চিকিৎসকের ঘরেও ওষুধ খেতে অপছন্দ করা লোক থাকে

করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসকও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সিরিজ লিখছেন। আজ পড়ুন ১৭তম পর্ব।

আজ আমি অনেকটাই সুস্থ। কাশি আছে। মেয়ের অবস্থাও বেশ ভালো। তারপরও জিজ্ঞেস করছি, ওষুধ ঠিকমত খাচ্ছে কি না? জানাল খাচ্ছে। আমি আগামি সপ্তাহে আরও একটি টেস্ট করাব। কাশি আছে, থাকবে আরও কয়েক সপ্তাহ বুঝতে পারছি। মেয়ের ডায়রিয়াও চলছে। তবে ও যে আগের চেয়ে অনেকটা ভালো করে ঘরের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে আমি মনে মনে স্বস্তি পাচ্ছি।

মেয়ের বাবা বলছে তার সমস্যা নেই। কাশিটা খারাপ নয়, ওষুধ খাচ্ছে। নাশতা দিলাম আজ। কাজে ছুটি নেবে না বলেছে আপাতত যেহেতু বাসা থেকেই কাজ করছে। দেখি হয়তো সেটা পরিবর্তন করতেও পারে।

দুপুরে বাচ্চারা বাইরের খাবার টেকআউট অর্ডার করেছে। আজ আর তেমন কাজ নেই আমার; জাস্ট এদের সাহস দেওয়া ছাড়া।

আজ বাইরে দেখতে ভালো লাগছে। কতশত পাখির কিচিরমিচির বাইরে। কতক্ষণ বাসার পেছনে হাঁটাহাঁটি করলাম। আমার হামিংবার্ডগুলোর একদম নাকের ওপর এসে নাচানাচি করা দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।

ফিরে দেখি কর্তা বেড়ালের সঙ্গে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে—জানি মাথাব্যথা করছে, তবে এখনই বলবে না। ও ওষুধ খেতে পছন্দ করে না, নিতান্ত বাধ্য না হলে। আমার মনে হয় প্রতি ডাক্তারের ঘরেই এমন লোকজন পাওয়া যাবে। বেড়াল এর মাঝেই লাফিয়ে নেইবারের বাসা আমার বাসার পাখিদের পেছনে চলে গেল-ওও পিছু পিছু গেল দেখে রাখতে। ফিরে এসে নিউজ দেখতে দেখতেই বলছে জ্বরজ্বর লাগছে। হয় এমন, যদিও জ্বর নয়, তবে ঘাম দিয়ে এই জ্বরভাব যায়! বেশ ভোগায় এ সমস্যা। টেম্পারেচার মেপে দেখি আসলেই জ্বর নেই। জিজ্ঞেস করলাম প্যারাসিটামল নিয়েছে কি না? হ্যাঁ বলতেই ঘুমাতে যেতে বললাম। দেখি কী অবস্থা হয়। হয়তো এই প্যারাসিটামল খাবার কারণেই আমাদের জ্বর সেভাবে রেকর্ড হচ্ছে না।

করোনার শ্রেণিবিভাজন চলছে। আপাতত কয়েক ভাগে ভাগ করেছে, যার একটি ভাগে জ্বরসহ, অন্য ভাগে জ্বরছাড়া। তার মাঝে সিভিয়ার একটি ফর্ম জ্বরসহ বা জ্বর ছাড়া শ্বাসতন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের উপসর্গ নিয়ে যে করোনা। সে হিসাবে আমরা এই সিভিয়ার ফর্মে আছি। তবে স্বস্তি যে আমাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন তত ড্রপ করেনি আর আমরা বাসাতেই মোটামুটি স্ট্যাবল। এর বেশি আপাতত আমার চাওয়া নেই। এভাবেই ধীরে ধীরে সবাই সুস্থ হলেই আমি খুশি। কেউ বিছানায় সেভাবে না পড়লেই আমি খুশি।

আমার বান্ধবী ও তার পরিবার এবং দুই পাশের দুই প্রতিবেশীদের করোনার টেস্ট নেগেটিভ, এটা আমার জন্য ভীষণ স্বস্তির। যদিও পজিটিভ হওয়ার আগে আমার দুই–এক মিনিটের ইন্টারএকশন শুধু একজনের ছোট মেয়ের সঙ্গে, যা বাইরে কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এদিকে আমাদের দুই মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট মোটামুটি সুস্থ। ওরা শিগগিরই কাজে ফেরত যাবে, তবে আমার পরিবারের মাল্টিপল সদস্য পজিটিভ, আমি সবাই সুস্থ হওয়ার আগে কাজে যেতে চাই না।

গতকাল মেজ মামার নানা–নানির পাশে কবর দেওয়া হয়েছে। সবার ভীষণ মন খারাপ। চলবে...