বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির বড় বাজার এখন জার্মানি

>
• জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে ৩৯২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি।
• একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলারের পণ্য।
• মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জার্মানি এগিয়ে গেছে।


দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে জার্মানি। ফলে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির বড় গন্তব্য বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত এই দেশটি।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাস অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মানিতে ৩৯২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলারের পণ্য। তার মানে চলতি অর্থবছরের আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে জার্মানিতে ২ কোটি ডলার বা ১৬৪ কোটি টাকার বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

অবশ্য গত অর্থবছর শেষেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রই এগিয়ে ছিল। গত বছর সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৮৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তখন জার্মানিতে রপ্তানি হয়েছিল ৫৪৭ কোটি ডলারের পণ্য। তবে চলতি অর্থবছরের আট মাস শেষে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যায় জার্মানি।

রপ্তানি পণ্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জার্মানি এগিয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাস শেষে দেশটিতে ৩৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। অবশ্য গত অর্থবছর শেষেও যুক্তরাষ্ট্রের পেছনেই পড়ে ছিল জার্মানি। তখন যুক্তরাষ্ট্রে ৫২০ কোটি ও জার্মানিতে ৫১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক গতকাল রোববার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মূলত ওভেন পোশাকনির্ভর বাজার। অন্যদিকে জার্মানিতে কয়েক বছর ধরে নিট ও ওভেন পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ফলে আমরা অনুমান করছিলাম, জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রকে একসময় না একসময় ছাড়িয়ে যাবে। সেটি হয়েছে এবং প্রবণতাটি আগামী কয়েক বছর থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’

ফজলুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি প্রায়ই পরিবর্তন হয়। ফলে বাজারটিতে ঝুঁকি থাকে। সে তুলনায় জার্মানি অনেক ভালো। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি একরোখা। পক্ষান্তরে জার্মানি বেশ নমনীয়।’ তিনি আরও বলেন, জার্মানির বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সবাই বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় করে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা নয় বছর অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা জিএসপি পাব। ফলে ভবিষ্যতে দেশটিতে রপ্তানি আরও বাড়বে।’ জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমছে বলে মন্তব্য করেন ফজলুল হক।

ইউরোপীয় কমিশন ট্রেড হেল্প ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ থেকে ৬২ হাজার ৭৪৮ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করেছে জার্মানি। আর ইইউর বাইরের দেশগুলো থেকে আমদানি করেছে ৩৫ হাজার ৭২ কোটি ইউরোর পণ্য। এর মধ্যে সর্বোচ্চ চীন থেকে ৭ হাজার ২৩৬ কোটি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪ হাজার ৫৯৪ কোটি, সুইজারল্যান্ড থেকে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি, রাশিয়া থেকে ২ হাজার ৮৫৮ কোটি, জাপান থেকে ১ হাজার ৬০৩ কোটি, তুরস্ক থেকে ১ হাজার ৩৮৮ কোটি ইউরোর পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৮ কোটি ইউরোর পণ্য। গত বছর জার্মানি যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ১৭ তম অবস্থানে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ৩৬৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল জার্মানি।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের পর যুক্তরাজ্যে ২৭০ কোটি, স্পেনে ১৬৪ কোটি, ফ্রান্সে ১৩০ কোটি, ইতালিতে ১০৭ কোটি, কানাডায় ৭৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে জার্মানিতে ২ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১৭ শতাংশ, স্পেনে ২৪ শতাংশ, ফ্রান্সে ৫ শতাংশ, ইতালিতে ১১ শতাংশ এবং কানাডায় ৯ শতাংশ রপ্তানি আয় বেড়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পণ্য রপ্তানি মূল বাজারের মধ্যে যারা জাতীয় আয় ও আমদানি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, তার মধ্যে জার্মানি অন্যতম। সে জন্যই বাজারটিতে রপ্তানি বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পণ্য রপ্তানিতে একটি দেশকে টপকে অন্য দেশ ওপরে ওঠা খুবই ইতিবাচক। কারণ, পেছনে থাকা দেশটির বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমেই উপরে ওঠে।’