পুরোনো সেই স্কুলজীবনের দিনগুলো

স্কুলজীবনের সুখস্মৃতি করোনা আবহে কড়া নাড়ছে। শিশুকালের স্কুলজীবন স্বপ্নের আবহে ঢাকা। হুগলি নদীর তীরে ব্যান্ডেল চার্চ পেরিয়ে প্রতিদিন স্কুলের গণ্ডিতে সকাল আটটার মধ্যে উপস্থিত হওয়ার নিয়মানুবর্তিতা মানতে হতো। স্কুল ড্রেসে কোনো ফাঁক থাকা চলবে না। এমনকি জুতা থেকে জামার পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতায় চুলচেরা বিশ্লেষণ হতো।

সিস্টার ও মিস এই আবর্তে দিনের প্রথম প্রহর সূচনা হতো প্রেয়ার দিয়ে। লাইনে থেকে প্রত্যেক ক্লাস প্রেয়ারে অংশগ্রহণ করতে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ ছিল। সবুজ বনবীথি ঘেরাটোপে স্কুলের গণ্ডিবদ্ধ জীবনের বিকেল চারটায় স্কুল শেষের ঘণ্টা বাজত। মিস বা ক্লাস টিচার ক্লাস ও ক্লাসের বাইরে সব বিষয় দেখভাল করতেন। ক্লাসের প্রতিদিনের পড়াশোনা, ক্লাস টেস্ট প্রত্যেক ছাত্রের কাছ থেকে আদায় করতেন দায়িত্ব সহকারে।
কোনো রকম দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যেত না মিস বা টিচারদের। মিসরা প্রত্যেকে গোয়ানিজ ছিলেন, আদবকায়দা অবাক করে দেওয়ার, আপনজনের মতো ক্লাসে তাদের ব্যবহার। সৌম্য পরিবেশে ক্লাসের রুটিন মেনে স্কুল চলত। অভিভাবকদের সঙ্গে মাসে একবার টিচার্স মিটিংয়ের ব্যবস্থা থাকত। প্রত্যেক ছাত্রের খামতি অভিভাবকদের জানানো হতো, বাড়িতে যত্নবান হওয়ার উপদেশ দেওয়া হতো।
স্কুলের মধ্যে কোনো সময় মনে হয়নি বন্দী জীবন যাপন করছি। পড়াশোনা, অঙ্কন, শরীরচর্চা ও খেলাধুলা—সবকিছুতে বিকশিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা ছিল মিস ও সিস্টারদের। এখনো মনে পড়ে, পেরেন্টস ও টিচার্স ডের অনুষ্ঠান। শেষের পেরেন্টস ডেতে আমরা পিরামিড শো করলাম, লাল গেঞ্জি, সাদা প্যান্ট, কবজিতে লাল ব্যান্ড মাথায় লাল ব্যান্ড। বহুপ্রতীক্ষিত ও প্রশংসিত দিনটি চিরকাল মনের মণিকোঠায় জীবিত থাকবে। কনভেন্ট স্কুলের ওই দিনগুলো, বন্ধুদের মিস করি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ আছে, কিন্তু সেদিনের সোনাঝরা দিনগুলো ফিরে ফিরে আসে না।
স্কুলের মাঠে অঙ্কনের মাস্টার মশাইয়ের দেয়ালে আঁকা জিমন্যাস্টিকসের চিত্র এখনো টানে। বারবার সেই দিনগুলো ফিরে পেতে ও যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে মিসদের ভাঙা ভাঙা আদুরে বাংলা শব্দ শুনতে। গ্রুপ ফটো এখন সেই স্মৃতি বহন করছে।
টুকরো সেই স্মৃতি এখন কোনো কিছুর বিনিময়ে ফিরে পাওয়া যাবে না, সাধ্য সাধনায় ফিরে আসবে না। হারিয়ে যাওয়া সেই সেদিন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের বা কোনো কাঠির ছোঁয়ায় পাওয়া যাবে না।