আটলান্টায় হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানের সংবর্ধনা

যুক্তরাষ্ট্রের সেবা লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংস্কৃতিসেবী সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান। ছবি: প্রথম আলো
যুক্তরাষ্ট্রের সেবা লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংস্কৃতিসেবী সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের বিশিষ্ট সংস্কৃতিসেবী দম্পতি সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসান ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। সেবা লাইব্রেরি তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এক ঘরোয়া আড্ডায়। আটলান্টার উপশহর নরক্রসে ওই লাইব্রেরিতে বাংলাদেশের প্রবীণ অভিনেতা ও সংগঠক সৈয়দ হাসান ইমাম গত রোববার বিকেলে ঘরভর্তি দর্শক শ্রোতাদের এমন মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন, যে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে গেল, তার খেয়ালই রাখা গেল না।

প্রায় তিন হাজার বাংলা বই নিয়ে গঠিত এই লাইব্রেরি খুব সুপরিসর নয়—চেয়ার পাতলে জনা পঞ্চাশেক বসতে পারে। পাঠাগার ছাড়াও সেবা লাইব্রেরি নিয়মিত ছোট ও বড় করে অনুষ্ঠান করে। রাজনীতি, ধর্ম ও দেশের বিভাজনকে স্বীকার করেন না সেবা লাইব্রেরির উদ্যোক্তারা। এখানে দুই বাংলার মানুষের সানন্দ, স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

সেদিন বিকেলে লাইব্রেরিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। এক সময়ে ঘর উপচে বাইরেও জনা বিশেক লোক গভীর মুগ্ধ আগ্রহে শিল্পী দম্পতির কথা শুনছিলেন। শুনবেন নাই বা কেন? যেমন বর্ণাঢ্য জীবন, তেমন ঐতিহ্যবাহী পরিবার। হাসান ইমামের নানাবাড়ি বর্ধমানে, সেখানেই তার বাল্যকাল ও কলেজজীবন। সেই পরিবারের গুরুজন কেউ যদি বা জওহরলাল নেহরুর ব্যক্তিগত সচিব, অন্য কেউ নেতাজি সুভাষ বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বাড়িতে অনেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত, নানান দল ও মত, তবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমর্থকেরাই দলে ভারী।

আটলান্টার উপশহর নরক্রসে সেবা লাইব্রেরিতে সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানের কথা শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছেন। ছবি: প্রথম আলো
আটলান্টার উপশহর নরক্রসে সেবা লাইব্রেরিতে সৈয়দ হাসান ইমাম ও লায়লা হাসানের কথা শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছেন। ছবি: প্রথম আলো

হাসান ইমাম নিজেও খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন, গান গাইতেন ভালো, অভিনয়তো করেনই। কিশোর বয়সে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংস্থার বর্ধমান শাখার সাধারণ সম্পাদক। চলচ্চিত্র নির্মাণ, অভিনয়—এসবের পাশেও দেশের প্রয়োজনে সব ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নানান বিপন্ন মুহূর্তে, সেই সব নিয়ে আলোচনা করলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক ও সংবাদ পাঠক ছিলেন, স্বাধীনতার পর পেশাগত কাজকর্ম ফেলে বাংলাদেশ চষে বেরিয়েছেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পক্ষে।
লায়লা হাসান দীর্ঘদিন নৃত্যশিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতার কথা বললেন। অকুণ্ঠ চিত্তে হিংস্র সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য গোটা পরিবারকে কি মূল্য দিতে হয়েছে, সে কথা বললেন লায়লা হাসান। একবার হত্যাকারীরা বাড়িতে হাসান ইমামের খোঁজ না পেয়ে তাঁর মাকে শাসিয়ে গেছে, সে রোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ আলী। তিনি পাশের অঙ্গরাজ্য আলাবামার টাস্কেগী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। আগামী সপ্তাহে মহাশ্বেতা দেবীকে নিয়ে স্মরণ সভা হবে এই আমন্ত্রণ জানিয়ে সভা শেষ করে সেবা বাংলা লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ।