ঘরে অহেতুক ও যথেচ্ছ অক্সিজেন ব্যবহার নয়

>করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন। আজ পড়ুন সপ্তম পর্ব।

ফাইনালি গত রাতে ঘুম হয়েছে। ব্যথা নেই। সবকিছুর ইন্টারেস্ট কম। তারপরও খেতে হবে, ভাবলাম নাশতা বানাই। বানাতে যেয়েই টের পেলাম, কী ভীষণ টায়ার্ড। নাশতা শেষ করে কোনোমতে বিছানায় গেলাম, কখন যে ঘুমিয়ে গেছি। দেখি খুটখাট শব্দ দরজায় একেকবার। চোখ খুলে দেখি মেয়ে জানতে চাচ্ছে কিছু লাগবে কি না। কিছু লাগবে না জানিয়ে আবারও ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছি।

ফাইনালি যখন ভাবলাম, উঠি এবার, দেখি দুপুর গড়িয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে ফিরতে দেখি মেয়ে সাইড টেবিলে কিছু রাখছে, আদা চা আর দুটি টাইনানল, মানে প্যারাসিটামল! গড ব্লেস হার হার্ট। খাবার দেবে কি না জানতে চাচ্ছে। নরমালি এ রকম সময়ে আমি দু–একবার নিচে নামি, আজ আর কোনো কিছুতে মনোযোগ নেই।

সাথের যে দুজন অসুস্থ, তার একজনের ঘ্রাণশক্তি লস হয়েছে, আরেকজন দুর্বলতা ছাড়া ভালোই আছে।

আজ আমার সিম্পটম ভিন্ন রকমের-ঠিক বুঝিয়ে, গুছিয়ে বলা আসছে না। অসুস্থ লাগছে, টায়ার্ড লাগছে। কথা বলার মতো এনার্জি নেই। আমার রেগুলার দিন মিস করছি। অ্যাটলিস্ট খাবার টেবিলে সবার সঙ্গে বসা হয়, কথা হয়, সেটাও বন্ধ।

শরীরটা দুর্বল লাগছে, শ্বাসটা একটু হেভিই মনে হচ্ছে, তবে শ্বাসকষ্ট নেই! ফোরহেড ননটাচ থার্মোমিটার এসেছে, কোনো জ্বর নেই। পালস–অক্সিমিটারের অপেক্ষায় আছি।

বান্ধবী জিজ্ঞেস করে, অক্সিজেন ট্যাংক কিনছি কি না? না, সে অবস্থা হলে হসপিটালে যেতে হবে।

দেশে শুনছি সবাই অক্সিজেন ট্যাংক মজুত করছে, তার যে সাইড ইফেক্ট আছে, তা হয়তো বেশির ভাগ জনগণই জানে না। তবে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন আপনার জন্য ক্ষতিকারক।

আমাদের শ্বাস–প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন অবশ্যই দরকারি। তবে নরমালি স্যাচুরেশন ৯০–এর নিচে না নামলে অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট লাগে না। আর ৯০–এর নিচে গেল ঘরে বসে নিজের অক্সিজেন চালু করার আগেই হসপিটালে ক্রিটিক্যাল কেয়ারের আওতায় থাকা উচিত।

কারণ, এই পর্যায়ে এসে আরও অনেক কমপ্লিকেশন চলে আসবে।

এখন দেখি অতিমাত্রায় অক্সিজেন কি ক্ষতি করতে পারে। অক্সিজেন নার্ভের ক্ষতি করে, লাংয়েরও ক্ষতি করে। অতিমাত্রায় অক্সিজেনে মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব, বিরক্তি, অ্যাংজাইটি থেকে শুরু করে খিঁচুনি হতে পারে। মুখের মাংসে খিঁচুনি হতে পারে, শরীরের রং চেঞ্জ হতে পারে, শ্বাস–প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে।

আবার বুকে তীব্র ব্যথা করতে পারে এবং কন্টিনিউ করলে লাংয়ের ফাইব্রোসিসও করতে পারে, সেটা হতে পারে পার্মান্যান্ট ড্যামেজ! তাই ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকলেও অহেতুক এবং যথেচ্ছ ঘরে অক্সিজেন ব্যবহার না করাই উচিত।

লেখক
লেখক

কারণ, যখন সব সিম্পটম নিম্নগামী থাকে—আপনাকে কনস্ট্যান্ট মনিটর করতে হবে। ইলেকট্রোলাইট, হার্টের অ্যানজাইম, পসিবল ইনফেকশন, ব্লাড ক্লট আছে কি না বা ইভেন স্ট্রোক হলো কি না, তার সব পরীক্ষা সমানতালে চলতে হবে। অ্যাজমা, সিওপিডির একিউট ম্যানেজমেন্ট ভিন্ন অবশ্যই এক্সপার্ট চিকিৎসকের আন্ডারে ম্যানেজমেন্ট চলতে হবে এ সময়।

আর একটা জিনিস বলেই ফেলি, আমাদের সমাজে কেউ এটা ভাবে না, তবে অবস্থা সিরিয়াস হলে, আপনার স্থাবর–অস্থাবর সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা কীভাবে হবে, আপনার কিছু হলে তার একটা দিকনির্দেশনা থাকা উচিত! সেটা এমনভাবে করতে পারেন যে আপনি সুস্থ হয়ে গেলে সেটা কার্যকর হবে না তবে আল্লাহ না করুক, কিছু হলে যেন আপনার সম্পদ আপনার মত অনুযায়ী ভাগ–বাঁটোয়ারা হয়। সেটা আপনার পরিবারের জন্য একটি বড় স্বস্তি হবে যে সেটা আপনার ইচ্ছানুযায়ী হবে। যেমন হয়তো আপনি আপনার সম্পত্তি আপনার একমাত্র কন্যাটিকে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তবে তার কোনো লিখিত প্রমাণ না থাকলে, সে হয়তো কিছুই পাবে না, অন্যান্য শরিক তার ভাগ মেরে খেয়ে নেবে। কত কিছুই হতে পারে। আর এটা শুধু কোভিড–কালীন নয়, যেকোনো সময়ে হতে পারে। আমরা জানি না, আগামীকাল আমাদের অ্যাক্সিডেন্টে ভালো–মন্দ কিছু হলে, সন্তান, বাবা মা স্ত্রী তাদের জন্য যদি ভেবে না যাই, তাদের জীবন দুর্বিষহ কাটতে পারে শুধু এসব না ভাবার কারণে। আপনি জীবিত অবস্থায় জানেন কাকে মনোনীত করতে পারেন আপনার অবর্তমানে আপনার সন্তানদের দেখভাল করার জন্য।

অনেক কঠিন কথা বলে ফেললাম। কিন্তু জিনিসটি আমাদের মাথায় থাকা উচিত। আমি দেখি কিসে আজ আমার ভালো লাগবে। মায়ের বাসা থেকে অনেক ভর্তা এসেছে। আপাতত কিছু খেয়ে পেট ঠান্ডা করে নিই। আর দেখি ভালো লাগে কি না। বাইরে সুন্দর ঝকঝকা দিন, পাখিরা আঙিনাময়, তবে আজ আর কিছুই টানছে না কেন যেন। চলবে...