আবশ্যিক নয়

লেখক
লেখক

দীর্ঘ চার মাস একটি কক্ষে বন্দী জীবন কাটাচ্ছি। করোনা নামক বৈশ্বিক মহামারি জীবনকে থামিয়ে দিয়েছে এক প্রকার। দিন রাত্রির তফাৎ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। একটা সময় বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই ঘুমিয়ে যেতাম। শান্তির ঘুম কি না বলতে পারি না। বোধ হয় ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসত। অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে ঘুম কিনতাম। আজকাল শারীরিক পরিশ্রম একদম নেই বললেই চলে। অন্যান্য জিনিসের মতো ঘুমটাও বিনা মূল্যে পাওয়া যায় না। রাত জেগে জেগে তাই ফেলে আসা জীবনের হিসেব মেলাতে বসি হরহামেশাই। অনেক পাওয়া না পাওয়ার গল্প আর আনন্দ-বেদনার মিলন মেলা হয়।

একটা জিনিস লক্ষ করে দেখলাম যে আমার জন্য অপেক্ষা করার কেউ নাই। আমি সারা জীবন হয় সেকেন্ড চয়েজ নইলে রিপ্লেসেবল কেউ ছিলাম। কারও জন্য ম্যান্ডেটোরি ছিলাম না। ‘তোমাকে লাগবেই’ বা ‘তোকে লাগবেই’ কিংবা তোমাকে ছাড়া আমার চলবেই না এই টাইপের কেউ আমার কখনোই ছিল না। ব্যাপারটা প্রথমদিকে যন্ত্রণা দিলেও পরে গা সওয়া হয়ে গেছে। হয়তো আমি কারও জীবনের প্রথম পছন্দ হওয়ার যোগ্যতাই রাখি না। ব্যাপারটাকে সাধারণভাবেই দেখি আজকাল। ছোট বেলায় শিখে গিয়েছিলাম কারও কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা না করতে। যার কারণে মন ভাঙা সংক্রান্ত দুঃখ-বেদনা কখনোই আমাকে ছুঁতে পারে না। অনেক খুশির কোনো কারণ থাকলেও আনন্দিত হই মেপে মেপে। মেশিন কিংবা রোবটিক ইমোশন যেরকম হয় অনেকটা সেরকম।

জীবনে ভুলভ্রান্তি হয়েছে অগণিত। হিসেবের গরমিল তাই খুবই প্রত্যাশিত ব্যাপার। কিছু বিষয়ে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করতেই হয়। যে সমস্ত বিষয়ে আমি দোষী নই, সেগুলোতেও কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ইচ্ছে হয় না। মানুষগুলো আমাকে বোকা ভেবেছে, ভাবুক না! তাতে আমার তো কোনো ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না। কারও জীবনের প্রথম পছন্দ না হলেও সাপোর্টিং ক্যারেক্টারটা বেশ উপভোগ করি। আক্ষেপ করা ছেড়ে দিয়েছি কারণ সেটা বলার মতোও কোনো মানুষ নেই।

তবুও কারও সেকেন্ড চয়েজ বা অপশনাল চয়েজ হিসেবে বেঁচে থাকাটা অতটা সুখের না, সম্মানেরও না। তবুও বেঁচে থাকতে হয়, বেঁচে আছি।