চায়ের উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বাড়ছে বেশি

>
  • গত ১০ বছরে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে ২ কোটি কেজি।
  • চাহিদা বেড়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ কেজি।
  • উৎপাদন বাড়াতে ১৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে চা বোর্ড।

গত দুই বছর রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের কারণে চা আমদানি কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি রপ্তানিও বেড়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিসংখ্যান থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

চা বোর্ডের হিসাবে, আমদানি ও উৎপাদন মিলে ২০১৬ সালে দেশের বাজারে চায়ের সরবরাহ ছিল সবচেয়ে বেশি, ৯ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। ওই বছর দেশের মানুষ ৮ কোটি ১৬ লাখ কেজি চা পান করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, মানুষ পান করেছে ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা।

হিসাবটি আমলে নিলে ২০১৬ সালে চায়ের উদ্বৃত্ত ছিল ৮৮ লাখ কেজি। এ জন্য গত বছর চা আমদানি হয়েছে ৬২ লাখ কেজি, যা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আবার রপ্তানি বেড়েছেও আগের তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছর ২৫ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়।

চা-বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শাহ আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর অতিবৃষ্টির কারণে চায়ের উৎপাদন কম হয়। তারপরও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। বাগানের পুরোনো চারা উঠিয়ে নতুন চারা লাগানো হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে সংস্কার কার্যক্রম চলছে। ফলে আগামী দিনে চা উৎপাদন বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আমদানি কমে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা দিয়ে সকাল শুরু করেন এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। সারা দিনে এক কাপ চা পান করেন না এমন লোকও পাওয়া দুষ্কর। দিন দিন চা পানের পরিমাণ বাড়ছে। উৎপাদনের চেয়ে এই চাহিদা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। চাহিদার তুলনায় কতটুকু চা উৎপাদিত হয়েছে, তা হিসাব করে প্রতিবছরই কম-বেশি পরিমাণ চা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ১০ বছরের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ের ব্যবধানে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে দুই কোটি কেজি। অর্থাৎ বছরে গড়ে উৎপাদন বাড়ছে সাড়ে ৩ শতাংশ হারে। একই সময়ে চায়ের চাহিদা বেড়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। বছরে চাহিদা বাড়ছে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে।

চায়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১০ সাল থেকে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হয়। তখন থেকেই আমদানি শুরু হয়। গত আট বছরে দেশে মোট চা আমদানি হয় ৫ কোটি ৯৫ লাখ কেজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছিল ২০১৫ সালে, মোট ১ কোটি ৫৮ লাখ কেজি। ২০১৬ সালে ৮৭ লাখ কেজি এবং ২০১৭ সালে ৬২ লাখ কেজি চা আমদানি হয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে থাকায় চায়ের রপ্তানি কমেছে। নব্বইয়ের দশকে বিশ্বে চা রপ্তানির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চা রপ্তানি হয় সেই সময়। ১৯৮২ সালে চা রপ্তানি হয় ৩ কোটি ৪৪ লাখ কেজি। সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৬ সালে, ৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে থাকায় রপ্তানিও কমে গেছে। ২০১৬ সালের চা রপ্তানিতে বাংলাদেশ ছিল ৭৭তম।

চা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা মেটানো ও রপ্তানি বাড়াতে ১৫ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় ২০২৫ সালে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত চা-বাগানের সংখ্যা ১৬৪। চা চাষের জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৫ হাজার ২১৭ একর। সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। এ ছাড়া হবিগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় ও রাঙামাটি এলাকায় চা চাষ হচ্ছে।

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আজ রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী চা প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের আয়োজনে এই প্রদর্শনীতে দেশে-বিদেশে চা-প্রেমীদের কাছে চায়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।