চালে চাপ সংসারে

২০১৭ সালকে চালের বছর বলা যায়। মোটা দাগে কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীল চালের বাজার এবার যেন জেগে ওঠে। ৩৫ টাকা কেজির মোটা চাল ওঠে ৫০ টাকার ওপরে। আর জনপ্রিয় সরু চাল বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৬৫ টাকার বেশি দামে।

চাল ছাড়া এ বছর নজির গড়েছে পেঁয়াজ। বাজারে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১৪০ টাকায় উঠেছে, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার বর্ষাজুড়ে ক্রেতাদের ভুগিয়েছে সবজির দাম। অবশ্য বছর শেষে আলু ও ডিমের দামে বেশ স্বস্তি দেখা যায়, যা আবার চাষিদের জন্য দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দেয়।
মূল্যস্ফীতিতে চালের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ফলে এ বছর মূল্যস্ফীতিতে যে বাড়তি প্রবণতা ছিল, তাতে বড় ভূমিকা চালের। সর্বশেষ হিসাবে অক্টোবর মাসে মাসওয়ারি ভিত্তিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।
চালের দাম নিয়ে সংকট শুরু হয় গত বোরো মৌসুমে হাওরে ফসল নষ্ট হওয়ার পর। সব মিলিয়ে চালের উৎপাদন কমে যায় প্রায় নয় লাখ টন। কিন্তু বাজারে দাম বেশ বেড়ে যায়। সরকারের গুদামেও খাদ্য মজুত তলানিতে নামে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দেশে মোটা চালের গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৬ টাকা ৪৫ পয়সা, যা গত জুনে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠে। অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকায় উঠেছিল। আশা ছিল নতুন আমন ধান আসার পর দাম কমবে। কিন্তু আমন ওঠার পর মোটা চালের কেজিপ্রতি দর আরও ৩-৪ টাকা বেড়েছে।
চালের দাম দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ফুটপাতে পোশাক বিক্রি করেন শামসুর রহমান মণ্ডল। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর এখন ৬০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে হয়। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর দোকানে ক্রেতাও কমেছে।
এ বছর পুরো বর্ষায় বেশির ভাগ সবজির দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০ টাকার ওপরে। ফলে সাধারণ মানুষের ভরসা ছিল আলু। কিন্তু ৮০ লাখ চাহিদার বিপরীতে ১ কোটি ২ লাখ টন উৎপাদিত হওয়ায় মৌসুম শেষে আলু গরুকেও খাওয়াতে হয়েছে।