কানাডার ম্যানিটোবার স্ট্রবেরি পিক উৎসবে একদিন

স্ট্রবেরি তোলার উৎসব। ছবি: লেখক
স্ট্রবেরি তোলার উৎসব। ছবি: লেখক

কানাডার ম্যানিটোবা প্রভিন্সের বিভিন্ন জায়গায় সামারের বিভিন্ন বিনোদনের মাঝে স্ট্রবেরি পিকআপ একটি অন্যতম পারিবারিক বিনোদন। এই প্রভিন্সের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে শত শত বিশাল আয়তনের স্ট্রবেরির ফার্ম। এই ফার্মগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি উৎপাদন করে থাকে। তারা বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে ফার্ম থেকে বিক্রি করে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক মানুষ পরিবার–পরিজন নিয়ে ফার্মে যায় এবং গাছ থেকে তুলে খায় আর বাসার জন্য নিয়ে আসে।

কানাডিয়ানদের কাছে স্ট্রবেরি একটি প্রিয় ফল। এ ফলটি কানাডাজুড়ে সারা বছর উৎপাদন করা যায় না শীতের কারণে। অল্প কিছু জায়গায় ‘গ্রিনহাউস’–এ স্ট্রবেরি উৎপাদিত হলেও তা পরিমাণে খুবই কম। বিশেষ করে কানাডার ম্যানিটোবা প্রভিন্সে। কারণ, এখানে বছরের ছয় থেকে সাত মাস বরফে ঢাকা থাকে।


ম্যানিটোবায় জুন মাসের শুরু থেকে কাজ শুরু হয়। জুলাই মাসের প্রথম থেকে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এক মাসের ও কম সময় ধরে চলে এই উৎসব।

ম্যানিটোবা প্রভিন্সের রাজধানী উইনিপেগের খুব কাছে রয়েছে কর্মিরস স্ট্রবেরি ফার্ম। এটি বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ হয় এখানে।

স্ট্রবেরি ফার্মে দুই বাংলাদেশি পরিবার। ছবি: লেখক
স্ট্রবেরি ফার্মে দুই বাংলাদেশি পরিবার। ছবি: লেখক

শহরের খুব কাছে হওয়ার কারণে শত শত মানুষ এই ফার্মগুলোতে ভিড় করেন। এখানে স্ট্রবেরি পিকিংয়ের নিয়ম হচ্ছে প্রতি পরিবারকে কমপক্ষে একটি চার (৪) লিটারের বাক্স কিনতে হবে। যার দাম এবার রাখা হয়েছে ১৪ কানাডিয়ান ডলার। দর্শনার্থীরা বেছে বেছে স্ট্রবেরি তুলে ওই বাক্সভর্তি করে বাসায় নিয়ে যেতে পারবে আর মাঠে বসে যত খুশি তত খেতে পারবেন।


বাংলাদেশে যারা গাছ থেকে আম, লিচু, পেয়ারা পেড়ে খেতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য স্ট্রবেরি পিক একটি বিশাল আনন্দের ব্যাপার। আশপাশের অনেক বাংলাদেশি এখানে আসেন। আজ এই ফার্মে কথা হলো কানাডায় নতুন আসা মোরশেদুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁরা এ বছর প্রথম এসেছেন এখানে। তাঁরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানে এসেছেন। মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জন্ম তাঁর বরিশালে। এখানে এসে ঝালকাঠীর ‘আট ঘড় কুড়িয়ানা’ পেয়ারা বাগানের কথা মনে পড়ছে। ছোটবেলার সেই মজা তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদের দিতে পেরে আনন্দিত বলে জানান।

স্ট্রবেরি তুলতে অনেকেই আসেন এই ফার্মে। ছবি: লেখক
স্ট্রবেরি তুলতে অনেকেই আসেন এই ফার্মে। ছবি: লেখক

কোভিড-১৯–এর কারণে এ বছর অতিরিক্ত সাবধানতা গ্রহণ করা হয়েছে। সবাইকে ফার্মে ঢোকার আগে হাত ধুতে হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পিকিং করতে হয়। এখানে আছে পর্যাপ্ত পার্কিং ও টয়লেটের ব্যবস্থা।

এই ফার্মগুলোতে কাজ করেন মূলত আশপাশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। সামারের বন্ধের সময় তাঁরা সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পান। তাঁরা সামারের দুই মাস কাজ করে তাঁদের টিউশন ফির অনেকটা জোগাড় করে ফেলেন।

ফার্মে স্ট্রবেরি গাছ। ছবি: লেখক
ফার্মে স্ট্রবেরি গাছ। ছবি: লেখক

স্ট্রবেরি ফ্র্যাগারিয়া (Fragaria) জাতীয় উদ্ভিদ এবং সারা বিশ্বে এটি ফল হিসেবে চাষ করা হয়। গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় এই ফল, ফলের রস, জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্ক শেক এবং আরও অনেক খাদ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যবহৃত হয়।

স্ট্রবেরি ফার্মে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় এরা কাজ করে টিউশন ফি জোগাড় করে। ছবি: লেখক
স্ট্রবেরি ফার্মে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় এরা কাজ করে টিউশন ফি জোগাড় করে। ছবি: লেখক

১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির চাষ করা হয়। এটি পরবর্তী সময়ে চিলি, আর্জেন্টিনা এবং কালক্রমে অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্যান্য ভিটামিনসহ লেবু এবং কমলার চেয়েও বেশি পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। বিশ্বে প্রায় ১০০ জাতের স্ট্রবেরি রয়েছে।