এই স্বল্প পরিমাণ বরাদ্দে রাতারাতি আমাদের দেশে ভ্যাকসিন তৈরি করার কথা বোকামি।

আশার ব্যাপার হলো, এত অপ্রতুলতার মধ্যেও আমাদের দেশে আর্থিক ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন উৎপাদনের মতো সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে সাফল্য পাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে, যা অবশ্যই সুখকর। ভ্যাকসিন বিকাশের সব ধাপ অতিক্রম করে এটি সর্বশেষ অনুমোদন পাবে কি না, সেটা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তবে বেশ কয়েকটি কারণে এই প্রচেষ্টা দেশের গবেষণায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

১.

ভ্যাকসিন উৎপাদনের এই প্রাথমিক সাফল্য দেখিয়ে দিল শত স্বল্পতার মধ্যেও আমাদের দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের মতো সাহস দেখানো সম্ভব।

২.

এসব আবিষ্কারই আগামীর প্রজন্মকে গবেষণায় উৎসাহিত করবে।

৩.

এসব সাফল্য বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের দেশে ফিরে আসতেও উৎসাহিত করবে।

৪.

দেশে গবেষণার আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।

৫.

সর্বোপরি কোভিড-১৯–এর এই বৈশ্বিক মহামারি আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে মহামারির মতো বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদের নিজেদের স্বাবলম্বী হতে হবে। বহির্বিশ্বে ভ্যাকসিন উৎপাদিত হলেও সেটা আমাদের দেশে সহজলভ্য মূল্যে সবার হাতের নাগালে আসবে কি না, সেটা বলা যাচ্ছে না। কাজেই সময় আসছে আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর।

এসব সম্ভাবনার কথা ভেবে আমাদের উচিত দেশীয় এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো।

সমালোচনা গবেষণার একটি অপরিহার্য অংশ, কিন্তু সেটা গঠনমূলক হতে হয়। গবেষণায় প্রতিহিংসা কিংবা অসুস্থ প্রতিযোগিতার কোনো স্থান নেই। কাজেই সময় এসেছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও ভালো কাজে প্রশংসা করার একটা সংস্কৃতি তৈরি করা। তা ছাড়া দেশীয় প্রযুক্তি এবং আবিষ্কারকে আমরা সাদরে গ্রহণ না করলে সেটা আমাদের দেশের জন্যই ক্ষতি। গবেষণায় এই মুহূর্তে আমাদের অবদানগুলো ছোট হতে পারে কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, আমরা গবেষণায় বরাদ্দ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি প্রতিবেশী অনেক দেশের থেকে পিছিয়ে। কাজেই এই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে তুলনা করা হবে বোকামি।

পরিশেষে হেনরি ফোর্ডের একটি বাণী দিয়ে শেষ করব, ব্যর্থতা হলো পুনরায় শুরু করার আরও একটি সুযোগ, আরও বুদ্ধিমানভাবে। তাই অধৈর্য না হয়ে আমরা যদি দেশে গবেষণার জন্য একটা সুন্দর কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারি, তাহলেই আগামীর দিনগুলোতে আমাদের দেশেও আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গবেষণায় যুক্ত হবে। তাহলেই এ প্রজন্মের গবেষকেরা আগামী দিনগুলোতে আমাদের হয়তো উপহার দিতে পারবে নিত্যনতুন আবিষ্কার। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি তহবিল সংস্থা (funding agency) এবং কমিউনিটির মানুষ বিশেষ করে উচ্চবিত্তদের সহায়তা। এ ছাড়া কমিউনিটির মানুষদের গবেষণার সঙ্গে পরিচয় এবং এর সুফল সম্পর্কে অবগত করিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও কমিউনিটিবান্ধব একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

* লেখক: পিএইচডি গবেষক, বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স, পার্ডু ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র

তথ্যসূত্র:

https: //ourworldindata. org/vaccination

https: //www. nejm. org/doi/full/10. 1056/NEJMp2005630

https: //www. statista. com/statistics/1106306/coronavirus-clinical-trials-worldwide/

https: //givingusa. org/giving-usa-2019-americans-gave-427-71-billion-to-charity-in-2018-amid-complex-year-for-charitable-giving/

https: //www. frontiersin. org/files/Articles/566882/fphar-11-00937-HTML/image_m/fphar-11-00937-g002. jpg

https: //www. nytimes. com/interactive/2020/science/coronavirus-vaccine-tracker. html