দেউলিয়া 'হানজিনের' ভারমুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর

  • বন্দরের ৩৩ শতাংশ জায়গা হানজিনের কনটেইনারের দখলে ছিল।
  • বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে ব্যাঘাত তৈরি হয়েছিল।
  • আদালতের আদেশে নিলাম।

দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ কোম্পানি হানজিন শিপিংয়ের খালি কনটেইনারের স্তূপ থেকে ভারমুক্ত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরে এই কোম্পানির আটকে থাকা সিংহভাগ কনটেইনার নিলামে বিক্রি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নিলামে কনটেইনার বিক্রির সর্বশেষ চালানেও ভালো দর পেয়েছে বন্দর। কয়েক দিনের মধ্যে নিলামপ্রক্রিয়া শেষ হলে বন্দরের মূল্যবান জায়গা থেকে অপসারণ হবে এসব কনটেইনার।

হানজিন শিপিংয়ের কার্যক্রম থেমে যাওয়ার পর দেড় বছরের বেশি সময় ধরে এসব খালি কনটেইনার পড়ে ছিল বন্দর চত্বরে। বন্দরে খালি কনটেইনার রাখার যে জায়গা রয়েছে তার ৩৩ শতাংশই ছিল এই কোম্পানির মালিকানাধীন কনটেইনারের দখলে। এতে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে ব্যাঘাত তৈরি হয়েছিল। তবে দেরিতে হলেও এসব কনটেইনারের স্থানে নতুন কনটেইনার রাখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে বন্দরে।

জানতে চাইলে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে এসব কনটেইনার ধারাবাহিকভাবে নিলামে তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। নিলামে বিক্রি হওয়া সিংহভাগ কনটেইনার খালাস করে নিয়েছেন সর্বোচ্চ দরদাতারা। বাকিগুলোর খালাসও নেওয়ার পথে। এর ফলে বন্দরের খালি কনটেইনার পরিচালন কার্যক্রমে গতি বাড়বে।

২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট ঋণের ভারে জর্জরিত এই কোম্পানি দক্ষিণ কোরিয়ার আদালতে দেউলিয়া সুরক্ষার আবেদন করেছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের কেন্দ্রীয় জেলা জজ আদালত হানজিন শিপিংকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। পাশাপাশি হানজিনের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারের ঋণ পরিশোধের পদক্ষেপ নিতে আদেশ দেন সে দেশের আদালত।

বাংলাদেশে কর্ণফুলী গ্রুপের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে ‘হানজিন শিপিং বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে ব্যবসা পরিচালনা করত হানজিন শিপিং। দেউলিয়াত্ব সুরক্ষার আবেদনের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও এই কোম্পানির জাহাজ ও কনটেইনার আটকা পড়ে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে হানজিনের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগের অ্যাডমিরালটি (নৌ-সংক্রান্ত বিষয়) আদালতে মামলা করে।

মামলা চলাকালীন বন্দর কর্তৃপক্ষ হানজিনের খালি কনটেইনার নিলামে বিক্রি করে জায়গা খালি করার জন্য আদালতে আবেদন করে। ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালত হানজিনের খালি কনটেইনার নিলামে তুলে বিক্রির জন্য আদেশ দেন। নিলামে বিক্রির পর যে টাকা পাওয়া যাবে, তা আদালতের হিসাবে জমা দেওয়ার জন্যও আদেশ দেওয়া হয়। চূড়ান্ত রায়ের পর এই টাকা কে পাবে, তা ঠিক করবেন আদালত।

আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর গত বছরের এপ্রিলে হানজিনের ১ হাজার ৫৭ কনটেইনার নিলামে তোলে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভালো দর না পাওয়ায় একই কনটেইনার সরাতে ৫ বার পর্যন্ত নিলাম ডাকা হয়। এর মধ্যে নিলামে ৯৬৯ কনটেইনার ৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি নিলামে তোলা হয় ৮৮ কনটেইনার। তাতে দুটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে সোয়া দুই কোটি টাকা। সর্বশেষ চালান নিষ্পত্তি হলে বন্দর এসব খালি কনটেইনারের চাপ থেকে মুক্ত হবে। নিলামে বিক্রি হওয়া কনটেইনারের মধ্যে ৫১৬টি সর্বোচ্চ দরদাতারা খালাস করে নিয়েছেন। বাকি কনটেইনারগুলো খালাসের অপেক্ষায় আছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, হানজিন শিপিং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আগের বকেয়া পাওনাও উদ্ধার করতে পেরেছে বন্দর। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট দেউলিয়া হওয়ার আবেদনের আগে হানজিনের কাছে বন্দরের বকেয়া পাওনা ছিল ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। দুই পক্ষের সমঝোতার পর গত বছরের ২৮ আগস্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ হানজিন শিপিং বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছ থেকে ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আদায় করেছে। এরপর কনটেইনার রাখা বাবদ বন্দরের পাওনা কত হবে বা বন্দর পাবে কি না, আদালতের রায়ের পর তা চূড়ান্ত হবে।