এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন

জাপানের ইয়োকোহামায় এডিবির ৫০তম বার্ষিক সম্মেলনের এক অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও l ছবি: এএফপি
জাপানের ইয়োকোহামায় এডিবির ৫০তম বার্ষিক সম্মেলনের এক অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও l ছবি: এএফপি

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সম্মেলনের শেষ দিনে প্রশংসা করা হলো বাংলাদেশের। গতকাল রোববার সকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক হুন কিম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আগামী দিনে দেশটির আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশকে দেওয়া এডিবির ঋণের পরিমাণ এখন ১০০ কোটি ডলার উল্লেখ করে হুন কিম বলেন, উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে অতিরিক্ত বিনিয়োগ দেশটির প্রয়োজন হওয়ায় এই সংখ্যা খুব সহজেই ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান আরও উল্লেখ করেন, নীতিনির্ধারণের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে আছে এবং অর্থনীতি দ্রুত গতিতে সামনে এগিয়ে চলায় দেশটি এখন অতীতের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দেশ।
তবে হুন কিম উল্লেখ করেন, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে দীর্ঘ মেয়াদে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে নীতি বাস্তবায়ন সামর্থ্য উন্নত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা পূর্ব এশিয়ার মডেল অনুসরণ করছে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দিকটি হলো, পূর্ব এশিয়ায় দক্ষ শ্রমশক্তির ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও বাংলাদেশে এর ঘাটতি এখনো যথেষ্ট মাত্রায়।
জাপানের ইয়োকোহামা শহরে এডিবির পঞ্চাশতম বার্ষিক সম্মেলন গতকাল শেষ হয়েছে। বিকেলে সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে চার দিন ধরে চলা সম্মেলনের অর্জন এবং সংস্থার জন্য এতে দেখিয়ে দেওয়া দিকনির্দেশনার ওপর আলোকপাত করে সমাবেশের সমাপ্তি টেনেছেন এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি পরিচালনা পরিষদের মূল বৈঠক ও প্রতিদিন অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনারে যেসব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়, তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এডিবির প্রেসিডেন্ট বলেন, সম্মেলনে বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি, অর্থনীতি নিয়ে দেখা দেওয়া উদ্বেগ এবং সংরক্ষণবাদের হুমকিসহ নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বিশেষ করে এশিয়ার অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এডিবি কী করতে পারে, তার ওপর আলোকপাত করা হয়।
এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও এশিয়ার অবকাঠামো চাহিদার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই খাতে দেখা দেওয়া তহবিল ঘাটতি সামাল দিতে চীনের নেতৃত্বাধীন এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংকের (এআইআইবি) পাশাপাশি অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণকে এডিবি উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া বেসামরিক খাতের অবকাঠামো ব্যবসায় এগিয়ে আসায় সহায়তা করতে তিনি সদস্যরাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানান। অবকাঠামো খাতে আগামী বছরগুলোতে এশিয়ার দেশগুলোর গড়ে যে বার্ষিক ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে, এডিবি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অন্য ঋণদাতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেও বিশাল অঙ্কের সেই তহবিল জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। জাপানের দৃষ্টান্ত এই ক্ষেত্রে অনুকরণযোগ্য হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাপানে সরকার সড়ক ও রেল পরিবহন এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের মতো খাতগুলোতে বেসরকারি ব্যবসার প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।
সবশেষে এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও বলেন, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অবকাঠামো খাতে বেসরকারি উদ্যোগের এগিয়ে আসাকে উৎসাহিত করা হলে অবকাঠামো চাহিদায় তহবিলের ঘাটতি পূরণ করা আংশিকভাবে সম্ভব হবে।
সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এডিবির বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন আগামী বছর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত হবে এবং ২০১৯ সালের সম্মেলনের জন্য স্বাগতিক দেশ হিসেবে ফিজিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।