রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ধীরগতি, আমদানি চড়া

সরকারি বড় নির্মাণকাজ ও বন্যার কারণে ২০১৭ সালে আমদানি আদেশ বেড়ে গেছে। সে তুলনায় বাড়েনি রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। এতে করে চলতি হিসাব ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। আমদানি বাড়ার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা-ও ছাড়িয়ে গেছে। এতে বেড়েছে ডলারের দামও। 

সুদহার কমায় চলতি বছরে আমানতের চেয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার বাড়তি চাপও লক্ষ করা গেছে। গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারায় এখনো আলোচনায় রয়েছে ফারমার্স ব্যাংক।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি। টাকাও ফেরত আসেনি, বিচারও শুরু হয়নি। উপরন্তু দফায় দফায় ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রে সফর করা হচ্ছে এবং অর্থ আদায়ে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে টাকা ফেরত আসার পরিবর্তে উল্টো ব্যয় বাড়ছে।

কেমন গেল ব্যাংক খাত, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমদানি বাড়ার কারণে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সরকারি বড় প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে ঠিকাদারেরাও ঋণ নিয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করেছে। লেনদেন ভারসাম্যে যে ঘাটতি হয়েছে, তা সামনের বছরও অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ১ হাজার ৮৬৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি বছরের এই সময়ে ঋণপত্র খোলা ৯১ শতাংশ বেড়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বড় অঙ্কের ঋণপত্র খোলার কারণে হঠাৎই বেড়ে গেছে আমদানি।

তবে সেই তুলনায় বাড়েনি প্রবাসী আয় ও রপ্তানি। দেশের পণ্য রপ্তানিতে ২০১৭ সালটি তেমন ভালো যায়নি। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ১১৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ৪৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বরে) প্রবাসী আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। চলতি বছরের ১১ মাসে দেশে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার।

আমদানি বাড়ার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি গত অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যা ১৬ দশমিক ২ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকার কথা।

আমদানি বাড়ার কারণে ডলারের দামও বেড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৭৮ টাকা ৭৮ পয়সা, গত বৃহস্পতিবার যা ছিল ৮২ টাকা ৭০ পয়সা। একই কারণে গত অক্টোবর শেষে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৩৩১ কোটি ডলার, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ কোটি ডলার।

চলতি বছরের শেষ সময়ে ব্যাংকগুলোর তারল্যেও কিছুটা চাপ ছিল, এ কারণে কলমানিতে সুদহার কিছুটা বাড়ে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, গত বৃহস্পতিবার যা বেড়ে হয় ৪ শতাংশ।

এদিকে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এ ঘটনায় পদত্যাগে বাধ্য করা হয় তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে, বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনে। ফিলিপাইন থেকে ফেরত এসেছে মাত্র দেড় কোটি ডলার। বাকি রয়েছে আরও সাড়ে ৬ কোটি ডলার (৫১০ কোটি টাকা)। তবে এ অর্থ ফেরাতে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।