যেভাবে যাত্রা শুরু ক্রেডিট কার্ডের

এমন দিন হয়তো আসবে, যখন নগদ অর্থের লেনদেনকে অচল করে দেবে প্লাস্টিক কার্ড
এমন দিন হয়তো আসবে, যখন নগদ অর্থের লেনদেনকে অচল করে দেবে প্লাস্টিক কার্ড

১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি রেস্তোরাঁয় নৈশভোজ করতে গিয়েছিলেন ফ্রাঙ্ক ম্যাকনামারা নামে সেই দেশের এক ব্যবসায়ী। কিন্তু খাওয়াদাওয়ার পর বিল পরিশোধের সময় ভদ্রলোক বুঝতে পারলেন যে ভুল করে ওয়ালেট বা মানিব্যাগ আনেননি। তখন তিনি খাবারের বিল পরে পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতিতে রেস্তোরাঁটির সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে এমন কথাও প্রচলিত আছে, ম্যাকনামারা তাঁর স্ত্রীকে কিছু নগদ অর্থ নিয়ে রেস্তোরাঁয় আসতে বলেছিলেন।

বিব্রতকর এই অভিজ্ঞতা থেকেই ম্যাকনামারার মাথায় এল নগদ অর্থ ছাড়া কীভাবে বিল পরিশোধ করা যায়। ব্যস, একটি আইডিয়া মানে ধারণা খেলে গেল তাঁর মাথায়—কার্ডের মাধ্যমে তো কাজটি করা যেতে পারে। ম্যাকনামারা ১৯৫০ সালে রালফ স্নেইডার নামে আরেকজনকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন প্রথম ক্রেডিট কার্ড ‘দ্য ডাইনারস ক্লাব’। এই কোম্পানি চালুর অন্যতম মূলমন্ত্র ছিল, ‘এখন চুক্তি সই, পরে বিল পরিশোধ’। সে আলোকে নিউইয়র্ক শহরের ২৭টি রেস্তোরাঁর সঙ্গে চুক্তি হলো ম্যাকনামারার। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত মিলিয়ে ২০০ ব্যক্তি ডাইনারস ক্লাবের সদস্য হলেন। এরপর সদস্যরা চুক্তিবদ্ধ রেস্তোরাঁগুলোতে আগে খেয়ে পরে বিল দিতেন।

ডাইনারস ক্লাব বার্ষিক ৩ ডলার ফির বিনিময়ে সদস্যপদ দিত এবং রেস্তোরাঁর কাছ থেকে প্রতিটি বিলের বিপরীতে ৭ শতাংশ ফি নিত। এটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম বছরেই এর সদস্যসংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৯৫৩ সালের দিকে এটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে এবং কানাডা, কিউবা ও ফ্রান্সে শাখা খোলে।

নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবর অনুযায়ী, প্রায় একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমিংডেল ডিপার্টমেন্ট স্টোরের প্রতিষ্ঠাতার নাতি আলফ্রেড ব্লুমিংডেল লস অ্যাঞ্জেলেসে করেন ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা ‘সাইন অ্যান্ড ডাইন’।

এরই মধ্যে আলফ্রেড ব্লুমিংডেল তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে নিউইয়র্কে ‘দ্য ডাইনারস ক্লাব’ নামে একটি কোম্পানি চালুর সংবাদ জানতে পারেন। এরপর তিনি ডাইনারস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক ম্যাকনামারা ও স্নেইডারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকের ফলশ্রুতিতে ডাইনারস ক্লাব ও সাইন অ্যান্ড ডাইন একীভূত হয়ে নতুন কোম্পানি গঠিত হয়।

এর আগে ১৯২০ সালের দিকে ডিপার্টমেন্ট স্টোর ও তেল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের জন্য ‘কার্টিসি কার্ড’ চালু করেছিল।

আলফ্রেড ব্লুমিংডেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, একদিন ক্রেডিট কার্ড নগদ অর্থের লেনদেনের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তিনি বলেছিলেন, ‘এমন এক দিন আসবে, যখন নগদ অর্থের লেনদেনকে অচল করে দেবে প্লাস্টিক কার্ড।’

১৯৫৮ সালে ক্রেডিট কার্ড চালু করে ব্যাংক অব আমেরিকা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা ও ব্যবহার।

আলফ্রেড ব্লুমিংডেল, ফ্রাঙ্ক ম্যাকনামারা ও স্নেইডার যে চিন্তাভাবনায় নিজেদের সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন তো সারা বিশ্বেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন চলছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব বোস্টনের এক জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৭২ শতাংশ ভোক্তাই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা বা লেনদেন করে থাকেন। আর এবিসি নিউজের মতে, ৭৫ শতাংশ আমেরিকান অন্তত একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার ও নার্ডওয়ালেট