করোনাজীবনের ষষ্ট দিন, সবাই আইসোলেশনে

>করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন। আজ পড়ুন ষষ্ট পর্ব।

ঘুমটা আসলে বড্ড জ্বালাচ্ছে! ঘুমের দেবীর হাত–পায়ে ধরার পরও তার দেখা মিলছে না। তপস্যা চলছে। সারা রাত মোটামুটি আবারও জেগেই আছি। আজ মেয়ে আর তার বাবা আবার টেস্ট করাতে যাবে। মেয়ে এখনো কাশছে। আমার খাবারের ইচ্ছা কমে গেছে, তবুও খাচ্ছি খেতে হবে বলে। স্টেরয়েড শুরু করার পর শরীর ব্যথা কমেছে তবে তার সাইড ইফেক্ট টের পাচ্ছি।

ওরা টেস্ট করে আসার পর আবার আমার মায়ের বাসায় খাবার আনতে গেল। আজ কাশিটা ভারী লাগছে, ইনহেলার একটু ঘন ঘন ব্যবহার করছি। ঘুম হয়নি তারও ইফেক্ট হতে পারে। সে জন্য হয়তো বেশ বোর ও লাগছে! ব্যস্ততায় দিন কাটে যার, শুয়ে-বসে অলস সময় পার করা কঠিন হয়ে যায়।

কাজ থেকে জানতে চাচ্ছে যে কদিন অফ থাকব, সে কদিন কাকে দায়িত্ব দিয়ে রাখব। কাজে না গেলেও কাজ বন্ধ থাকে না। সে সব ঠিকঠাক করতে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

ভাগ্যিস যে এ সময়ে টেকনোলজির এত উন্নতি হয়েছে- রোগীরা ঘরে বসে তাদের প্রশ্নের উত্তর পায়, প্রেসক্রিপশন সোজা ফার্মেসিতে চলে যায়। অনেক সময় ভিন্ন স্টেটে ভুলে ওষুধ নিতে ভুলে গেলেও, চেইন ফার্মেসি থাকায় তারা সহজেই ওষুধ পেয়ে যায়।

করোনায় যেটা হয়েছে, যেহেতু কেউ জানে না এর মতি গতি, বয়স্ক অসুস্থ বা অল্পবয়সীরাও হুটহাট মারা যাচ্ছে, সঙ্গে এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ভীষণভাবে চ্যালেঞ্জ করছে, এংজাইটি খুবই বেড়ে গেছে। হয়তো কয়েক মাস তারা বন্দী ছিল, কারও সঙ্গে দেখা হয় না, ইন্টারেকশন নাই, ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে! যখনই অফিস খুলছে বা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, দুদিন পরে শুনছে, তাদের কেউ পজিটিভ আসছে বা তাদের কোনো করোনা রোগীর সঙ্গে এক্সপোজার হয়েছে-এখন নিজেদের মনিটর করতে হবে। অথবা নিজেদের সর্দি কাশির সিম্পটম দেখা দিলে তো কথাই নাই-এংজাইটি ওভার দি রুফ। অনেকের অসুস্থ বাবা-মা-কে বা পরিবারের কাউকে দেখতে যেতে হবে, ভিন্ন স্টেটে যেতে হবে, তার জন্য করেনা নেগেটিভ না হলে যেতে পারবে না- এত সব বাধ্যবাধকতায় জীবন দুর্বিষহ! ফলাফল এংজাইটি।

মাস্ক ছাড়া কোনো ক্লিনিকে যাওয়া যাবে না। অনেক দোকানে মাস্ক ছাড়া ঢুকতে দেয় না। ১০০% ম্যান্ডেট এখনো করে নাই-কিন্তু করা উচিত। যদিও স্কুলগুলো বন্ধ, এখানের স্কুলের/ হাইস্কুলের (৯-১২ গ্রেডে) বাচ্চারা ভীষণভাবে খেলাধুলায় যুক্ত, মিউজিক, ব্যান্ড আরও শত রকমের কাজে ব্যস্ত থাকে বাচ্চারা, টিন এজাররা। কোথাও কোথাও খেলার ক্যাম্পগুলো চালু করেছে, প্রথমে বড় আকারে করতে গিয়ে পরে ছোট করে চালু করেছে-তারপরও সেখানেও করোনা হানা দিচ্ছে। এরা আবার সামারের ছুটিতে সবাই পার্টটাইম জব করে দোকানপাটে- সেখান থেকেও আক্রান্ত হচ্ছে। বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ইন্টারেকশন না থাকাটাও বা তাদের কোভিড আক্রান্তের খবরগুলোও এদের ভয়ানকভাবে ডিপ্রেস করে দিচ্ছে।

আবার নতুন সেমিস্টারে যারা কলেজে ক্লাস শুরু করবে তারাও জানে না- কলেজ কি ডিসিশন নেবে ফাইনালী। অবশ্যই অনলাইন কোর্স মেইন এ সময়ে। আবার ট্রাম্প বহির্বিশ্বের ছাত্রছাত্রী অনলাইন ক্লাস করলে ভিসা দেবে না বলে তুমুল সমালোচনার মুখে ইউনিভার্সিটির তোপে পরে সে কথা তুলে নিয়েছে।

এসব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে প্রশাসন কখনোই পেরে উঠবে না আইনের মারপ্যাঁচে-এটা এদের গণতন্ত্রের সুবিধা! নিজেদের শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতা, প্রেসিডেন্টের চাওয়া থেকেও বড়।

স্কুল খুলবে বলে ভাবছিল, আমার বাচ্চারা ক্লাসে যেতে তৈরি ছিল, আমিও। পরে যখন কোভিড কেস বেড়ে গেল- স্কুল সিস্টেম ঠিক। করেছে অনলাইনেই ক্লাস নিবে- আমি স্বস্তির হাফ ছাড়ি। ছেলে দেখে বলে, তুমি সত্যিই চায়নি আমরা ক্লাসে যাই? আসলে প্রথমে চেয়েছিলাম, তবে কেস বাড়াতে আর চাইনি, তবে আমি খুশি যে সে ডিসিশন আমায় নিতে হয়নি। ওদের মন খারাপ হলেও মেনে নিয়েছে। মেয়ের ব্যান্ড, ছেলের ব্যান্ড, মেয়ের শেষ বছর আর ছেলের হাইস্কুলের শুরুটা এভাবে হোক- তা চাইনি! তবে সব চেয়ে বড় ব্যাপার তাদের সুস্থতা। আমি তাদের ১০০% উপদেশ দিলেও যে তারা সব মানবে তার গ্যারান্টি কোথায়? আবার বাকি যে ৯৯% শিক্ষার্থী তাদের এবং তাদের ফ্যামিলির বিশ্বাস আমার অজানা।

আমার কোভিড হওয়ায় ঘরে সবাই আইসোলেশনে- মেয়ের কাজে যাওয়া বন্ধ- নিজেই না করে দিয়েছে। আপাতত সবাই সুস্থ আছে - সেটাই হাজারো শুকরিয়া। দেখা যাক এদের টেস্ট রেজাল্ট কী আসে—সবাই আপাতত কোভিড, আনটিল প্রুভেন আদার ওয়াইজ। ঘরে সবাই মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিন দিন লাগবে রেজাল্ট পেতে। চলবে...।