করোনা টেস্টের সহজলভ্যতায় আমি কৃতজ্ঞ

>করোনাভাইরাসে পাল্টে গেছে জীবনের বাস্তবতা। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। করোনায় জীবন নিয়ে লিখছেন অনেকেই। এই চিকিৎসক ও তাঁর পরিবার করোনায় আক্রান্ত। সে কথাই তিনি লিখছেন। আজ পড়ুন ২১ তম পর্ব।

আজ আমরা সবাই আবার টেস্ট করতে যাব। ছেলেকেও প্রথমবারের মতো টেস্ট করাব। ছেলের বাবা অতটা ভালো ফিল করছে না। চোখমুখ শুকনো, শরীর খারাপ তার ব্যবহারে প্রকাশ পাচ্ছে। আমি অনেক ভালো ফিল করছি যদিও ঘুম ভেঙেছে মাথাব্যথা নিয়ে। তবে এনার্জি অনেকটা ফিরে এসেছে। মেয়েও ভালো ফিল করছে। ওদের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে, একটি শুরু হয়ে গিয়েছে। এসএটি (SAT) নিয়েও কথা বলছে, যেটা করোনার জন্য বারবার পেছাচ্ছে। ভালো লাগছে দেখে যে বিরক্তি, কষ্ট আর অসুস্থতার ধার কমেছে ওর।

ছেলের বাবা টায়ার্ড ফিল করছে, কাজে হয়তো তত মনযোগ দিতে পারছে না আর সব মিলিয়ে যে শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, সেটা তার পছন্দ হচ্ছে না। আমার মনে হয়, আজকের টেস্টে ও স্টিল পজিটিভ থাকবে।

ছেলের তেমন কোনো কমপ্লেন নাই। বলছে মাঝেমধ্যে কাশছে। তবে সেটা তাকে ততটা বদার করছে না। সে জন্যই তার টেস্ট। জানতে চাই যে সে আমাদের অজান্তেই পজিটিভ নয়। তবে পজিটিভ যদি হয়ও, এভাবে থাকলেই আমি খুশি হব। আমার আর একটি ভীষণ অসুস্থ ফ্যামিলি মেম্বার দেখতে ইচ্ছা নাই।

নাশতা করে আমরা টেস্ট সেন্টারে গেলাম, যদিও দুই দিন পর রেজাল্ট পাব, তবু এই যে টেস্টের সহজলভ্যতা, তাতে আমি কৃতজ্ঞ। আশা করছি আমার আর মেয়ের নেগেটিভ রেজাল্ট আসবে! দেখা যাক।

টেস্ট সেন্টারে এটা আমার ছেলের প্রথম এক্সপেরিয়েন্স। আমাদের অবাক করে, ভীষণ দ্রুত সব হয়ে গেল। আমি সবার স্যাম্পল কালেক্ট করে দিলাম। বাবা খুশি নয়, আজ যেহেতু তার শরীর ভালো না, স্যাম্পল দেওয়ার কষ্ট বেশি হয়েছে। ছেলের প্রথম এক্সপেরিয়েন্সও দেখার মতো ছিল। তবে মেয়ে স্যাম্পল দিতে কোনো ফাঁস করেনি। ১০ মিনিটেই বের হয়ে এলাম টেস্ট সেন্টার থেকে।

ফিরেই যেহেতু সবাই মাত্রই নাশতা করেছে, খাবারদাবারের চিন্তা নেই—হাঁটতে যাব ভাবছিলাম। মেয়ে আমাকে দেখে আমার সঙ্গে যেতে রেডি হলো। সেই ড্রাইভ করবে। বলছে, মা যদি রেজাল্ট নেগেটিভ হয়, আমি কিন্তু কাজে ফিরে যাব! আমি জানি বাসায় বসে থাকা আমাদের কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমাকে শ্যাডো করতেও ইচ্ছা তার। এর আগেও করেছে। তবে ও নার্ভাস স্কুলে ফিরে যাওয়া নিয়ে। কিছু কাউন্টি স্কুলে বাচ্চাদের ফিরে যেতে বলছে। ওদের অ্যাটলিস্ট দুই মাস সময় আছে; তত দিন অনলাইন ক্লাস হবে। তারপর হয়তো সপ্তাহে এক দিন স্কুলে যেতে বলবে। তবে এর মাঝেই আমরা অনেক ডেটা পাব, যারা স্কুলে যাচ্ছে, তাদের সংক্রমণ কেমন জানা যাবে, বাচ্চারা কতটা নিয়ম মানছে জানা যাবে, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

এখানে আরেকটি ভালো নিয়ম, প্রতিদিন আমরা স্কুল থেকে মেইল পাই, স্কুলে কী হচ্ছে, কোনো ইনসিডেন্ট হলে তার বিষদ বর্ণনা। বাচ্চারা কেমন করছে, তাদের কোনো টেস্ট আছে কি না, কী ক্লাস, কী পড়া, কী রেজাল্ট ইত্যাদি। তো আমরা সর্বদাই আপটুডেট স্কুল ইনসিডেন্ট এবং বাচ্চাদের ব্যাপারে। আর যেহেতু আমার পেশেন্টদের অনেকেই স্কুলটিচার। আমি কমফোর্টেবল ফিল করি। এসব টিচার খুবই ডেডিকেটেড তাদের কাজের প্রতি। আমি অতটা চিন্তিত নই। অথবা আমার সবকিছুতেই দৃষ্টিভঙ্গি ভীষণ পজিটিভ! সে যা–ই হোক, আজ আমি আমাদের মা–মেয়ের আউটিং এনজয় করছি। অফকোর্স মাস্ক পরে। লাঞ্চ পিক করে খেতে খেতে ঘুরছি, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে।

এর মাঝেই ওদের বাবা ছবি পাঠাল, বিশাল বক্স ভরা দেশি খাবারকে নামিয়ে দিয়ে গেছে আমার বাসায়। মেয়ে ভেবেছে ওর নানা–নানু হয়তো। নানা–নানুর কাজের বাইরে মোটামুটি কোয়ারেন্টিন চলছে। আসলে আমার কিছু কোওয়ার্কার আমি বের হওয়ার আগেই টেকস্ট করেছে, খাবার দিয়ে যাবে! ওরা ইন্ডিয়ান দোকানে গেছে। আমি ওদের না করেছি, ওদের ঝামেলা হবে বলে, তারপরও এত কিছু দিয়ে গেছে! ভালোবাসা পেতে ভালোই লাগে মাঝেমধ্যে।

ডিনার করে বর আমার বাবার বাসায় গেল। এই অসুস্থতার মাঝেও সে আমার বাবাকে তার ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্টে নিয়ে যাবে ভোরবেলায়! বাবা একটু নার্ভাস! বলে দিলাম মাস্ক পরে নিতে। আর ও তো মাস্ক পরেই নেবে। আল্লাহ ভরসা।

এর মাঝে লেবাননে বন্দরের এক্সপ্লোশনে মৃত্যুর টোল বাড়ছে, শত পেরিয়ে গেছে। সঙ্গে আহতের সংখ্যাও তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজারে পৌঁছে গেছে! এদের দেশে মজুত খাবার নাকি আছে মাত্র এক মাসের! সর্বত্র রক্তের ছড়াছড়ি, ভাঙা কাচের টুকরো আর দুমড়ানোমুচড়ানো স্থাপনা এখনো। আশা করি এরা এই অবস্থা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে পারবে।

লেখক
লেখক

এদিকে বাংলাদেশে চলছে বন্যা। ইদানীং একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যায় সর্বত্র! বন্যায় প্রতিবছর যে অর্থনৈতিক ক্ষতি, মানুষের ডিসপ্লেসমেন্ট, শষ্য, ফসলের ক্ষতি! ফলদ গাছ সব পানি জমে মরে যায়! খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই! কী যে এক অবস্থায আমরা! তবে মনে হলো, ফ্লোরিডা ভীষণ নিচু অঞ্চল! আটলান্টিক মহাসাগর এবং গালফ অব মেক্সিকো দিয়ে ঘেরা। সেখানে কোস্টাল ঘর বাড়ি মাটি থেকে বেশ উঁচু করে বানানো হয়! কাঠের পাইলের ওপর তাদের ঘর, ঠিক। যেন মাচার ওপরে ঘর! যেন অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ঘরগুলো তলিয়ে না যায়! বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যা হয়! নিম্নাঞ্চলগুলোয় এ ব্যবস্থা করা গেলে, নিদেনপক্ষে মানুষের থাকার জায়গার অভাব হতো না!

যেটা খুব জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে দেশে মানুষের যত্রতত্র ময়লা, প্লাস্টিক ব্যাগ ফেলে ড্রেনেজ সিস্টেম ব্লক করার কথা। এতটুকু দেশ আমাদের, কোটি কোটি জনসংখ্যা—একজন একজন করে গড়ে এক কোটি লোকও যদি এ কাজটি করে প্রতিদিন, তাহলে কি অবস্থা হতে পারে? আপনি হয়তো নিয়ম মানছেন কিন্তু এই কোটি কোটি জনগণ যদি ভুল করেও নিয়ম না মানে, তার জন্য সবাই ভুক্তভোগী হবেন। চলুন আজ থেকে আমরা আমাদের দায়িত্বটিই পালন করি। সরকার আর কতটা করতে পারবে, যদি আমরা সবাই নিয়ম না মানি? সাফার তো আমরাই করব, পয়সা তো আমাদেরই যাবে! আসুন সচেতন নাগরিক হই! নিজেদের সঙ্গে প্রতিবেশীকেও সচেতন করি! নিদেনপক্ষে নিজেরা সচেতন হই! খাবারের প্যাকেট বা যেকোনো উচ্ছিষ্ট নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন, আর না পেলে, সঙ্গে করে ঘরে নিয়ে গিয়ে নিজ বাসায় যথাযথভাবে ফেলুন। আমি দেশে থাকলেও হয়তো ততটা সচেতন হতাম না, যতটা আজ। বদলাতে তো পারি।

আর একটি জিনিস দেখেছি ইউরোপে। প্রতিটি ব্রিজের নিচে মৃতপ্রায় নদী! এটি আমাদের দেশেও প্রকট! হয়তো আমরা ইউরোপিয়ান গাইডলাইন ফলো করে রাস্তা, ব্রিজ বানায়। তবে বাঁশের মাঝে কীভাবে প্রধান উপকরণ হলো কে জানে! সে যা–ই হোক, প্রকৌশলীদের একটু ভিন্নভাবে ভাবার সময়! আমেরিকা বা কানাডায় কোনো ব্রিজ নদীর নাব্যতা নষ্ট করে না, সবকিছু শুকিয়ে ফেলে না! আবার বলছি, এসব বিষয়ে আমি অভিজ্ঞ নই, যা দেখি তা–ই বলি! তবে আউট অব দ্য বক্স ভাবার সময়। ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে পরিবেশ এবং মানববান্ধব হওয়ার সময়।

মালয়েশিয়া পারলে, আমরাও পারব! আমাদের জনগণই মালয়েশিয়ার উন্নয়নে, মিডিলইস্ট উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে! আমরা অবশ্যই পারি। তবে কেন করি না? চলবে...