লাফার্জের সহযোগী হোলসিম

হোলসিম বাংলাদেশকে কিনে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া প্রায় ৫০৫ কোটি টাকায় হোলসিমের সব শেয়ার কিনে নিয়েছে লাফার্জ। এরই মধ্যে হোলসিমকে কেনা বাবদ অর্থও পরিশোধ করেছে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি।

লাফার্জ জানিয়েছে, এখন থেকে হোলসিম বাংলাদেশ লাফার্জের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মালিকানা একীভূত হলেও আপাতত বাংলাদেশে কোম্পানি দুটি আলাদা ব্র্যান্ডেই ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অর্থাৎ নিজ নিজ ব্র্যান্ডেই সিমেন্টের বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যাবে কোম্পানি দুটি। বর্তমানে লাফার্জের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত সিমেন্ট সুপারক্রিট নামে বাজারে বিক্রি হয়। আর হোলসিম সিমেন্টের হোলসিম নামেই বাজারে বিক্রি হয়।

জানা যায়, ২০১৪ সালের এপ্রিলে বৈশ্বিকভাবে লাফার্জ ও হোলসিম একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে কোম্পানি দুটির একীভূত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ফলে বিশ্বের সিমেন্ট খাতে জায়ান্ট দুই কোম্পানি এক ছাতার নিচে এসে ‘লাফার্জহোলসিম’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এতে দুই কোম্পানি মিলে হয়ে যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিমেন্ট কোম্পানি।

বৈশ্বিকভাবে একীভূত হওয়ার পর বাংলাদেশেও কোম্পানি দুটি একীভূতকরণের বিষয়টি সামনে আসে। কারণ, এ দেশেও দুই কোম্পানির আলাদা কার্যক্রম ছিল। এর মধ্যে লাফার্জ সুরমা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও হোলসিম তালিকাভুক্ত নয়। তাই বৈশ্বিকভাবে একীভূত হওয়া লাফার্জহোলসিম গ্রুপ থেকে হোলসিম বাংলাদেশের সব শেয়ার কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লাফার্জ। তবে শেয়ারের দরদাম নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। কারণ কেনাবেচার জন্য হোলসিমের প্রতিটি ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। তাতে হোলসিম বাংলাদেশকে কিনতে লাফার্জের খরচ হতো ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮০ টাকা ধরে) ৯৩৬ কোটি টাকা।

কিন্তু এ দামে লাফার্জের পক্ষ থেকে হোলসিমকে কেনার প্রস্তাব দেওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে আপত্তি জানায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক যাচাই-বাছাই করে হোলসিমের ১০০ টাকা মূল্যমানের শেয়ারের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে ৫৭ হাজার টাকা। তাতে প্রায় ৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার বা ৫০৫ কোটি টাকায় দুই কোম্পানির একীভূত হওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামেই হোলসিমকে কিনতে রাজি হয় লাফার্জ। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে গতকাল তা নিষ্পন্ন হয়। তবে গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

ঢাকার বাজারে বুধবার লাফার্জের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ বা ২ টাকা ৭০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩ টাকা ৪০ পয়সায়। এদিন কোম্পানিটি ডিএসইতে লেনদেনে পঞ্চম অবস্থানে ছিল। দিন শেষে প্রায় সোয়া ১১ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয় লাফার্জের।