আলো আসবেই

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হাসপাতালে কাজ শুরু করে (প্রায় ১১ বছর) দেখলাম সহকর্মীদের অনেকের বাচ্চা একটু অন্য রকম দেখতে। বন্ধুত্ব বাড়তে জানলাম ওঁরা অন্য দেশ থেকে বাচ্চা দত্তক নিয়েছেন, নিজের মতো করে মানুষ করছেন। বিভিন্ন ফ্যামিলিসহ দাওয়াতে দেখলাম কী সুন্দর করেই না বাচ্চাগুলো মানুষ হচ্ছে। নিজের একটা বা দুটা বাচ্চা সঙ্গে দত্তক নেওয়া বাচ্চা। এখন কলেজে যাচ্ছে অনেকে, পুরো খরচ পালক বাবা–মা দিচ্ছেন।

কিছুদিন আগে নতুন জয়েন করা একটা ছেলে মার্টিন এসে একটা ফর্ম হাতে দিয়ে বলল, ‘ফারহানা, একটা বাবু দত্তক নিতে চাচ্ছিলাম, একটু ফর্মটাতে সাইন করবে?’ মার্টিনকে চিনি কাজে আর ফেসবুকে তার পরিবারের ছবি দেখেছি, কত ভালো বাবা সে আর ওর বউ কত ভালো একজন মা। তাদের চার বছরের মেয়েটাকে কি কঠিন ভালোবাসায় মানুষ করছে। সাইন করে দিলাম, গতকাল ফেসবুকে দেখলাম বাচ্চাটা তারা পেয়েছে। ইনবক্সে ছোট্ট একটা নোট পেলাম, যার ভাবার্থ, ‘তোমার জন্য আমাদের ঘরে আজকে এত আনন্দ আয়োজন।’ কোনো নাম অজানা ভাগ্যহীন শিশু একটা পরিবার পেয়েছে।

এ দেশে বাচ্চাদের ছোট থেকেই ভালো কোনো সৎ কাজের জন্য ফান্ড রেইজিং করতে শেখায়। শেখায় দুনিয়ায় শুধু ‘আমি’ ভালো থাকতে পারব না, যদি আর সবাই ভালো না থাকে। ছোট থেকেই একে অপরকে সাহায্যর হাত বাড়াতে শিখিয়ে দেওয়া।

এ কথাগুলোর বলার কিছু উদ্দেশ্য আছে। কিছুকাল আগে মেডিকেলের বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন সুবিধাবঞ্চিত নারী আর বাচ্চাদের কোভিড-১৯ কালের সংকটে তাঁদের এনজিওর প্রোগ্রামে গেস্ট স্পিকার হতে চাই কি না। অবশ্যই চাই, হাজার বার চাই। মানবতার সেবার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ জেনে বারবার মনে হচ্ছিল এ সংকট পৃথিবী কাটিয়ে উঠবে। মহামারি শেষে এক নতুন পৃথিবী জন্ম নেবেই। সৎ মানবিক কাজগুলোর জন্যই।

পরিচিত হলাম HEED (Health, Education and Economic Development) Bangladesh–এর সঙ্গে। সংস্থাটি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে একটা বেসরকারি, নন–প্রফিট সংস্থা দেশের সেবায় সরকারের পাশাপাশি সাহায্য করে চলেছেন দেশকে। তাঁরা কাজ করছেন অনেক সেক্টরে কিন্তু সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে আমাকে দুস্থ নারী আর বাচ্চাদের সাহায্যের প্রজেক্ট। কোনো মহিলা যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ করেন, পুরো নয় মাস সংস্থা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ পুরো দায়িত্ব নেন, সামাজিক কারণে বা মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে (ভিকটিম) যদি বাচ্চা না নিয়ে যেতে পারেন মা, তাঁরা বাচ্চাটাকে রেখে চেষ্টা করেন কোনো নিঃসন্তান পরিবারে দত্তক দিতে। দুস্থ নারীকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেন। তাঁরা আমাদেরই প্রতিবেশী। যখন আত্মীয়পরিজন মুখ ঘুরিয়ে নেন, তখন পাশে দাঁড়ায় সংস্থাটি। মহৎ এ কাজে তাঁদের অনুদান প্রয়োজন, সবারই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া দরকার।

তাঁদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে বারবার
‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধনিবে না
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হবো শান্ত’