স্বপ্ন মেলে ডানা

বিএলআরসির লোগো
বিএলআরসির লোগো

কানাডাবাসীদের দেশের মতো তাদের মনও বিশাল। কানাডাবাসী নিজেদের দেশে পৃথিবীর বহু দেশের বহু ভাষাভাষী মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন, জীবিকা দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন। এখানকার মানুষের মানসিক উদারতায় লাখ লাখ মানুষ বংশ পরম্পরায় কানাডায় মর্যাদার সঙ্গে জীবনধারণ করেছেন। অন্য দেশের, অন্য ধর্মের, অন্য সংস্কৃতির হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের কানাডার অধিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেছেন। আজকের তারিখে কানাডা, আক্ষরিক অর্থেই, বিশ্বের ক্ষুদ্র সংস্করণ।
ভূগোলের হিসেবে বাংলা মুলুক কানাডার থেকে বহুদূরে অবস্থিত—বলতে গেলে পৃথিবীর অপর প্রান্তে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতায় কানাডা ও বাংলা কাছাকাছি। বাংলা ভাষা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও মিষ্টি ভাষা। সম্পূর্ণ এশিয়া মহাদেশের সমস্ত ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষাই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯১৩ সালে বাঙালি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মাধ্যমে। পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি বাঙালির বাস, বাংলা ভাষা স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা, ভারতবর্ষের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা। পৃথিবীর বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলা ভাষা পড়ানো হয়। কানাডায় বাংলা ভাষাভাষীর প্রচুর অবদান।
‘কানাডার বাড়ি, বাংলার বাসা
কানাডার স্বপ্ন, বাংলার আশা

কানাডার গীত, বাংলার ভাষা
কানাডার প্রেম, বাংলার ভালোবাসা।’
বহু বাঙালির বহু বছর ধরে কানাডায় স্থায়ী বসবাস সত্ত্বেও ভাষাগতভাবে বাঙালি ও কানাডাবাসীর মধ্যে একটা শূন্যস্থান রয়ে গেছে। এই শূন্যস্থান পূর্ণ করা এই দুই ভাষাভাষী গোষ্ঠীর সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ প্রয়োজনীয়। সদ্য গঠিত ও কানাডা সরকারের মান্যতাপ্রাপ্ত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (BLRC) এই শূন্যস্থান পূরণ করায় ব্রত নিয়েছে। ​বিএলআরসির ক্ষমতা অল্প, কিন্তু লক্ষ বিরাট। বাংলা পুস্তক প্রকাশ, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ, উৎকৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের ইংরেজিতে অনুবাদ, উৎকৃষ্ট কানাডীয় সাহিত্যের বাংলায় অনুবাদ, সাহিত্য সভার আয়োজন, নতুন শাখার সংস্থাপন, সাহিত্য নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কাজ। আজকের বিএলআরসির এই ছোট পদক্ষেপ ভবিষ্যতের বিশাল যাত্রার দ্যোতক।
আগামী ১২ আগস্ট বিএলআরসির প্রথম অনুষ্ঠান। টরন্টোর ৯ ডজ রোডের কানাডিয়ান লিজিয়ন হলে নান্দনিক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠ-উন্মোচন করা হবে সদ্যপ্রকাশিত পাঁচটি গ্রন্থের। গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে সুজিত কুসুম পাল, আকবর হোসেন, শেখর ই গোমেজ ও এই নিবন্ধকারের লেখা বাংলা গ্রন্থ। এগুলোর একটি সাহিত্য-গবেষণা, একটি মুক্তগদ্য, একটি কাব্যগ্রন্থ ও একটি উপন্যাস। সঙ্গে থাকছে আকবর হোসেন রচিত একটি ইংরেজি গদ্যগ্রন্থও। কানাডার কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে এতগুলো বই প্রকাশ করে বাঙালি পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার এমন নজির বোধ করি এবারই প্রথম।
আনন্দের যে, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, করুণাময় গোস্বামী, অশোক চক্রবর্তী, প্রশান্ত সরকার, গঙ্গা ব্যানার্জী, আজিজুল মালিক, ড. মোজাম্মেল হক খান, ড. সুজিত দত্ত, গোপা চৌধুরী, বেগম সাহারা বাহাউদ্দীন, নীলয় সেন, হাসান গোর্কি, ক খ হাসান, সাদ কামালী, শেখর ই গোমেজ, সুরজিৎ রায় মজুমদার, রেজা অনিরুদ্ধ, আলতাফ হোসেন, সঙ্গীতা ইয়াসমিন, প্যামেলিয়া খালেদ, চয়ন দাস, কাজী জহির উদ্দিন ও সুমু হকসহ বোদ্ধাজন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি বিএলআরসির এমন উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে। অনুষ্ঠানকে সফল করতে এগিয়ে এসেছেন বিপুলসংখ্যক সংস্কৃতি কর্মী।
নিরত কাজ করে চলেছেন আকবর হোসেন, ড. রাখাল সরকার, সুজিত কুসুম পাল, সুব্রত কুমার দাস, দেলওয়ার এলাহী, সুব্রত পুরু ও শিউলী জাহানসহ সাহিত্যকর্মীরা। বয়োজ্যেষ্ঠ একজন সাহিত্যকর্মী হিসেবে আমি বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার তথা বিএলআরসির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি তাদের মহতী উদ্যোগ ক্রমে ক্রমে সফলতার দিকে এগিয়ে যাক।