ন্যাশভিলে প্রকৃতি ও পরিবেশ: বাস্তব খণ্ডগল্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে টেনেসি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ন্যাশভিলের এক প্রান্তের ‘বেলভিউ’ উপশহরে আমরা থাকি। একে ‘বেলভিউ টাউনশিপ’ও বলে। যে নামেই ডাকুন না কেন, ‘ডাউনটাউন ন্যাশভিল’ থেকে বেলভিউ মাত্র ২০ থেকে ২৫ মাইল পশ্চিমে। অসংখ্য গাছগাছালি আর পাখপাখালির কলতানের মাঝে নদীঘেঁষা, ঘন সবুজ-ঘেরা নিরিবিলি ছোট্ট পল্লিতে আমাদের শান্তির নিবাস। আমাদের বাড়ির ঠিক পেছনেই এক সচ্ছল কৃষকের বিশাল খামার। খামারে ফল-ফসল কিছুই নেই, আছে কিছু গাছপালা, পশুপাখি আর একটি পুরোনো বাড়ি। সে বাড়িতে কৃষক থাকেন সপরিবার। চারদিকে বেড়া ঘেরা খামারবাড়ির খোলা মাঠে শীত-গ্রীষ্ম বারো মাস গরু আর ঘোড়া চরে বেড়ায়।

বিকেলবেলা ঘরের পেছনে কাঠের ‘ডেক’-এ বসে প্রতিবেশীর শান্তশিষ্ট পশুগুলোকে খেয়েদেয়ে আরাম করতে দেখে রীতিমতো হিংসে হয়। তবে আফসোস হয় না। হিংসে হয় এ জন্য যে এমন আরাম কবে থেকেই আমার জন্য হারাম হয়ে আছে, তার দিন–তারিখও মনে নেই। আবার পস্তাই না এ কারণে যে আরাম মানেই তো অলস সময় কাটানো, আর বে-আরাম মানে কাজে ব্যস্ত থাকা। সক্রেটিস বলে গেছেন, ‘এ জীবনে যত পারো কাজ করিয়া লও, কবরে গেলে নিরন্তর ঘুমাইবার সময় পাইবে’। কথাটা বলার সময় এই মনীষীর নিশ্চয়ই ‘মুনকার’ আর ‘নাকির’ ফেরেশতাদের কথা মনে ছিল না।

যা–ই হোক, প্রতিবেশীর গরু-ঘোড়াকে চরতে দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ওই বাংলাদেশের গ্রামের ছবি। মনে পড়ে কাঁচা রাস্তা ধরে পায়ে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার কথা। স্মৃতির চোখে স্পষ্ট হয়ে ভাসে, রাস্তার পাশে রাখাল বালকের গরু চরানোর দৃশ্য, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘামে ভেজা শরীরে কৃষকদের কোদাল আর লাঙল দিয়ে মাটি খোঁড়ার চিত্র। তখন যাকে বলতাম হাল-বাওয়া, তাকে আজ অন্যভাবে দেখি। সপ্তাহভর এক টুকরো জমি কর্ষণ করে, মাটি কেটে-খুঁড়ে, মই দিয়ে কাদা-পানির মাঠকে সমান করে, লাইন ধরে ধানের চারা লাগিয়ে কৃষক যখন জমি থেকে উঠে আসে, তখন আপনারা একে বলবেন রোপা ধানের খেতের জমি। আমি যদি বলি, ‘এ ধানের খেত নয়, ক্যানভাসে আঁকা স্কুল-কলেজে না যাওয়া এক দক্ষ শিল্পীর চমৎকার এক শিল্পকর্ম, এটা একটা নতুন জীবন্ত ছবি, যা দিনে দিনে বাড়ে, যে ছবি কদিন যেতে না যেতে ঘন সবুজ হয়ে সোনালি রঙে ভরে ওঠে,’ তাহলে কি ভুল হবে?

গ্রামবাংলা থেকে এবার ফিরে আসি ন্যাশভিলে। ঘরের পেছনের গাছে কাঠবিড়ালি আর আঙিনায় খরগোশের আনাগোনা হরহামেশা। কদাচিৎ ঘন গাছবনের নিচে হরিণেরও দেখা পাওয়া যায়। খামার এবং আমাদের বাড়ির সীমানা বরাবর বয়ে গেছে ছোট্ট নালা, যেখানে বারো মাস পানি থাকে। এখানে পানি খেতে ওদিক থেকে আসে পোষা গরু এবং ঘোড়া, এদিকের ঝোপঝাড় থেকে যায় বন্য রেকুন, স্কুইর‌্যাল। সাপ ও হরিণরাও যে পানি খাওয়ায় ওদের সঙ্গে শামিল হয় না, সে কথা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না। কারণ, এ পথে তারাও চলাফেরা করে। বাড়ির পশ্চিমের ওই বনে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ সারাক্ষণ আসে। বাড়ির পেছনের দিকে আমার মেয়েদের থাকার ঘরগুলো। ছুটিতে তারা বাড়ি এলে রাতে ঘুমাতে পারে না, পাখির ডাকাডাকি আর নানা জাতের ঝিঁঝি পোকার সুরেলা সংগীত চলতে থাকে দিনরাত। দুই বোনের এ অভিযোগ লেগেই আছে। তাদের মা পীড়াপীড়ি করেন সুন্দর সবুজ বনটি কেটে ফেলতে। আমার অবুঝ মন তো সবুজ গাছপালা কাটতে চায় না। মাঝেমধ্যে খোলা দরজা ভেবে উড়ন্ত পাখি জানালার কাচের গায়ে সজোরে আছড়ে পড়ে। গ্লাসে বাড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে নির্বোধ পাখিকে আহত হতেও দেখেছি, হয়তো কোনো কোনোটা মরেও থাকতে পারে। গরমকালে বাড়ির সামনে ‘জিনিয়া’ বাগানে যখন ফুল ফোটে, তখন রংবেরঙের প্রজাপতির যে মেলা বসে, তা দেখার মতো!

বাড়ি থেকে বেরিয়ে মূল রাস্তায় গেলেই, হাতের বাঁদিকে পড়ে ‘হারপেথ’ রিভার। নামে নদী হলেও বাংলাদেশি মানদণ্ডে এটাকে বড়জোর একটি স্রোতস্বিনী ছোট্ট খাল বলা যায়। এঁকেবেঁকে হারপেথ রিভার বয়ে গেছে পূব থেকে পশ্চিম দিকে। হারপেথ নদীর দক্ষিণপাড় দিয়ে তৈরি হয়েছে মাইল দেড়েক লম্বা একটি পাকা পায়ে চলার পথ বা ‘জগিং ট্রেল’। এ পথ দিয়ে বারো মাস আমাদের আশপাশ দু–তিন সাবডিভিশনের লোকজন নিয়মিত পায়ে হেঁটে চলাফেরা করেন। কেউ বাইক চালায়, কেউ কুকুর নিয়ে হাঁটে, কেউ স্ট্রলারে করে বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে বের হয়, কেউ আইপডে গান শুনে শুনে জগিং করে, কেউবা প্রিয়ার হাত ধরে খোশগল্পে মাতোয়ারা হয়ে হেলেদোলে চলে-স্ত্রী, না গার্লফ্রেন্ড বোঝার কোনো উপায় নেই, নেই তার কোনো প্রয়োজন।

‘জগিং ট্রেল’ আর নদীর মাঝখানে আছে বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় অনেক গাছ। জায়গাটা কাঁটাবন, ঝোপঝাড়, জংলি ঘাস, আর ঘন লতাগুল্মে ঢাকা। জঙ্গলে আছে অসংখ্য কাঁটাওয়ালা সুমিষ্ট রসালো জংলি ব্ল্যাকবেরির গাছ (ব্ল্যাকবেরি কিন্তু বংলাদেশের কালোজাম নয়। এটা আকারে কালো জামের চেয়ে ছোট বিচিবিহীন ফল)। গরমে যখন গাছে ব্ল্যাকবেরি পাকে, তখন ওতে বনের পাখি, কাঠবিড়ালি আর পাড়ার ছেলেমেয়েরা সমানভাবে ভাগ বসায়। বড়দেরও এখান থেকে বেরি তুলতে দেখেছি, মাঝেমধ্যে আমিও এনেছি। গ্রীষ্মের মৌসুমে জঙ্গলের পাশ দিয়ে জগিং ট্রেল ধরে হাঁটার সময় শ্বাস টানলে বাতাসে পাওয়া যায় জংলি ফুলের তীব্র ম–ম গন্ধ। চোখ মেললে দেখা যায়, ফুটে আছে নানা বর্ণের ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বেশুমার ফুল। এত সব ফুলের নামনিশানা কোনো বোটানিস্টও বলতে পারবে কি না, আমার সন্দেহ আছে!

ট্রেলের পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে রেললাইন আড়াআড়িভাবে ক্রস করেছে হারপেথ রিভারকে। রেললাইনের আগে, জগিং ট্রেল আর নদীর মাঝেখানে আছে দু–তিন একরের একটা খোলা ময়দান। সন্ধ্যাবেলা ময়দানের পাশে গিয়ে জগিং ট্রেলের ওপর দাঁড়ালে, প্রায়ই দেখা যায় ছোট্ট একঝাঁক জংলি হরিণ। ঘাস খায়, দৌড়াদৌড়ি করে, খেলে, মাঝেমধ্যে নদীতে নামে পানি খেতে। কেউ তাদের তাড়া দেয় না, ধাওয়া করে না, কেউ তাদের বিরক্ত করে না। শিকার করার তো প্রশ্নই ওঠে না, যদিও প্রায় সব আমেরিকানের ঘরেই বন্দুক আছে।

এ হলো বাড়ির পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। আমার কাছে মনে হয়, এ যেন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর আর উপকূলের সুন্দরবনের অপরূপ সংমিশ্রণ। আপনারা বলতে পারেন, এ কেমন তুলনা হলো? আমাদের সুন্দরবনে হিংস্র বাঘ আছে, ডোরাকাটা মায়াবী হরিণ আছে, ইগল আছে, আছে আরও কত কিছু। আপনার ওখানে আছে এগুলো? না, আমাদের এখানে বাঘ নেই বটে, কিন্তু ইগল আছে, তবে একটু ভিন্ন কিসিমের। আর তার গল্পই আমার আজকের মূল বিষয়। মানুষের বসবাস, চলাফেরা ও কাজকর্মের ফলে এমন সুন্দর পরিবেশও ময়লা হয়, নোংরা হয়, হয় দূষিত, কলুষিত। রাস্তার মেরামত, পায়ে চলা পথের ধারের ঘাস কেটেছেঁটে পরিষ্কার করে রাখতে হয়। অবশ্য এর বেশির ভাগ কাজই সিটি করপোরেশন ও আমাদের সাবডিভিশন কর্তৃপক্ষ করে থাকে। তারপরও নাগরিক দায়িত্ব বলেও তো একটি কথা আছে। আর এখানেই আমার মূল বয়ানের শুরু।

হরিণ-চরা মাঠের পাশে আমাদের এক জার্মান বংশোদ্ভূত প্রতিবেশীর বাড়ি। তাঁর বাপ-মার দেওয়া একটা নাম আছে বটে, কিন্তু আমি আজ তাঁর নাম দিলাম ‘রিচার্ড ইগলম্যান’, কেন, সেটাও আপনা–আপনি খোলাসা হয়ে যাবে একটু পরেই। তাঁর বয়স ৭০ ছুঁই–ছুঁই, ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে বাইরে চলে গেছে। ভদ্রলোক আর তাঁর স্ত্রী আমাদের পাড়ায় থাকেন। আমরা এখানে এ বাড়িতে আসা অবধি ‘ইগলম্যান’কে দেখছি এ অঞ্চলে চলাফেরা করতে। ইগলম্যান আর দশ-পাঁচজনের মতো নন। তিনি বাংলাদেশের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মতন পরিবেশ আন্দোলনের একজন সক্রিয় ও একনিষ্ঠ কর্মী। অধ্যাপক সায়ীদের ভাষায়, পরিবেশের ‘লাঠিয়াল’। (কয়েক বছর আগে এক টিভি টক শোতে পরিবেশ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক সায়ীদ গর্ব ও আত্মতৃপ্তির সঙ্গে বলেছিলেন, তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি পরিবেশের কে? তখন তিনি জবাব দেন, ‘আমি পরিবেশের লাঠিয়াল।’)

কি সকাল, কি দুপুর, কি বিকেল—(আমি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই, তাই আমার অফিসে যাওয়া-আসার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই) গাড়ি করে অফিসে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই ইগলম্যানের সঙ্গে দেখা হয়। ইগলম্যান সবসময় ঘর থেকে হাঁটতে বের হন দুটো বৈশিষ্ট্য নিয়ে। প্রথমত, তিনি কখনো একা বের হন না, যখনই বের হন, সর্বক্ষণ থাকেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী (নামটা কখনো জিজ্ঞেস করিনি)। দ্বিতীয়ত, তিনি কোনো সময়ই খালি হাতে বের হন না। সব সময় তাঁর হাতে থাকে একটা গারবেজ ব্যাগ। হেঁটে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন আর অনবরত রাস্তার এ-পাশ ও-পাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে ব্যাগে ভরছেন। রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজ, খালি প্লাস্টিকের বোতল, সোডার ক্যান, সিগারেটের বাক্স, গাছের মরা ডাল, ঝরা পতা—কোনো কিছুই তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না। কারণ তিনি ইগলম্যান, তাঁর চোখ ইগলের মতোই তীক্ষ্ণ ও ক্ষমতাসম্পন্ন, দূর থেকে তিনি তাঁর টার্গেট বস্তু দেখতে পান।

প্রথম দিকে তিনি খালি হাতে ময়লা কুড়াতেন, ইদানীং তাঁকে দেখা যায় এক হাতে গারবেজ ব্যাগ এবং আরেক হাতে ম্যাকানিক্যাল গারবেজ কালেক্টিং স্টিক। স্টিকের ওপরের প্রান্তে আছে একটা ম্যাকানিক্যাল লিভার এবং নিচের প্রান্তে আছে একটা সাঁড়াশি। ওপরের লিভার ধরে চাপ দিলে, নিচের সাঁড়াশি চিমটির মতো ধরে সব ময়লা-আবর্জনা সহজেই তুলে নিয়ে আসে। ঘাড় নুইয়ে ইগলম্যান বছরের পর বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আমাদের পাড়ায় এ মহৎ কাজটি করে যাচ্ছেন। তাঁর সৌজন্যে আমরা একটা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশে বসবাস করতে পারছি।

নিছক কৌতূহলবশত একদিন ইগলম্যানকে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু যদি মনে না করেন, তাহলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? বললেন, ‘নির্দ্বিধায় করতে পারেন।’ আমি বললাম, আর তো কেউ করে না, আপনি কেন এ কাজটা করেন? ইগলম্যানের জবাব, ‘এ কাজ সবার, আমি করি বলে সবার ওপর থেকে দায়িত্বটা আদায় হয়ে যায়। আমি যখন থাকব না, তখন এ কাজের বোঝা সবার ঘাড়ে থেকে যাবে।’ ইগলম্যানের কথা শুনে আমি কতক্ষণ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। ইগলম্যান হয়তো বা জানেন না, কিন্তু তিনি আমাকে মুসলমানদের ‘ফরজে কিফায়ার’ কথা মনে করিয়ে দিলেন। পরিবেশকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে রাখা কোনো ব্যক্তির একার কাজ নয়। এটা নাগরিক সমাজের সামষ্টিক দায়িত্ব। জানাজা ও দাফন–কাফনের মতোই এটা ‘ফরজে কিফায়া’। একজন বা কয়েকজন পালন করলে সবার ওপর থেকে আদায় হয়ে যায়, আর কেউ না করলে সবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে রয়ে যায়।

ঢাকা মহানগরে যেকোনো ইগলম্যানের জন্ম হয়নি, তা আমি বলছি না। তবে এটুকু নিশ্চিত করেই বলতে পারি, দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকাকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হাজারো না হলেও শত শত ইগলম্যানের দরকার। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যে মুহূর্তে একজন নতুন ইগলম্যান যুক্ত হবেন, সেই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রীতিমতো সেলিব্রেট করা উচিত। অবশেষে, আপনাদের জন্য এ লেখার দুটো প্রাসঙ্গিক দুঃখের খবর দেওয়া দরকার। প্রথমত, ইগলম্যান এখন একাই হাঁটেন, তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আজ আর বেঁচে নেই। দ্বিতীয়ত, আমার বাড়ির সামনের জিনিয়াবাগানও আর নেই, কেন, কীভাবে, সে গল্প হবে না হয় আরেক দিন।

লেখক: অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি