পেঁয়াজের বাজার অস্থির, প্রতিদিনই বাড়ছে দাম

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। রাজধানীর পাইকারি বাজারে গতকাল বুধবার এক দিনেই ভারতীয় পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দর ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামেও প্রতিদিন দাম ২-৩ টাকা করে বাড়ছে।

বাড়তে বাড়তে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৫৫ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে। সপ্তাহ দুয়েক আগেও দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক মাসে পেঁয়াজের দাম ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।

ঢাকার পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের একজন ব্যবসায়ী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার
সেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩৬-৩৮ টাকা ছিল, গতকাল তা ৪৫-৪৮ টাকায় ওঠে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে উঠেছে ৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। ভারত বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যটি আমদানি শুরু করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

চট্টগ্রামে চার দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। পাইকারি বাজারে গত সপ্তাহ থেকে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। গত সপ্তাহ শেষে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৭ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। গত রোববার থেকে প্রতিদিন দু-তিন টাকা করে বাড়ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়ার বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রোববার পাইকারি বাজারটিতে ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হয়েছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। পরদিন সোমবার ৩৬-৩৮ টাকা, মঙ্গলবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং গতকাল বুধবার ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হয়। অবশ্য অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪২-৪৫ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে গতকাল।

পেঁয়াজসহ কাঁচা পণ্যের বাজারে বিপণন পদ্ধতি অন্য পণ্যের চেয়ে আলাদা। আমদানিকারকেরা আড়তদারদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য পাঠান। পরে আমদানিকারকদের দরে আড়তদারেরা তা বিক্রি করেন। আড়তদারেরা শুধু কমিশন পান।

হামিদুল্লাহ মিয়ার বাজারে আড়তদারি প্রতিষ্ঠান ইরা ট্রেডার্সের পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজের বাজার ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভারতে দাম বাড়ায় পাইকারি বাজারে প্রতিদিন দু-তিন টাকা করে বাড়ছে।

বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা আছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা মূলত ভারত থেকে আমদানি হয়। ভারতে পেঁয়াজের দর বাড়লে পাকিস্তান, চীনসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিবার বেশ কিছু পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। এবারও সেই চেষ্টা চলছে।

ঈদুল আজহার আগে আগে দেশে পৌঁছানোর নিশ্চয়তা পেলে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে জটের কারণে হয়তো খুব দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি করে আনা যাবে না। এরপরও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চিন্তাভাবনা চলছে।

এদিকে ঈদের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা ডেকেছে।