কোথাও ছন্দপতন নেই

করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন। আজ পড়ুন অষ্টম পর্ব।

সকালে ঘুম ভাঙল কর্তার ডাকে। সে দরজায় দাঁড়ানো সঙ্গে বন্ধু বেনজি। বলল, ওর করোনা টেস্ট নেগেটিভ। সারারটা সেরে উঠলে জানা যাবে। আমি পাশ ফিরে আবার ঘুমাতে যাব, দেখি মেয়ের টেক্স্ট! ওর পজিটিভ এসেছে। আমি যদিও চাচ্ছিলাম নেগেটিভ আসুক কিন্তু ওর কনজেশন দেখে পজিটিভ হওয়ায় অবাক হইনি, তবে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তবে ও ভীষণ স্ট্রং মানসিকভাবে। আল্লাহ ভরসা।

প্রতিদিন ও জিজ্ঞেস করে, খাবারের স্বাদ পাচ্ছ, গন্ধ পাচ্ছ? চা বা এটা-ওটা এগিয়ে দেয়, বেচারা। তবে কনজেশন ছাড়া ওর আর কোনো সিম্পটম নেই। সেটা একটু ভালো দিক।

আজ ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। মনটাও খারাপ, মেয়েটার পজিটিভ আসায়। দেখি নাশতা করে ওষুধ খেয়ে ভালো লাগে কি না।

মেয়ে এর মাঝে তার ওষুধ খেয়ে বেনজিকে নিয়ে উঠানে হাঁটতে গেছে, বেনজি ভদ্র ছেলের মতো পিছু পিছু হাঁটছে তবে, জঙ্গলের কাছে গিয়ে, জঙ্গলে যাওয়ার জন্য গাঁইগুঁই করছে! পাখিরা সকালে তাদের খুনসুটিতে ব্যস্ত! হামিংবার্ড একটার পর একটা এসে ঘুরে যাচ্ছে, তাদের পছন্দমতো ফুলের মধু খেয়ে যাচ্ছে, সুন্দর একটা প্রজাপতিও উড়ে বেড়াচ্ছে—চিপমাংক একটা ঘুরে বেড়াচ্ছে (এগুলো ছোট কাঠবিড়ালির মতো)। তার সঙ্গে তো মৌমাছি, ভিমরুল আরও কত না জানা পতঙ্গ ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে! কোথাও ছন্দপতন নেই, আপাতত আমার ঘরছাড়া! সে যা-ই হোক, বি পজিটিভ বলে মনটা ঘোরানোর চেষ্টা করছি।

কর্তা এর মাঝে এসে বলে, ‘তোমরা তাহলে ফ্লু আর কোভিডের পার্থক্য করবা কীভাবে?’

আসলেই বাজে সময় আসছে! তবে মানুষ ট্রাভেল কম করছে, হয়তো ফ্লু কম হতে পারে। তার পরও এখানে এলার্জি, অ্যাজমা মানুষের এত বেশি যে, তাদের এর ফলে কী অবস্থা হবে, সেটা ভেবে আসলেই চিন্তা হচ্ছে। করোনা নতুন এইডস হয়ে গেল! আপাতত কোনো ট্রিটমেন্ট নেই! কাছে গেলেই হবে। এইডস তবু প্রিভেন্ট করার সহজ উপায় আছে, করোনার নেই! বোঝার আগেই করোনা ছড়িয়ে যাবে, গেছে, যাচ্ছে।

আজ কেন যেন এক্সট্রা ক্লান্ত লাগছে। খাবার দিয়ে ফ্রিজ ভরা, খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না, তবে ক্ষুধা আছে। চলবে...।


আরও পড়ুন
করোনাজীবনের সপ্তম দিন
ঘরে অহেতুক ও যথেচ্ছ অক্সিজেন ব্যবহার নয়