বন্দরে গুঁড়া দুধের সিসা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক

দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া গুঁড়া দুধের কিছু ব্র্যান্ডে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে সিসা পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএসএফএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, সিসার মতো ভারী ধাতু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্যের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি।
অবশ্য সিসা পাওয়া গেছে প্রাথমিক পরীক্ষায়। এরপর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আরও পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটির পক্ষ থেকে বন্দরে গুঁড়া দুধ আমদানিতে প্রতিটি চালানের সিসা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
বিএসএফএর এক চিঠিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বলা হয়, আমদানি করা গুঁড়া দুধের প্রতিটি চালান বন্দর থেকে খালাস করে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমদানিকারকের জিম্মায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বাজারজাত করা যাবে না।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক বলেন, বন্দরে এত দিন গুঁড়া দুধের তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করা হতো। এখন সিসাও পরীক্ষা করতে হবে। পরীক্ষার পরে দুধ যদি নিরাপদ হয়, তাহলে বাজারে ছাড়া যাবে। তিনি বলেন, ‘শুধু আমদানি নয়, দেশের বাজার থেকে দুধের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা একাধিক পরীক্ষা করব। তারপর সিসার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন গুঁড়া দুধ ও ৮ হাজার টন শিশুখাদ্য আমদানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। দেশের বাজারে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু কোম্পানি গুঁড়া দুধ বাজারজাত করছে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বাল্ক বা ব্যাগে একত্রে বেশি পরিমাণে আমদানি করে পুনরায় মোড়কজাত করে বাজারে ছাড়ে। এসব দুধ শিশুদের খাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ বিভিন্ন খাবার তৈরিতেও এ দুধ ব্যবহার করে।
সম্প্রতি ফ্রান্সের একটি শিশুখাদ্যের ব্র্যান্ডে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ার পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দেশের গুঁড়া দুধে সিসা পরীক্ষা করে। এ পরীক্ষায় ১৫টি ব্র্যান্ডের দুধের নমুনা নেওয়া হয়, যার মধ্যে ৬টিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া যায়। এরপরই আরও বেশি নমুনা পরীক্ষা ও বন্দরে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। আরও পরীক্ষায় সিসা পাওয়ার আগে ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ করতে চায়নি সংস্থাটি।
বিএসএফএ জানায়, এখন থেকে আমদানি করা প্রতিটি চালানের নমুনা যথাযথভাবে সংগ্রহ করে ঢাকার অ্যাটমিক এনার্জি সেন্টার, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করতে হবে।
জানতে চাইলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মাহবুব কবির বলেন, আমদানি পর্যায়ে পরীক্ষা করা হলে কোন দেশ থেকে সিসাযুক্ত দুধ আসছে, তা ধরা পড়বে। পাশাপাশি উৎসমুখে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আগামী রোববার এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি মতবিনিময় সভা ডেকেছে। দুধ আমদানিকারকেরা সেখানে থাকবেন। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটির একটি সমাধান করা হবে।
এদিকে দুটি আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশের বিষয়ে তারা এখনো জানে না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমও জানিয়েছে, তারা বিএসএফএর চিঠি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পায়নি। কাস্টমসের সহকারী কমিশনার বায়েজিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চিঠি পেলেই তাঁরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।