জ্যামের শহরে বাজার সদাই

ইলিশের জোড়া কত?

-স্যার, শুধুমাত্র বিজয় সরণি সিগন্যালের সুপারশপ দিচ্ছে এক জোড়া ইলিশ মাত্র চার হাজার টাকায়।

অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে এভাবেই আজকাল সব কেনাকাটা সেরে নেই। কিনব, নাকি মহাখালীর জ্যামে মিনি বাজার ভালো অফার দেবে সেটা একবার যাচাই করে না হয় কাকলির জ্যামে বেষ্ট থেকে নিয়ে ফেলব-এটা ভাবতে ভাবতে ফিরে গেলাম ২০২০ এর সেই দিনগুলোতে...

সময়টা এখন ২০৫০, আজকাল কেউই নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার করতে কাঁচাবাজার কিংবা সুপারশপগুলোতে যায় না। কারণ অফিস থেকে বাসায় ফিরতে প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক জ্যামেই থাকে - আমলা থেকে কামলা পর্যন্ত...আর এ সময়টাতেই বিক্রেতারা তাদের মাছ-মাংস-তরিতরকারি নিয়ে হাঁকডাক করতে থাকে, পাশাপাশি সুপারশপগুলো ক্যাশব্যাক অফার নিয়ে হাজির হয়, ক্রেতারা হয়ে পড়েন কনফিউসড।

২০২০-এ কিন্তু এমনটা ছিল না, হয়তো দু-এক ঘণ্টা কম থাকতাম জ্যামে, কিন্তু বাসায় ফিরে আবার বাজার করতে নামতে হতো। যাকে বলে এক্সট্রা একটা কাজে সময় নষ্ট। এর থেকে এখনই কেমন সুন্দর জ্যামে বসেই বাজারটা সেরে ফেললাম। আজ শুধু এক জোড়া ইলিশ নিলেই চলবে।

পাশের ভদ্রলোক পান্থপথ থাকতে একটা কোলবালিশ অর্ডার করেছিলেন অনলাইন ডট কমে, বিজয় সরণিতে ডেলিভারি পেলেন। কিন্তু অনলাইনের ওই একটা সমস্যা থাকবেই, কোলবালিশের কাভার-এর একটা ফিতা নেই, ডেলিভারি ম্যান মহাখালীর জ্যামে সঠিক প্রোডাক্টের গ্যারান্টি দিয়ে নেমে গেলেন। হায়রে বাংলাদেশের অনলাইন শপিং, এখনো ভালো হলো না...!

বাস প্রায় অর্ধেক ফাঁকা, নভো থিয়েটারের পাশের সিনেপ্লেক্সে কলেজের ছেলেগুলো ঘণ্টা দেড়েক আগে নেমেছে ....সিরিজের নতুন মুভিটা দেখতে। সমস্যা নেই, লাল সিগনালের নিচে দেখা যাচ্ছে এখনো এখানে ২০ মিনিট থাকতে হবে আটকা। এর ভেতরেই মুভি শেষ করে চলে আসতে পারবে। আমি ও এখানেই দেখি আজকাল।

মেট্রোরেল হলো, আন্ডারগ্রাউন্ড রোড হলো, ভিআইপি গাড়িগুলো ‘উঠাও’ ব্যবহার করছে। তারা আকাশপথে প্যা পো বাজাতে বাজাতে যায়, তবুও জ্যামের সেই আগের অবস্থা...।

যাক, এর ভেতরেও কাল বাসার সবার জন্য বনানী সিগন্যাল-এর ভ্রাম্যমাণ এ-ক্র্যাফট থেকে ঈদের শপিং করে ফেলব।
জ্যাম থেকে যদি দারুণ কিছু হয়, তবে তো জ্যামই ভালো ....!!