আমদানি ও রাজস্ব দেওয়ার শীর্ষে আবুল খায়ের গ্রুপ

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিবছর  ২০ হাজারের মতো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি করছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য আমদানির পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের আবুল খায়ের গ্রুপ। পণ্য আমদানিতে রাজস্ব প্রদানেও শীর্ষে উঠে এসেছে এই শিল্পগ্রুপের নাম।

গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সমুদ্রপথে আমদানি পণ্যের ৯৩ শতাংশ এই বন্দর দিয়ে আনা হয়। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা সমুদ্রপথে পণ্য আমদানিতে এই বন্দরের ওপর নির্ভর করেন।

আমদানি তথ্য অনুযায়ী, বন্দর দিয়ে বছরে ৪ হাজার ৬৭১ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি হয়। তবে ১ হাজার টনের বেশি আমদানি হয় এমন পণ্যের সংখ্যা ৯০০টি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে শুল্কায়ন করে খালাস নেওয়া হয়েছে ৬ কোটি ১ লাখ টন। পণ্য আমদানিসহ বিভিন্ন খাত থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

বন্দর দিয়ে কনটেইনারে আমদানি হওয়া পণ্যের কিছু অংশ ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে খালাস হয়। তবে তা পরিমাণে খুবই কম।

কাস্টমসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে বন্দর থেকে খালাস হওয়া আমদানি পণ্যের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এনেছে চট্টগ্রামের আবুল খায়ের গ্রুপ। এর পরিমাণ প্রায় ৫৩ লাখ টন। এই পণ্য আমদানিতে আবুল খায়ের গ্রুপ শুধু শুল্ক বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। প্রায় ৭ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত অর্থবছরে বন্দরে শুল্কায়ন শেষে খালাস নেওয়া হয় ৬ কোটি ১ লাখ টন পণ্য, এতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা

গ্রুপটি ইস্পাত খাতে বড় বিনিয়োগে বিলেট তৈরির কারখানা করেছে। এই কারখানার কাঁচামাল পুরোটাই আমদানি করতে হয়। ইস্পাত ছাড়াও আমদানিনির্ভর সিমেন্ট, সিরামিক, গুঁড়া দুধ, ভোগ্যপণ্য ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবসা রয়েছে গ্রুপটির।

বেসরকারি খাতে পণ্য আমদানিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে প্রায় ২৪ লাখ টন পণ্য আমদানি করে ৬৩৮ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। গ্রুপটির আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেল, চিনি, সিমেন্ট, দুগ্ধজাত পণ্যসহ বহুমুখী ব্যবসা রয়েছে।

তৃতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব দাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রামের টিকে গ্রুপের নাম। প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন পণ্য আমদানি করে ৬৩০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। টিকে গ্রুপ মূলত ভোজ্যতেল আমদানিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। গ্রুপটি আমদানিনির্ভর ইস্পাত পণ্য তৈরিসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা রয়েছে।

চতুর্থ রাজস্ব প্রদানকারীর তালিকায় আছে উত্তরা গ্রুপের নাম। এই গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান গত অর্থবছরে কাস্টম হাউসে রাজস্ব দিয়েছে ৫৯৪ কোটি টাকা। এরপরই আছে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নাম। প্রতিষ্ঠানটি ৫৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব দিয়েছে গত অর্থবছরে। আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেল, চিনি, ঢেউটিন, সিমেন্ট খাতের কাঁচামাল আমদানিতে এই রাজস্ব দিয়েছে।

এ ছাড়া রাজস্ব প্রদানে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিটি গ্রুপ, আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড, বিএসআরএম গ্রুপ, টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড, মেনোকা মোটরস লিমিটেড, সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম রয়েছে।

সরকারি খাতে রাজস্ব প্রদানে এগিয়ে আছে জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলো। এককভাবে মেঘনা পেট্রোলিয়াম রাজস্ব দিয়েছে ১ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পদ্মা অয়েল কোম্পানি ১ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, যমুনা অয়েল কোম্পানি ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি ৮৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১২টি প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানিতে রাজস্ব দিয়েছে ৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমের যুগ্ম কমিশনার মো. রইচ উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর বাবদ এই রাজস্ব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বছরে কম-বেশি ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি করে।

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এই রাজস্ব শুধু পণ্য আমদানিতে শুল্ক-করবাবদ দেওয়া হয়েছে। গ্রুপটির শিল্পকারখানার পণ্য উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, ভোজ্যতেলসহ ভোগ্যপণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।