বাংলাদেশ দল নিয়ে কিছু অনুভূতি

এলান বোর্ডার ফিল্ডে বাংলাদেশ দলের তাঁবু
এলান বোর্ডার ফিল্ডে বাংলাদেশ দলের তাঁবু

দীর্ঘ আট বছরের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাস জীবনে এমন আবেগপ্রবণ ব্যাপার খুব একটা

সাকিবের সঙ্গে লেখক
সাকিবের সঙ্গে লেখক

এসেছে বলে মনে পড়ে না। এ তো মনে হয় কাছ থেকেই দেশকে ছুঁয়ে দেখা। আর এই উপলক্ষটা এনে দিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫, যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে দুই সপ্তাহ আগে। পত্রিকায় যখন দেখলাম তারা ব্রিসবেনে আসছে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করতে, রোমাঞ্চের মাত্রাটা আরও বেড়ে গেল। সঙ্গে যোগ হলো বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচের খবর।
আগেই জানা ছিল, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ খেলা হবে গ্যাবায় ২১ ফেব্রুয়ারি, যার টিকিট কেটে রেখেছিলাম এক বছর আগে, যাতে কোনোভাবেই মিস না হয়। যখন শুনলাম প্রস্তুতি ম্যাচ হচ্ছে ব্রিসবেনে, তখন ভাবলাম এটাও কোনোভাবেই মিস করা যাবে না!
এলান বোর্ডার ফিল্ডে আগে কখনো যাওয়া হয়নি৷ যদিও তার পাশ দিয়ে অনেকবারই গিয়েছি। সবকিছু কনফার্ম হওয়ার জন্য সরাসরি ফোন দিলাম এলান বোর্ডার ফিল্ডের অফিসে। জানলাম, দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ হচ্ছে ৩ ও ৫ ফেব্রুয়ারি এবং খেলা দেখতে কোনো টিকিট লাগবে না!
৫ ফেব্রুয়ারির খেলাটা ১ ফেব্রুয়ারি, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ব্রিসবেনপ্রবাসী অনেক বাংলাদেশি​রই খেলা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাপ্তাহিক কর্মদিবস হওয়ায় একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম, কীভাবে অফিস থেকে সময় বের করা যায়।
সিদ্ধান্ত নিলাম, মাঠে যাওয়া কোনোভাবেই মিস করা যাবে না। সে অনুযায়ী সময়মতো ঠিকই মাঠে গিয়ে উপস্থিত হলাম। গ্রাউন্ডে ঢুকতেই গ্যালারির ঠিক পাশেই দেখলাম খেলোয়াড়দের তাঁবু৷ ইচ্ছে করলেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলা যায়।
এত কাছ থেকে বাংলাদেশ দলকে এর আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। মনে হচ্ছিল, এ তাঁবুটি যেন ব্রিসবেনে মিনি বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে আরও গুটিকয়েক বাংলাদেশি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। একটু পরে দেখা হলো আরও এক পরিচিত বাংলাদেশি মুখ, পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহিম।
বাংলাদেশ দল প্রথমে ব্যাটিং করেছিল৷ মুমিনুল আর মাহমুদউল্লাহর অসাধারণ ব্যাটিং, সঙ্গে সাব্বির রহমানের মারমুখী ব্যাটিং আমাদের যথেষ্টই মুগ্ধ করেছে। যদিও বাংলাদেশ দল আরও ভালো করতে পারত। সাকিব, রুবেল আর তাসকিনের বোলিং দেখার মতোই ছিল।

নাসিরের সঙ্গে লেখক
নাসিরের সঙ্গে লেখক

এলান বোর্ডার মাঠের দুটি স্ট্যান্ড ছাড়া পুরো মাঠটি অনেকটা খোলা। এর সঙ্গে আছে আরও একটি মাঠ, যেখানে সব ধরনের ট্রেনিংয়ের সুবিধা রয়েছে। পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলেন বিভিন্ন খেলোয়াড়, হচ্ছিল হাই হ্যালো।
তবে বাংলাদেশ দলের দু-একজনের ধূমপানের বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। বাংলাদেশের ইউনিফর্ম পরা একজনের হাতে সিগারেট দেখতে কারও কি ভালো লাগে? একজন অ্যাথলেেটের অধূমপায়ী হওয়াটাই কাম্য।
এরই মধ্যে দেখা মিলল বাংলাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন চ্যানেলের রিপোর্টারদের, যারা লাইভ আপডেট দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন ব্রিসবেনের দর্শকেরা হতাশ৷ কিন্তু পিছন থেকেই বাংলাদেশি দর্শকেরা বলছিলেন, ‘আমরা মোটেও হতাশ নই। বাংলাদেশ ভালো, খারাপ যা-ই খেলুক, আমরা আছি সাথে সব সময়।’
এমনিতে বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের গর্ব করার মতো খুব বেিশ জিনিস নেই। ক্রিকেটের কল্যাণে আমাদের যা একটু পরিচিতি হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে। অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকাগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা লেখা দেখা যায় না। তবে মাইকেল ক্লার্ক একটি প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নেওয়ায় বাংলাদেশ দল সম্পর্কে কিছু রিপোর্ট চোখে পড়ল। সাকিব আল হাসানের বিগ ব্যাশে অন্তর্ভুক্তি অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
যথারীতি খেলা শেষ হলো৷ আমাদেরও ফেরার পালা। কিন্তু এত কাছ থেকে পেয়েও খেলোয়াড়দের সঙ্গে একটি ছবি তুলব না, সেটা কী করে হয়। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদকে অনুরোধ করতেই তিনি কয়েকজন খেলোয়াড়কে পাঠালেন টিম মিটিং শেষে। বিজয়, রুবেল, তাইজুল, তাসকিন, আল-আমিন, সাব্বির, সানি সবার সঙ্গে ছবি তোলার পরও অপেক্ষা বড় তারকাদের সঙ্গে ছবি তোলার। অবশেষে দেখা মিলল নাসির, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব আর মাশরাফিদের। শুধু বাংলাদেিশরাই ছবি বা অটোগ্রাফ নিচ্ছেন তা নয়, অনেক অস্ট্রেলিয়ানকেও দেখা গেল সেই তালিকায়। িদ্বতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও একই পুনরাবৃত্তি।
বাংলাদেশ দল ব্রিসবেনে প্রস্তুতি শেষে চলে গেল সিডনি। এরই মধ্যে এক সন্ধ্যায় এলান বোর্ডার ফিল্ডের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম ব্যক্তিগত কাজে। রাতের এলইডি লাইটগুলো মাঠটিকে অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়েছে। কিন্তু মন খারাপ হয়ে গেল মুহূর্তে৷ সবই শূন্য মনে হলো৷ সবই আছে, কিন্তু মিনি বাংলাদেশের লাল-সবুজের তাঁবুটি তো নেই। মনে হলো, সত্যই আমি দেশ থেকে দূরে আছি। দীর্ঘ নিশ্বাসটি একটু ভারীই ছিল। তবে পরক্ষণে এই ভেবে আবার ভালো লাগল যখন মনে হলো, লাল-সবুজের সারথিদের সঙ্গে নিশ্চয়ই আবার দেখা হবে ব্রিসবেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অায়োজিত ডিনার পাটিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
লেখক গবেষণা সহকারী, সুগার রিসার্চ অস্ট্রেলিয়া এবং পিএইচডি অধ্যয়নরত৷ ইউনিভার্সিটি অব কুইনসল্যান্ড, ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া)