রডের টন ৭১,৫০০ টাকা

সরবরাহের জন্য একটি দোকান থেকে রড বের করছেন একজন শ্রমিক। গতকাল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়।  ছবি: প্রথম আলো
সরবরাহের জন্য একটি দোকান থেকে রড বের করছেন একজন শ্রমিক। গতকাল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ছবি: প্রথম আলো
>
  • নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি।
  • ৮ মাস আগে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৫২ হাজার টাকা।
  • সিমেন্টের দামও ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
  • ৫টি কারণ দায়ী, বলছে কোম্পানিগুলো।

বাজারে নির্মাণ খাতের দুই প্রধান উপকরণ রড ও সিমেন্টের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ঢাকায় প্রতি টন রডের দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৭১ হাজার ৫০০ টাকায়, যা গত আগস্টেও ৫২ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। অন্যদিকে তিন দফায় সিমেন্টের দাম বস্তাপ্রতি ৪০-৬০ টাকা বাড়িয়েছেন উৎপাদনকারীরা, যা আগের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।

কয়েক বছর স্থিতিশীল থাকার পরে এই দুই পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলো। রড ও সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশে আবাসন খাতের কোম্পানিগুলো। তারা বলছে, এতে নির্মাণ ব্যয় বাড়বে এবং ফ্ল্যাটের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রড-সিমেন্ট বিক্রির এখন ভরা মৌসুম। এ সময়ে মূল্যবৃদ্ধির জন্য ইস্পাত শিল্প ও সিমেন্ট শিল্প পাঁচটি করে কারণ উল্লেখ করছে। কোম্পানিগুলোর দাবি, মোটা দাগে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণে রডের দাম বেড়েছে। সিমেন্টের দাম বাড়ার পেছনের কারণগুলো একই, তবে চট্টগ্রাম বন্দরের জটের প্রভাব নেই।

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় রডের একটি বড় দোকান এইচ এস করপোরেশনে গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি টন ৫০০ টিএমটি বার বিক্রি হয় ৬৮ হাজার ৫০০ থেকে ৭১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। গত বছরের আগস্ট মাসে একই দোকানে এসব রডের দাম ছিল ৪৯ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা। মাসখানেকের মধ্যে এসব রডের দাম টনপ্রতি ১০-১১ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রেতা।

একই দোকানে ৪০টি গ্রেডের রড প্রতি টন ৬০ হাজার থেকে ৬২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা আট মাস আগে ৪৪ হাজার টাকা ছিল। এইচ এস করপোরেশন বলছে, দাম বাড়লেও চাহিদা বেশি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রডের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহা আমদানির খরচ টন প্রতি ৩০০ ডলার থেকে বেড়ে ৪৩৫ ডলার হয়েছে। এর একটা প্রধান কারণ চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় জাহাজভাড়া বৃদ্ধি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কাঁচামাল কারখানায় আনা এবং তৈরি পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে টনপ্রতি ৮ হাজার টাকা পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। সামনে রডের দাম কমার আশা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আরও খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা আছে। এভাবে দাম বাড়ায় আমরাও অসুবিধায় আছি।’

বিএসআরএম ৫০০ টিএমটি বার বিক্রি করছে টনপ্রতি ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা দরে, যা কারখানার মূল্য। এর সঙ্গে পরিবহন ভাড়া যুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচামালের মূল্য ও পরিবহন খরচের পাশাপাশি ঋণের সুদের হার এবং ডলারের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়েছে রডের দামে।

ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে বেশির ভাগ কোম্পানি ৫০ কেজির এক বস্তা পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (পিসিসি) খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ৪০০ থেকে ৪৯০ টাকা দরে। ছয় মাস আগে এসব সিমেন্টের দর ৩৭০ থেকে ৪২০ টাকা ছিল। এর সঙ্গে ১০ টাকার মতো লাভ যুক্ত করে বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা।

এম আই সিমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ খান তাঁদের ক্রাউন ব্র্যান্ডের সিমেন্টের দর তিন দফায় ৬০ টাকা বাড়ানোর কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের খরচ বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৭০ টাকা। আমরা সে অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধি করিনি।’ তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগেও প্রতি টন ক্লিংকারের দাম ছিল ৪০ ডলার, তা এখন ৪৮-৫০ ডলার। একইভাবে জিপসামসহ অন্যান্য কাঁচামালের দরও বাড়তি। জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পরিবহন খরচের বিষয়ে মাসুদ খান বলেন, চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রাকে আগে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট আনা যেত, এখন সেখানে ২৪০ ব্যাগের বেশি দিচ্ছে না সরকার। এতে খরচ বেড়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে দাম কমবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষা এলে চাহিদা কমবে। তখন দাম কমতে পারে।

উল্লেখ্য, রাস্তা সুরক্ষার জন্য সরকার সীমার অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহন চলতে দিচ্ছে না।