বড় দরপতন, বছরের সর্বনিম্ন লেনদেন

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬১ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমে গেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকও এদিন ১৮৩ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।

বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক দিন ধরে বাজারে একধরনের মন্দাভাব বিরাজ করছে। তাতে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও খরা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, কয়েক দিন ধরে বাজার পতনের ধারায়ই ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালের বড় দরপতন। ব্যাংকসহ বড় মূলধনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের লেনদেনে কিছুটা ধীরগতি হওয়ায় সার্বিকভাবে তা পুরো বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাজারে যখন কিছুটা মন্দাভাব বিরাজ করছে তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা গুজবও ছড়াচ্ছে। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কড়াকড়ি আরোপ করেছে—এমন একটা গুজব রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে কোথায়, কোন খাতে টাকা যাচ্ছে নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেকের ধারণা, এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছে। এটিকে বাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের কারণ বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ।

গতকালের বড় দরপতনের ফলে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ হাজার ১১৮ পয়েন্টে। দিন শেষে লেনদেন কমে নেমে এসেছে প্রায় সোয়া তিন শ কোটি টাকায়।

মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের বাজারে সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটেছে ব্যাংক খাতের শেয়ারের। এদিন গড়ে এ খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। আর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে গড়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৬টিরই দাম কমেছে। বেড়েছে ৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১টির দাম। ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে ছিল ওয়ান ব্যাংক। এদিন ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ১ টাকা বা সাড়ে ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৫০ পয়সায়।

এদিকে বড় দরপতনের দিনে রোববার ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি বিডি অটোকারস। এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯ টাকা ১০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩১ টাকা ৫০ পয়সায়।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনেও শীর্ষে ছিল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি বিডি থাই। এদিন ডিএসইতে এককভাবে কোম্পানিটির প্রায় ১৪ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। দিন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬০ পয়সা বা প্রায় ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে ছিল মাঝারি মানের ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেন আগের কার্যদিবসের চেয়ে প্রায় ৫৪ কোটি বা ১৪ শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৩২৮ কোটি টাকায়। চলতি বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৬ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারেও এটিই এখন পর্যন্ত চলতি বছরের সর্বনিম্ন লেনদেন।

সিএসই ও ডিএসইর সূচকেও সমন্বয়

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে নতুন করে ১৯ কোম্পানি যুক্ত হচ্ছে। তার বিপরীতে এ সূচক গণনার হিসাব থেকে বাদ পড়ছে একটি কোম্পানি। এ ছাড়া বাছাই করা কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকেও নতুন করে তিন কোম্পানি যুক্ত হচ্ছে। আর বাদ পড়ছে তিনটি কোম্পানি। সূচকের বার্ষিক পর্যালোচনা শেষে নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে এ সমন্বয় আনা হচ্ছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ জানুয়ারি থেকে ডিএসইএক্স ও ডিএস-৩০ সূচক হিসাব করার ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সিএসইতে বাছাই করা কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত সিএসই ৩০ সূচকে নতুন করে আটটি কোম্পানি যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ সূচক গণনা থেকে বাদ পড়েছে ৮টি কোম্পানি। নতুন করে যে আটটি কোম্পানি এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে সেগুলো হলো ইবনে সিনা, ওরিয়ন ফার্মা, রতনপুর স্টিল, ইস্টার্ন হাউজিং, এমজেএল বা মবিল যমুনা লুব্রিকেন্টস, এবি ব্যাংক, বেক্সিমকো ও আমান ফিড। সিএসই গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২৫ জানুয়ারি থেকে সিএসই ৩০ সূচক গণনায় নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হবে।