গয়নার বাজারেও ভারতীয় ভিসার প্রভাবের কথা

গয়নায় পুঁতি পাথর ও ডায়মন্ড কাট নকশার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজার খারাপ। ছবি: সাইফুল ইসলাম
গয়নায় পুঁতি পাথর ও ডায়মন্ড কাট নকশার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজার খারাপ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তাবাসসুম আমিন কয়েকটি লম্বা লকেট পরে দেখছিলেন। কিন্তু গাউনের সঙ্গে ঠিক কোনটা যাবে, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় আছেন। না কিনেই ধানমন্ডির একটি শপিং মল থেকে বের হয়ে গেলেন। এসব গয়নার বিক্রেতারা বলছেন গয়নার বাজার খারাপ। তাঁরা এর জন্য ভারতীয় ভিসার সহজলভ্যতাকেই মূল কারণ বলছেন। তবে দেশীয় ব্র্যান্ডের দোকানে ভিন্ন চিত্র।

রোজার আজ ২০ দিন। ধানমন্ডির জেনেটিক প্লাজার গয়নার দোকানগুলোয় ঢিমেতালে বেচাকেনা চলছে। ‘হেনা জুয়েলারি’তে ঈদের শুরুতেই নতুন গয়না আনা হয়েছে। ব্যবস্থাপক ইয়াকুব শরীফ বলেন, ‘আমাদের গয়না সব ইন্ডিয়া থেকে আসে। কিন্তু এবার আমাদের কাস্টমাররা ইন্ডিয়া গিয়ে কিনে আনছেন। গতবার থেকেই এ অবস্থা শুরু হইছে। এবার আরও বেশি বাড়ছে।’
তবে কোন ধাঁচের গয়না চলছে, জানতে চাইলে এই দোকানি বললেন, গোল্ড প্লেটের ওপর সাধারণ নকশার ছোট ছোট গয়নার চাহিদা বেশি। গয়নার সেট তেমন চলছে না। এ মার্কেটের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেল, গয়নায় ডায়মন্ড কাট নকশার আধিপত্য বেশি। এ ছাড়া চওড়া বেঙ্গল ও চুড় চলছে বেশ। ‘এফজি জুয়েলারি’র বিক্রেতা মাহমুদ লিমন বলেন, এবার একটু আকারে বড় নকশার গয়নার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তাঁদের দোকানে হাতের আংটি, বেঙ্গল, কানের দুল—সবকিছুতেই ভারী ও বড় আকারের গয়না শোভা পাচ্ছে। লম্বা লকেটের চাহিদা এবারও। তবে নানান রঙের পাথর ও পার্ল দিয়ে এবার ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছেন গয়না বিক্রেতারা।

গয়নায় পুঁতি পাথর ও ডায়মন্ড কাট নকশার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজার খারাপ। ছবি: সাইফুল ইসলাম
গয়নায় পুঁতি পাথর ও ডায়মন্ড কাট নকশার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজার খারাপ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তানিশা হক গয়না খুব একটা পড়েন না। কিন্তু ঈদে তাঁর গয়না চাই। ধানমন্ডির মেট্রো শপিং মলে এসেছেন গয়না কিনতে। তিনি বলেন, গয়নার প্রতি আকর্ষণ কম। কিন্তু নতুন ড্রেসের সঙ্গে অন্তত একটি দুল তো পরতেই হবে। স্টোন বসানো ঝুমকো টাইপ দুল কিনব।’
এ শপিং মলে ‘কে জেড’ নামের দোকানটিতে ক্রেতাদের সমাগম দেখা গেল। তবে এখানেও সেট গয়নার চাহিদা নেই। দোকানের ব্যবস্থাপক আলিফ হোসাইন বলেন, ‘গোল্ড কালারের চেয়ে সাদা বা কালারফুল গয়না চলছে বেশি।’ এখানেও বাজার খারাপের করুণ সুর।
এবার ঈদের বাজারে ক্রেতা কম হওয়ার কারণ হিসেবে শাড়িসহ অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ভিসা সহজ করে দেওয়াকেই মনে করছেন।
বসুন্ধরা সিটির ‘এপি গ্যালারি’তে গয়নার চেয়ে ঘড়ি বা ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে বেশি। দুজন ক্রেতা ঘড়ি পছন্দ করে কিনলেন। গয়নার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই একজন বললেন, লাগবে না। এ দোকানের বিক্রেতা ফারজানা আক্তার হতাশ হয়ে বলেন, ‘সবাই একই কথা বলে, অর্নামেন্টস লাগবে না। তাঁরা ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসে। গতবার পাঁচ রোজার পরেই টুকটাক বেচা শুরু হয়। এবার তো ২০ রোজা হয়ে গেল, কাস্টমার নাই।’ এ শপিং মলের আরও কয়েকজন বিক্রেতাও দুষলেন ভারতীয় ভিসা সহজ হয়ে যাওয়াকে। এ ছাড়া বলছেন, অনলাইন শপ ও বিভিন্ন মেলার কারণে তাঁদের কেনাকাটায় ভাটা পড়েছে।

গয়নায় পুঁতি পাথর ও ডায়মন্ড কাট নকশার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজার খারাপ। ছবি: সাইফুল ইসলাম
গয়নায় পুঁতি পাথর ও ডায়মন্ড কাট নকশার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এবার বাজার খারাপ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

নিউমার্কেট ও গাউছিয়ার গয়নার দোকানগুলো ফাঁকা। নিমন্ত্রণ জুয়েলার্সের আবদুল করিম বলেন, ঈদের বাজারে তাঁদের দোকান খুব একটি জমে না। তবুও কিছু বেচাকেনা হয়। কিন্তু এবার কিছুই হয়নি। কারণ হিসেবে স্বর্ণের বাজারের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কথা বলেন।
তবে দেশীয় ব্র্যান্ডের দোকানগুলোয় গয়না ভালোই চলছে। আড়ং, রঙ, মাদুলি, প্রবর্তনা, অঞ্জনসসহ বিভিন্ন দেশীয় ব্র্যান্ডের দোকানে ব্যতিক্রমী নকশার খোঁজে ছুটছেন ক্রেতারা। রুপা, এন্টিক, সুতা, কাপড়, কাঠ, পুঁতি, পিতল বা ধাতব দিয়ে বানানো নকশা পাওয়া যাবে এসব জায়গায়। দেশী দশের রঙে গয়নার চাহিদা বেশ। পিউ রহমান বরাবরই রঙ থেকে গয়না কেনেন। এদের কানের দুল ও লকেট তাঁর খুব পছন্দের।
দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো গয়না বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও অন্যরা বলছেন, ব্যবসা নিয়ে তাঁরা চিন্তায় পড়ে গেছেন। সবাই বলছেন, ভারতীয় ভিসার সহজলভ্যতাই এর জন্য দায়ী।