হল-মার্ক কেলেঙ্কারি: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে সোনালীর মামলা

হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় কেটে রাখা টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। এ ঘটনার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে অন্য ব্যাংকের পাওনা হিসাবে ৮৯২ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই টাকার একটি অংশ ফেরত পেতেই সোনালী ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটি করেছে।

হল-মার্কের বড় এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনাটি সোনালী ব্যাংকের রাজধানীর রূপসী বাংলা শাখায় সংঘটিত হয়েছিল। মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের কর্ণধার, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অন্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আল-আরাফাহ্, এবি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানদের আসামি করা হয়। মামলায় ৪১-৪৩ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বৈদেশিক মুদ্রানীতি এবং ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে।

গতকাল ঢাকার যুগ্ম জজ প্রথম আদালতে মামলাটি করে সোনালী ব্যাংক। মামলার নম্বর ২০। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী হোসনে আরা বেগম এ মামলা করেন। আর মামলাটি তদারকির দায়িত্বে আছেন রূপসী বাংলা শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবদুছ ছালাম।

মামলার পর সোনালী ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া ঋণপত্রের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের তদন্তেই বেরিয়ে এসেছে। সোনালী ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা কেটে অন্য ব্যাংকগুলোকে দিয়েছে। তবে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, জালিয়াতি প্রমাণ হলে টাকা ফেরত দেবে অন্য ব্যাংকগুলো। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এমন আরও মামলা হবে। রায় পক্ষে এলে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ফেরত পাবে সোনালী ব্যাংক।

ব্যাংক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও তাদের হিসাব থেকে বিভিন্ন ব্যাংককে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার (৮৯২ কোটি টাকা) দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের বিপরীতে নন-ফান্ডেড দায় তৈরি হওয়ায় অন্য ব্যাংকগুলোকে এসব অর্থ পরিশোধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকেই এ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সোনালী ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেই এসেছে এটা জালিয়াতি, তাই হিসাব থেকে টাকা কাটার সিদ্ধান্ত বেআইনি।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ৪১-৪৩ নম্বর বিবাদীরা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক) জাল-জালিয়াতিপূর্ণ ঋণপত্র ও কথিত স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা অভিযোগ তদন্তাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে ব্যাংকগুলোকে টাকা পরিশোধ করেছেন। গতকালের মামলায় আল-আরাফাহ্, এবি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৪ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

আবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাটি তদারকি করত, তাহলে এ দেশের সর্ববৃহৎ ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটত না। এরপরও তারা হিসাব থেকে টাকা কেটে অন্য ব্যাংককে পরিশোধ করেছে। এ জন্য তারা কেটে রাখা টাকা সুদসহ ফেরত দিতে বাধ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জালিয়াতির বিলের টাকা কেটে পরিশোধ না করার জন্য সোনালী ব্যাংক দফায় দফায় অনুরোধ করলেও তা বিবেচনা করা হয়নি। সোনালী ব্যাংক এসব টাকা আদায়ে বিবাদীদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামের মাধ্যমে টাকা আদায়ের অধিকার সংরক্ষণ করে।

মামলায় বলা হয়, একটি ট্রাকে করে চালানের মাধ্যমে ৩০ মেট্রিক টন সুতা পরিবহনের হিসাব দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। এতেই প্রমাণিত হয় পুরো প্রক্রিয়াটি জাল-জালিয়াতিপূর্ণ।

এতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের ৫ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখাটি পরিদর্শন করে। এরপর তাদের বিশেষ পরিদর্শনে হল-মার্ক গ্রুপের ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।