ফুটফরমাশ খেটে মেয়ে এখন অসুস্থ

>

করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন। আজ পড়ুন নবম পর্ব।

ঘুম থেকে উঠে খুব ভালো লাগছিল! তবে সকাল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টায়ার্ডনেস বাড়ছে। নিচে নেমে দেখি পতিদেবতা অলরেডি তার স্টেপস শেষ করে এসেছে, মানে দশ হাজার স্টেপস। এদিকে আমার ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে। রাগ হতে চেয়েও হতে পারছি না। সবার নিজের মতো করে ভালো থাকার রাইট আছে। খাবার খেতে গিয়ে বুঝতে পারছি, মেয়ে উঠেছে। কাশিটা বেড়েছে ওর। নরমালী কোনো ফাঁস করে না। নামতেই নাশতা করে ওষুধ খেয়ে নিতে বললাম। খেয়ে দেয়ে ঘণ্টাখানেক পর নামছে আবার, শরীর ভালো লাগছে না আজ ওরও। আরেক কাপে ওষুধ দিয়ে খেতে বললাম।

বাবা দুপুরের খাবারের কথা জানতে চাইছে। মেয়ের খেতে ইচ্ছা নাই! স্যুপ আনতে বললাম আমাদের জন্য। ছেলে খাবে স্যান্ডউইচ। না বলে দিলে সে কোনো কাজ গুছিয়ে করতে পারে না। আবার সেই এখান থেকে তার মায়ের সব কাজ করে দেয়। সব বিল দেওয়া, বাসায় কে ঘাস কাটবে সেটাও ঠিক করে। কাল মেয়ের সঙ্গে দাদির কথা হয়েছে, শুনেছে, নাতনি অসুস্থ- কান্নাকাটি করছে।

আমি সারা দিন সোফাতেই শুয়ে আছি। বাসার পাওয়ার ব্যাংক দুজনই ডাউন। পাওয়ার ব্যাংক মানে, আমি আর মেয়ে-এটলিস্ট ছেলে দুটো চলে বেড়াচ্ছে। এরা অসুস্থ হলে-কি যে হবে!

এটলিস্ট আমরা দুজন নিজেদের জন্য কিছু করে নিতে পারব। ছেলে নরমালি অসুস্থ দেখলে এটা-সেটা করে দেয়, তবে জানে এবার কাছাকাছি না হয়ে দূরেই থাকতে হবে। ওর তাতে সমস্যা নেই, নরমালীও গেমস খেলার ফাঁকে ফাঁকে দুটো মুখে খাবার গুঁজে আসে। এখন তো আরও কিছু বলছি না। রাতে বাপ-বেটা মিলে মুভি দেখছে। ছেলেকে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করছি, কেমন যাচ্ছে- আপাতত ভালোই বলছে, বলে মাঝে মাঝে দু একবার কাশি হচ্ছে। দেখি সামনের সপ্তাহে ওরও টেস্ট করাব। আমাদের মাঝে ওরই কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। অসুস্থ হলে মানে আমাদের দোষ!

বাবার এক্সট্রা কাজ হচ্ছে, আমাদের যদি কোনো স্পেশাল খাবারের অর্ডার থাকে তা নিয়ে আসা। সারা পজিটিভ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটা করেছে। সব ফুটফরমাশ খেটে এখন সে অসুস্থ।

কি যে যন্ত্রণা দূরত্ব মেনটেইন করা। নরমালী কেউ কারও চেহারা দেখা হয় না। বাবা খাবার এনে বলছে, টেবিলে দাও। সেটা নরমালী করা হয়, কিন্তু এখন যে করা যাবে না, সেটা ভুলে যাচ্ছে। মেয়ে টেবিলে প্লেট দিতে শুরু করে, আমাকে মাঝ পথে থামাতে হয়, ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচানোর জন্য। বলে দিতে হয়, যার যার টা সে নিয়ে নিক, আমার আর মেয়েরটা আলাদা করে রাখুক! কবে যে এ অশান্তির শেষ হবে? ভাগ্যিস বাসায় আর কেউ নেই। যাদের বাসায় অনেক লোকজন, তাদের অবস্থা চিন্তা করেও খারাপ লাগছে।

অনেকেই জানতে চাচ্ছেন কেমন আছি, আসলে বাবা-মা ছাড়া এ মুহূর্তে কারও সঙ্গে কথা বলার মতো শারীরিক এবং মানসিক অবস্থাটা নেই। তবে আপনাদের সবার ভালোবাসা টের পাচ্ছি। দোয়াতেই রাখুন আপাতত। হাজারো মাইল দূরত্বে ভাই, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার মনে এ সময়ে আমাদের জন্য যে ভালোবাসা আর টেনশন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

বাইরের সূর্য, পাখির কলতান, ফুলে ভরা বাগান, ক্ষণে কাছে টানলেও, ক্ষণেই মনে হচ্ছে বিরক্তিকর। শরীর ভালো না লাগলে, কোনো কিছুতেই আনন্দ লাগে না। দরজা খুলে কিছুক্ষণ পেসিং করলেও তারপরই ফিরে শুয়ে পড়ছি। ওদিকে বেনজির সমস্যা হয়ে যাচ্ছে, আদর কমে যাচ্ছে আর সে একটু পর পর বাইরে যাওয়ার বায়না করছে। তার পছন্দ সামনের পোর্চে বসে থাকা, তবে সে শুধু বসেই থাকে না, সুযোগ পেলেই বেরিয়ে যায় পাখির পেছনে বা কাঠবিড়ালির পেছনে। চলবে...