রহস্য উপন্যাসকেও হার মানিয়েছে ১৩ খুন ও ৫০টির বেশি ধর্ষণ মামলার আসামি জোসেফ জেমসের ঘটনা

জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো। ছবি: সংগৃহীত
জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো। ছবি: সংগৃহীত

‘গোল্ডেন স্টেট কিলার’খ্যাত সাবেক পুলিশ অফিসার জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো (৭৪) গত ২৯ জুন ক্যালিফোর্নিয়ার সেক্রোমেন্টো সুপিরিয়র কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর দায় স্বীকার করেছেন। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, তিনি মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেতে কয়েক ডজন অপরাধের জন্য দোষ স্বীকার করেছেন। ৫০টির বেশি ধর্ষণের কথা তিনি স্বীকার করলেও ক্যালিফোর্নিয়ার বিধির সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়নি।

সংবাদ সংস্থা সিএনএন এবং ক্লিক অন ডেট্রয়েট ডটকম ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, কমপক্ষে ১৩টি খুন, ১৩টি অপহরণ ও ৫০টির বেশি ধর্ষণ মামলার আসামি জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো।

সেক্রোমেন্টো কাউন্টির উপজেলা অ্যাটর্নি (Deputy District Attorney) অ্যামি হোলিদা জানিয়েছেন, জোসেফ ডি অ্যাঞ্জিলো মৃত্যুদণ্ড এড়াতে সব অভিযোগের জন্য দোষ স্বীকার করেছেন, আগস্টে তাঁর মামলার রায় ঘোষণা হবে।

অরেঞ্জ কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি টড স্পাইজার বলেন, প্রিয়জনকে যাঁরা হারিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা যাবে না। তবে ৪০ বছরের অনিশ্চয়তার পর ভুক্তভোগীরা এবং দেশ দেখল, সন্ত্রাসবাদের রাজত্বের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে অবশেষে স্বীকার করতে হলো যে তিনি একমাত্র তিনিই এসব অপরাধের জন্য দায়ী। সেক্রোমেন্টো আদালতে আগামী ১৭ আগস্ট ডি অ্যাঞ্জিলোর মামলার রায়ের সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে।

গোল্ডেন স্টেট কিলারের তিনটি প্রাথমিক স্কেচের একটি। ছবি: সংগৃহীত
গোল্ডেন স্টেট কিলারের তিনটি প্রাথমিক স্কেচের একটি। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন জোসেফ। একের পর এক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ হয়েছিল দিশাহারা। হন্যে হয়ে খুঁজছিল এ অপরাধীকে। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল ৫০ হাজার ডলার পুরস্কারের। তিনি সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিলেন। ইস্ট এরিয়া রেপিস্ট, অরজিনাল নাইট স্টেকার, ভিসালিয়া রেনসেকার, ইস্ট বে রেপিস্ট, ডায়মন্ড নট কিলার। কিন্তু পরবর্তীকালে পুলিশ জানতে পারে যে তিনি একই ব্যক্তি, অর্থাৎ জোসেফ জেমস। ক্যালিফোর্নিয়ার গোলেটা, ভেনচুরা, ডানা পয়েন্ট, আরভাইন, রেঞ্চো করডভা, ভিসালিয়া এলাকায় তিনি খুনগুলো করেছিলেন এবং ধর্ষণগুলো করেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন কাউন্টিতে। সেগুলো হচ্ছে সেক্রোমেন্টো, কন্ট্রা কোস্টা, স্টেনিসলস, সান জোয়াকুইন, আলামেডা, শান্তা ক্লারা, জলো। এ ছাড়া চুরি, ভাঙচুর, মানুষকে লাঞ্ছিত করার কয়েক শ অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি ফোনে এবং বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশ ও ভিকটিমকে হুমকি দিতেন।

কয়েক দশক ধরে তদন্ত চলাকালে ডিএনএ প্রমাণ, অ্যালিবি ও অন্যান্য অনুসন্ধানী পদ্ধতির মাধ্যমে এই সিরিয়াল কিলার ও সিরিয়াল রেপিস্ট জোসেফ জেমসকে শনাক্ত করা হয়।

অপরাধবিষয়ক লেখক মিশেল ম্যাকনামারা তাঁকে ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে ‘গোল্ডেন স্টেট কিলার’ নামটি দিয়েছিলেন। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এফবিআই এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০১‌৬ সালের ১৫ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তাঁকে সেক্রোমেন্টো কাউন্টি শেরিফের ডেপুটিরা গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হন এবং ওই দিনই কর্তৃপক্ষগুলো ডিএনএর প্রমাণের ভিত্তিতে ৭২ বছর বয়সী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভির প্রবীণ এবং সাবেক পুলিশ অফিসার জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জেলোকে ৮টি ফাস্ট ডিগ্রি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। জোসেফ ১৯৭৬ সালের ১৮ জুন থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত ৫০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটান। বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনাই গভীর রাত বা ভোরে সংঘটিত হয়।

সেক্রোমেন্টো সুপিরিয়র কোর্টে জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো। ছবি: সংগৃহীত
সেক্রোমেন্টো সুপিরিয়র কোর্টে জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো। ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জোসেফ জেমস ডি অ্যাঞ্জিলো বেছে নিতেন মধ্যবিত্ত এলাকা এবং একতলা বাড়ি, যেখানে নারীরা একা থাকেন, স্কুল বা খোলা জায়গা যেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যাওয়া যায়। ধর্ষণের তাঁর স্বাভাবিক পদ্ধতি ছিল, কাচের জানালা দিয়ে ঘুমন্ত লোকদের একটা টর্চলাইটের আলো দিয়ে জাগানো, একটি হ্যান্ডগান দিয়ে হুমকি দেওয়া, পুরুষদের বেঁধে রাখা এবং নারীদের ধর্ষণ করা। কখনো পুরুষদের এক ঘরে বেঁধে রেখে অন্য ঘরে নারীকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে ধর্ষণ করতেন তিনি। কখনো সারা ঘর ঘুরে বেড়াতেন, রান্নাঘরে খাবার খাওয়া, বিয়ার পান করা ও বারবার এসে ধর্ষণ করতেন।