দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই ভ্যাট বেশি

দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশেই মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের হার সবচেয়ে বেশি। নতুন মূসক আইনে সব ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হবে। মূসক হার একটিই। কিন্তু এই হার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

ভারতে মূসক হার সাড়ে ১২ শতাংশ। তবে কিছু রাজ্যে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বা সেবায় ১৫ শতাংশ গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) দিতে হয়। এই জিএসটি আরোপের ক্ষমতা ওই রাজ্য সরকারের।

১৩ শতাংশ মূসক দেন নেপালের নাগরিকেরা। অন্যদিকে আফগানিস্তানে মূসক হার একাধিক। ওই দেশের পণ্য ও সেবাভেদে ২ থেকে ১০ শতাংশ মূসক দিতে হয়। পাকিস্তানে ১৭ শতাংশ হার হলেও বিদ্যুৎ বিল, চিনি, ট্রাক্টর, ক্রীড়াসামগ্রী, চামড়া, বস্ত্রসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় রেয়াতি হারে মূসক আরোপ হয়। যেমন ২০ হাজার রুপির কম বিদ্যুৎ বিল হলে ৫ শতাংশ হারে মূসক বসে। একই অবস্থা শ্রীলঙ্কায়। সেখানে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ হলেও কিছু ক্ষেত্রে শূন্য হার প্রযোজ্য।

মালদ্বীপ ও ভুটানে মূসক না থাকলেও গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) আছে। মালদ্বীপে সব ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ এবং পর্যটন খাতে ১২ শতাংশ জিএসটি আরোপ হয়। ভুটানে খুব সীমিত পরিসরে ৫০ শতাংশ জিএসটি আরোপ হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিযোগী অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে ১০ শতাংশ হারে মূসক বসে। সারা বিশ্বের দেড় শর বেশি দেশে মূসক ও জিএসটি আছে। ৫৮টি দেশে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হারে মূসক দিতে হয়। তবে ওই সব দেশের বেশির ভাগই উন্নত দেশ; যেখানে আধুনিক ও উন্নত হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনেই নতুন এই মূসক আইন তৈরি করা হয়। ২০০০ সালের পর থেকেই তারা ১৯৯১ সালের মূসক আইন সংস্কারের তাগিদ দিয়ে আসছিল। এরপর ২০০৭ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আইএমএফের একটি মিশন এখানে আসে। তবে সে সময় আইএমএফের সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি।

ওই সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে আমরা আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে বলেছিলাম, মূসক আইন অত্যন্ত জটিল। যেহেতু মূসক একটি হিসাবভিত্তিক কর। তাই সব পর্যায়ে হিসাব রাখার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। হিসাব রাখার সক্ষমতা না বাড়িয়ে একটি নতুন আধুনিক মূসক আইন করা ঠিক হবে না।’

এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার আসার পর আইএমএফ নতুন মূসক আইন করার বিষয়ে আবারও তাগিদ দেয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশকে বর্ধিত ঋণ সহায়তার (ইসিএফ) প্রায় ১০০ কোটি ডলার অনুমোদন করে আইএমএফ। এই ঋণ পাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল নতুন মূসক আইন করা। এই ঋণের প্রথম কিস্তির আগেই নতুন আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মূসক আইনটি তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার আগে জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। আইনটি বাস্তবায়নে সার্বিক প্রস্তুতির জন্য ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় পায় এনবিআর। পরে অবশ্য আরও এক বছর বাড়ানো হয়। ফলে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে এই আইনের বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে।