দর্পণ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

এক বৃদ্ধ ভিখারির কথা বলি

সত্তরোর্ধ্ব বয়স, হাতে বাঁকা লাঠি
মুখের সব দাঁত পড়ে গেছে
ফাঁকা দুই পাটি।
মুক্তিযুদ্ধের সময়
বুলেটের আঘাতে
বাম হাতের কবজি হারায়।
বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে হাঁটে
কাঁধে তার ছেঁড়া এক ঝুলি
মুখে তার—
‘আল্লারওয়াস্তে ভিক্ষা দেবেন’ বুলি।
সারা দিন এ পথ ও পথ ঘুরে
যে কয় টাকা পায়
ঝুলিতে রাখে পুরে।
একদিন হঠাৎ-
এক ছিনতাইকারী নেশাখোরে
ভিখারিকে ধরে
যা আছে তার ঝুলিতে
তারা দিতে বলে।
ভিখারি অবাক হয়ে
ছিনতাইকারীর দিকে চায়—
দেরি দেখে ছিনতাইকারী
নিজেই ঝুলিতে হাত ঢোকায়,
ছিনতাইকারী ঝুলিতে হাত দিয়ে চমকে ওঠে
পুলিশ এসে ঘিরে ফেলে চিৎকারের চোটে,
ভিখারির ঝুলিতে পুলিশ পায়—
বাংলাদেশের মানচিত্র, বাংলাদেশের পতাকা
আরও পায়—
শুকনো রক্তমাখা একটি শার্ট,
পায় রাইফেলের গুলির একাত্তরটি খোসা
জড়ো হওয়া লোকেরা ভিখারিকে সন্দেহ করে,
গালি দিয়ে বলে হারামজাদা, কুত্তা
ভিখারির চোখ থেকে পানি ঝরে
ভিখারি তার পকেট থেকে
মুক্তিযোদ্ধার সনদ বের করে মেলে ধরে।
ভিখারি একাত্তরের স্মৃতি রোমন্থন করে বলে—
এসব আমার একাত্তরের স্মৃতি
আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

​(লেখক অস্ট্রেলিয়ার সিডনিপ্রবাসী। ইমেইল: [email protected])