২৬৩ কোটি মিনিট কলের সুরাহা হয়নি পাঁচ বছরেও

পাঁচ বছরেও সুরাহা হয়নি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) মাধ্যমে দেশে আসা ২৬৩ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কলের। এই ২৬৩ কোটি মিনিট কলের আর্থিক মূল্য ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের সরাসরি পাওনা ৩১০ কোটি টাকা। এই অর্থ উদ্ধারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) পাঁচ বছরেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর হিসেবে ২৬৩ কোটি মিনিট কলের সংরক্ষণ তথ্য বা সিডিআর বিটিসিএলের কাছে থাকার কথা। বিদেশ থেকে আসা আন্তর্জাতিক কলের তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিকে বলা হয় সিডিআর (কল ডিটেইল রেকর্ড)। বিটিসিএলের একটি চক্র কম্পিউটার থেকে সিডিআর মুছে ফেলেছে। যে কারণে সরকারসহ কল আনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাভবান হন শুধু সিডিআর মুছে ফেলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিদেশ থেকে আসা কল থেকে যে আয় হয়, তার ৪০ শতাংশ সরকার, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ মুঠোফোন অপারেটর, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) আর বাকি ২০ শতাংশ আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলো পেয়ে থাকে। এর আগে ২০১২ সালের নিয়মে সরকার ৫২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মুঠোফোন অপারেটর ২০ শতাংশ, আইসিএক্স ১৫ শতাংশ ও আইজিডব্লিউ ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ পেত। সরকারের আর্থিক ক্ষতির হিসাবটি তাই আগের অনুপাতে ধরে করা হয়েছে।
বিটিসিএলের এই অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে মুঠোফোন অপারেটর ও আইসিএক্সের সিডিআরে। বিদেশ থেকে যখন একটি কল আসে, তখন সেটির রেকর্ড আইজিডব্লিউ ছাড়াও মুঠোফোন অপারেটর এবং আইসিএক্সের কাছেও সংরক্ষিত থাকে। তাই বিটিসিএলের কম্পিউটার থেকে ২৬৩ কোটি মিনিট কলের তথ্য মুছে ফেলা হলেও মুঠোফোন অপারেটর এবং আইসিএক্সের কাছে প্রকৃত হিসাব থেকে যায়। মুঠোফোন অপারেটররা বলছে, আয় ভাগাভাগির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই সব পক্ষ সিডিআর সংরক্ষণ করে। সাধারণত দুই পক্ষের সিডিআরে তেমন কোনো পার্থক্যও থাকে না। কিন্তু তথ্য মুছে ফেলায় বিটিসিএলের সিডিআরের সঙ্গে তাদের ২৬৩ কোটি মিনিট কলের ঘাটতি ধরা পড়ে।
এমন অনিয়মের বিষয়ে ২০১৩ সালে বিটিআরসিকে জানায় মুঠোফোন অপারেটররা। অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিটিআরসি ২০১৪ সালে তিন সদস্যের একটি সালিস নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। এরপর বিষয়টি সমাধানে আর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বিটিআরসি। সালিস নিষ্পত্তি কমিটির কাছে জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিটিসিএলের কাছে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের সম্মিলিত বকেয়ার পরিমাণ ২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ১২০ কোটি টাকা, রবি ৭২ কোটি টাকা ও বাংলালিংক ৩৩ কোটি দাবি করেছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনাটি যে সময়ের, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। ঘটনাটি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে সিডিআর দুর্নীতি নিয়ে দুদকের তদন্তে বিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তার নাম উঠে এলেও তাঁদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মীর মোহাম্মদ মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিটিআরসি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।