তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে টেকনোলজি পার্ক

পার্ক সূত্রে জানা গেছে, এই সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে খুলনা বিভাগের নবীন উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতের অন্যান্য দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। পার্কটিতে মূলত সফটওয়্যার উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং/আউটসোর্সিং, কল সেন্টার, তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা গবেষণা ও উন্নয়নসহ (আরঅ্যান্ডডি) বিভিন্ন ধরনের কাজ হবে।

জানতে চাইলে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে জানান, এই পার্কে দেশি-বিদেশি মোট ৪০টি আইটি কোম্পানিকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে আরও ১৫টিকে বাছাই করে রাখা হয়েছে। এসব কোম্পানিকে পর্যায়ক্রমে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল রোববার তাঁর নামে তৈরি এ পার্কের উদ্বোধন করবেন।

এরই মধ্যে সরেজমিনে দেখা গেছে, টেকনোলজি পার্কটিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। চারটি কোম্পানি কম্পিউটার বসিয়ে কাজ শুরু করেছে। আরও কয়েকটি কোম্পানি বরাদ্দ পাওয়া জায়গায় সাজসজ্জার কাজ করছে।

কাজ শুরু করা অনইয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহিন আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সফটওয়্যার, গেমস ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫৩ জন কর্মী আমাদের কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। তবে ২০১৮ সালে দুই হাজার এবং ২০২২ সাল নাগাদ আমাদের প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণীর কাজের সৃষ্টি হবে।’

এদিকে পার্কের উদ্বোধন উপলক্ষে যশোর জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে গত বুধবার প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার গণভবন থেকে রোববার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পার্কের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এদিন বেলা ১১টায় পার্ক মিলনায়তনে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে যশোরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন।

প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন সভাপতিত্ব করেন। এতে বিদ্যুৎ, টেলিফোন বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।

গত ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে একটি বিশ্বমানের আইটি পার্ক স্থাপনের ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যশোরের বেজপাড়া শংকরপুর এলাকায় আইটি পার্কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

প্রকল্পের সার্ভে প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পার্কে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ রয়েছে ১৫ তলাবিশিষ্ট মূল ভবন, ফাইভ স্টার বা পাঁচ তারকা মানের ১২ তলা আবাসিক ভবন। রয়েছে অত্যাধুনিক কনভেনশন সেন্টারের সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের বন্দোবস্ত। বিদেশি উদ্যোক্তাদের চাহিদা বিবেচনা করে আবাসন ভবনের গোটা ১১ তলাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের জিম। আর সব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ভূমিকম্প প্রতিরোধক কম্পোজিট (স্টিল ও কংক্রিট) কাঠামোতে। প্রতিটি তলায় জায়গার পরিমাণ হচ্ছে ১৪ হাজার বর্গফুট।

এতে থাকছে ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাবস্টেশন, ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট লাইন এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস বা উপযোগ সেবার সুবিধা। ধারণা করা হচ্ছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পার্ক মোট ১২ হাজার মানুষের আয়ের উৎস হবে।

গত ৫ অক্টোবর এই সফটওয়্যার পার্কে এক চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। তাদের কাছে এ অঞ্চলের ৩৩ হাজার বেকার তরুণ-তরুণী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।