ক্রেডিট কার্ড বিলাসবহুল পণ্য না, এটা প্রয়োজনীয়

নুরুল হক মানিক
নুরুল হক মানিক
ব্যাংক বাদে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একমাত্র লংকাবাংলা ফাইন্যান্সই দিচ্ছে ক্রেডিট কার্ড সেবা। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ৭০ হাজার কার্ড গ্রাহক। ক্রেডিট কার্ড সেবা ও লংকা বাংলার কার্ড ব্যবসা নিয়ে প্রথমআলোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির কার্ড বিভাগের প্রধান নুরুল হক মানিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব

প্রথম আলো: ব্যাংক না হয়েও কেন ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা শুরু করল লংকা বাংলা ফাইন্যান্স?

নুরুল হক মানিক: লংকা বাংলা যখন কার্ডের ব্যবসা শুরু করে, তখন ব্যাংকগুলোর মধ্যে কার্ড ব্যবসার তেমন উৎসাহ ছিল না। ওই সময়ে বর্তমানের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ন্যাশনাল ব্যাংক সবে কার্ড চালু করেছে। ১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে ভানিক (বর্তমানে লংকা বাংলা) এই সুযোগ গ্রহণ করে ক্রেডিট কার্ড চালু করে। ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে, এমন আশাতেই তখন উদীয়মান ব্যবসা হিসেবে সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়, নিজস্ব পিওএস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কার্ড ব্যবসা চালু করে।

প্রথম আলো: ব্যাংক না হওয়ায় ব্যবসায় কি কিছুটা সুবিধা পাওয়া গেছে, না সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে?

নুরুল হক: ব্যাংক না হওয়ায় কার্ড ব্যবসায় আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেহেতু আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তাই ব্যাংকের মতো নিজস্ব শাখায় নগদ টাকা জমা নেওয়ার সুযোগ নেই। গ্রাহকদের টাকা জমা নেব কীভাবে, এটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় কার্ড সেবাও দিতে পারছি না, যা এখনো বিদ্যমান। এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই আমরা আজ এ পর্যায়ে এসেছি। তবে বৈদেশিক মুদ্রায় কার্ড সেবার জন্য আমরা কাজ করছি। আশা করছি, দ্রুতই আমাদের গ্রাহকদের এই সেবা দিতে পারব। কার্ডের টাকা জমা দেওয়ার জন্য আমাদের ৬টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি আছে। তবে অন্য সব সেবা আমাদের শাখা থেকে এবং ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টারের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ ছিল, এরপরও সফলভাবে মোকাবিলা করেই প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছি। ক্রেডিট কার্ড মার্কেটেও নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রথম আলো: কারা ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক হবেন, কাদের গ্রাহক বানানোর চেষ্টা করছে লংকা বাংলা?

নুরুল হক: একটা সময় উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত লোকেরাই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিলেন। এখন ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফ স্টাইল পণ্য। যাঁরা মাসে ২০ হাজার বা একটু বেশি আয় করছেন, তাঁরাও এখন কার্ড নিচ্ছেন। আমরা লংকা বাংলা থেকে এখন নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকদের এই সেবার আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এর মাধ্যমে জীবনের মানে একটু হলেও উন্নতি ঘটাতে পারছে। আপনি নতুন বাসা নিয়েছেন, একটা ফ্রিজ প্রয়োজন। হয়তো এ মুহূর্তে বেতন দিয়ে সেটা কেনা সম্ভব হচ্ছে না, তখন ক্রেডিট কার্ড আপনাকে সহায়তা করতে পারে। পরে মাসিক কিস্তিতে শোধ করে দিলেন। এত তাৎক্ষণিক অর্থ এবং সহজে পরিশোধের সুবিধা অন্য কোনো সেবায় পাওয়া যাবে না। যেকোনো ধরনের তাৎক্ষণিক কেনাকাটার জনও কার্ডটি প্রয়োজন। এ জন্য ক্রেডিট কার্ড এখন আর কোনো বিলাসবহুল পণ্য না, এটা প্রয়োজনীয়। হ্যাঁ, কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এ জন্য বাজার সেভাবে বাড়ছে না। তবে আমরা কার্ড ইস্যুয়াররা কাজ করছি, আশা করছি বাজার দ্রুতই প্রসার ঘটবে। একটা সময় জাতীয় পরিচয়পত্র, টিন সার্টিফিকেট আমরা যাচাই করতে পারতাম না, এখন সম্ভব হচ্ছে। এসব নতুন সুবিধা এই মার্কেটকে বড় করতে সহায়তা করছে।

প্রথম আলো: ক্রেডিট কার্ডে সুদ হার অনেক বেশি। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে একটা ভীতি আছে?

নুরুল হক: স্বাভাবিকভাবে অন্য সেবার মতো না ক্রেডিট কার্ড। এ কার্ড থেকে যে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, এটা কিন্তু ব্যয়বহুল। সারা পৃথিবীতে অন্য আর্থিক সেবার চেয়ে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেশি। এটা একটি ২৪ ঘণ্টা, ৩৬৫ দিনের সেবা, তাই বেশি লোক ব্যবহার হয়। অনেক উন্নত প্রযুক্তি এখানে ব্যবহার করতে হয় যা খরচসাপেক্ষ। আর বছরব্যাপী বিভিন্ন প্রমোশনাল অফার তো রয়েছেই। ক্রেডিট কার্ডকে সুদ দিয়ে দেখলে হবে না। সবাই তো সুদ গুনছে না। একসময় সিআইবি, টিন সার্টিফিকেট অনলাইনে দেখার সুযোগ ছিল না। কার্ডে ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল। এসব বিবেচনায় সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে। হ্যাঁ, এখন এটা কমানোর সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নির্দেশনা দিয়েছে। সুদ কমে আসবে।

প্রথম আলো: গ্রাহকদের কী পরামর্শ দেবেন?

নুরুল হক: ক্রেডিট কার্ডে দেনা হিসাব কিন্তু কঠিন না। যখন কেউ কার্ড নেবেন, তাঁর জানা উচিত ব্যবহারের সীমা কত, স্টেটমেন্ট কবে পাওয়া যাবে, পরিশোধের তারিখ কবে। স্টেটমেন্ট পাওয়ার পর গ্রাহক চাইলে পুরো টাকা শোধ করে দিতে পারেন। তাহলে কোনো সুদ গুনতে হবে না। সম্পূর্ণ না দিয়ে কিছু অংশ পরিশোধ করলে বাকি অংশের ওপর সুদ দিতে হবে। এটা ঘোষণা দেওয়া থাকে।