আবেগের মূল্য

Passionate cook-এর বাংলা ভাষান্তরের জন্য রীতিমতো গরু খোঁজা, মানে গবেষণা করলাম। অবশেষে বের করলাম ‘প্রগাঢ় রাধক/রাধুনী’৷ প্রবাসে আমি নিজেই সেই প্রগাঢ় রাধক। বাংলাদেশে রেলস্টেশন, রেললাইনসহ রাস্তার পাশের দোকানের গরম গরম ভাপা পিঠা, তার স্বাদ-গন্ধ, কুয়াশাসিক্ত প্রাতঃকালের প্রকৃতি—সে যেন জীবনানন্দ দাশ। এখানে রেললাইন আছে কিন্তু রেললাইনের পাশের সেই ভাপা পিঠার দোকান নেই! নেই হলদে আলোতে সন্ধ্যারাতে বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খাওয়ার ধুম।
শীতের দেশে হিমাঙ্কেরও ২০ ডিগ্রি নিচে ভাপা পিঠার জন্য প্রাণের যে কী আকুতি, আমি ছাড়া কেউ জানে না৷ অভিসন্ধি করে প্রথমে একটা ব্লেন্ডার কিনলাম। চালটা পোলাওয়ের চাল দিয়েই চালিয়ে দিলাম। কিন্তু খেজুরের গুড়? দূরের এক দোকানে বাদামি রঙের চিনি দেখেছিলাম ব্রাজিলিয়ান আখের। তাও কষ্ট করে নিয়ে এলাম নারকেলসহ।
কিন্তু এবার কী হবে? পিঠা বানানোর হাঁড়ি৷ তা কীভাবে সম্ভব? তা হলে কি আর পিঠা খাওয়া হবে না? তৎক্ষণাৎ মনে পড়ল—কড়াই ও পাইরেক্স ঢাকনার কথা। ঢাকনার মাঝখানে ফুটা করে স্ক্রু দিয়ে টোপর লাগানো, যা কিনা অতীতে খুলে গিয়েছিল৷ সেটা আবার কষ্ট করে লাগিয়েছিলাম নেলকাটারের ছোট্ট ছুরি দিয়ে, স্ক্রুড্রাইভারের অভাবে।
অভিপ্রায়ানুসারে তাই করলাম টোপর খুলে৷ উল্টা করে ময়দার খামি দিয়ে ভাপা পিঠার হাঁড়ি বানিয়ে ফেললাম। ক্ষণিক পর পিঠা বানানোর পালা শেষ। প্রথম পিঠাটা আস্ত মুখের ভেতর পুরে দেখি সেই রকম স্বাদ৷ কিন্তু লবণ দেওয়া হয়নি!

(ন্যাশনাল রিসার্চ নিউক্লিয়ার ইউনিভার্সিটির (এমইপিএইচআই) শিক্ষার্থী, অবনিনস্ক, মস্কো)