মা যুদ্ধের পর মামাবাড়ি গিয়েছিলেন সাহায্যের আশায়

লেখকের মা
লেখকের মা

যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরেছিলাম সবাই। আশপাশের বাড়ি থেকে খাবার এলেও আমরা সবচেয়ে বেশি অভাব বোধ করছিলাম কাপড়চোপড় এবং বিছানাপত্রের। এ জন্য বাবা একদিন মাকে অনুরোধ করে বলেছিলেন, মামাবাড়ি গিয়ে সম্ভব হলে কিছু কাপড় এবং বিছানাপত্র নিয়ে আসার জন্য। মা একদিন আমাকে এবং ছোট বোন শেলীকে নিয়ে মামার বাড়ি গিয়েছিলেন। যাওয়ার পর সম্ভবত মামির কোনো আচরণে মা কষ্ট পেয়ে খুব কেঁদেছিলেন। সেদিন মার চোখের পানি এবং মামির সঙ্গে কিছু উচ্চ স্বরে কথা বলার দৃশ্যটি মনে পড়লেও সত্যিকারে কী হয়েছিল, বা কী বলেছিলেন, তা মনে পড়ছে না। কাছেই ছিল মায়ের বোনের শ্বশুরবাড়ি। সে দিন মা দুপুরবেলা মামার বাড়িতে না খেয়ে আমাদের নিয়ে চলে গিয়েছিলেন মায়ের বোনের বাড়ি, সে কথা অবশ্য স্পষ্ট মনে পড়ছে।

আমাদের সব সমাজে সাধারণত যা হয়, অভাব-অনটন আর স্বভাব দুইয়ের তফাৎ করার ক্ষমতা সবার থাকে না। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে মা যে মামার বাড়ি গিয়ে হাত পাতার মতো অভাব বা স্বভাব কোনোটাই ছিল না আমাদের, সে কথা জানি। বাবা কোনো দিন মায়ের কোনো কিছুতে অভাব বোধ করতে দেননি যে তার বাপের বাড়ি গিয়ে হাত পাতবে। তবে যুদ্ধের পর সাময়িক অভাব হয়েছিল, যে কারণে বাবা মাকে অনুরোধ করে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্দিনে মামির স্বভাবের কারণে চোখের জল ফেলে মা তাঁর বোনের (মাসির) বাড়ি গিয়ে মামিকে ছোট করার মতো কোনো কথাই বলেননি। মামা-মামি সম্পর্কে মা কোনো অভিযোগও করেননি। আমাদের সবার চেহারা দেখে এবং ক্ষুধার পেট মনে করে প্রথমেই মাসিমা খেতে দিলেন। এরপর যুদ্ধের সময়কার কথা আলোচনা করে তাঁদের সহযোগিতা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে মাসি আমাদের পরার জন্য বেশ কিছু কাপড় এবং কাঁথা-বালিশ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। আমার এখন হালকা মনে পড়ছে, মাসির বাড়ি থেকে সেদিন আমি আর ছোট বোন আনন্দের সঙ্গে রাতে ঘুমানোর জন্য আগেই পছন্দ করে নিজেদের কাঁথা আর বালিশ মাথায় নিয়ে এত দূরের পথ হেঁটে এসেছিলাম।

এখন যতটা মনে পড়ে, আমরা ছোট সময় মামাবাড়িতে গিয়ে বেড়ানোর চেয়ে মাসির বাড়িতেই বেড়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি বেশি। যে কারণে মাসির বাড়ি যাওয়ার পর আমাদের দেখে মাসি এবং তাঁর ছোট ছেলেমেয়েরাও (আমাদের সমবয়সী) বেশ খুশি হয়েছিল।

সেদিনের পর মায়ের হাত ধরে আরও বেশ কয়েকবার মামার বাড়ি যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সেই সাহায্য চেয়ে না পাওয়ার পর মা যে মামার বাড়িতে না খেয়ে মাসির বাড়ি চলে গিয়েছিলেন, সে কথা কিন্তু কখনো আমরা ভুলিনি। এ কারণে পরবর্তী অভিজ্ঞতাগুলোও তেমনটা আনন্দদায়ক হয়ে ওঠেনি। এরপর এলাকার অনেকেই আমাদের কাপড় এবং কাঁথা-বালিশ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। চলবে...।

আরও পড়ুন