'সিন্ডিকেটের কারণে রডের দাম বাড়েনি'

রডের মূল্যবৃদ্ধি কোনো সিন্ডিকেটের কারণে হয়নি বলে দাবি করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।  প্রথম আলো ফাইল ছবি
রডের মূল্যবৃদ্ধি কোনো সিন্ডিকেটের কারণে হয়নি বলে দাবি করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

রডের মূল্যবৃদ্ধি কোনো সিন্ডিকেটের কারণে হয়নি বলে দাবি করেছেন খাতটির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, রডের কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার ও বন্দরের খরচ বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহনে ওজনসীমা নির্দিষ্ট করে সরকারর এক্সেল লোড আইন প্রবর্তন, গ্যাসের সংকট, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ার কারণেই রডের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন।

মানোয়ার হোসেন বলেন, রডের প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ। বিশ্ববাজারে গত জুলাইয়ে প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম ছিল ৩১২ ডলার। গত মাসে সেটি বেড়ে ৪২৭ ডলার হয়েছে। এ জন্য রডের উৎপাদন খরচ টনপ্রতি ৯ হাজার ৮৯২ টাকা বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রতি টন রডে ১ হাজার ৭০৮ টাকা খরচ বেড়েছে। তা ছাড়া স্পঞ্জ আয়রন ও ফেরো অ্যালয়েজ নামক রাসায়নিকের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রডের দাম প্রতি টনে ১ হাজার ৯৮৯ টাকা বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যবৃদ্ধি ১৩ হাজার ৫৯০ টাকা।

এসব বৈশ্বিক কারণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কারণ রডের মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। মানোয়ার হোসেন বলেন, আগে আমদানি করা কাঁচামালের কনটেইনার জাহাজ থেকে ট্রেলারে করে সরাসরি কারখানায় চলে আসত। তবে এখন জাহাজ থেকে বেসরকারি ডিপোতে কনটেইনার যায়। সেখান প্রতি কনটেইনারে সাড়ে সাত হাজার টাকা চার্জ দিতে হয়। ডিপো থেকে কাঁচামাল কারখানায় আসে। আগে প্রতি ট্রেলারে ২৫ টন পণ্য পরিবহন করা যেত। বর্তমানে করা যায় মাত্র ১২ টন। বন্দর ও পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি টন রডের মূল্যে ১ হাজার ৪৬৮ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া গ্যাসের সমস্যা ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এবং ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে প্রতি টন রডের মূল্যে ২ হাজার ৬৭৪ টাকা বেড়েছে।

সব মিলিয়ে প্রতি টন রড উৎপাদনে ১৮ হাজার ৪১৯ টাকা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন মানোয়ার হোসেন। তাঁর দাবি, প্রতি টন রড উৎপাদনের ব্যয় বর্তমানে গড়ে ৭৩ হাজার ৪৩৫ টাকা। তবে সাড়ে তিন হাজার টাকা কমে বিক্রি করছেন মিল মালিকেরা। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের মূল্যে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

রডের দাম কিছুটা কমাতে হলে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন মানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সরকারকে অনতিবিলম্বে পণ্য পরিবহনে ওজনসীমা নির্দিষ্ট করে এক্সেল লোড আদেশটি ইস্পাত খাতের জন্য শিথিল করতে হবে। জাহাজ থেকে সরাসরি পণ্য সরবরাহ করতে হবে। স্ক্র্যাপ আমদানি শুল্ক দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা, অগ্রিম আয়কর ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা, রাসায়নিকের আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১৫ শতাংশ প্রত্যাহার দরকার। তা ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হার হ্রাস করার ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে।

সম্প্রতি হঠাৎ করেই প্রতি টন রডের মূল্য ৫৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর সমালোচনা করে গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। সংগঠনটির নেতারা রডের মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক দাবি করেন। গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রডের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রডের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ী মহল থেকে সমালোচনা বিষয়ে মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভারতে আজ প্রতি টন রড ৫৫ হাজার ৪৬০ রুপি (বাংলাদেশি টাকায় ৭২ হাজার ৯৮ টাকা) বিক্রি করছে। সেখানে বাংলাদেশে ৭০ হাজার টাকায় রড পাওয়া যাচ্ছে। গত মে মাস থেকে সরকারকে আমরা ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণেই আজ রডের দাম এতটা বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের অনুরোধে প্রতি টন রডের মূল্যে ২ হাজার এবং গতকাল শিল্পসচিবের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতি টন রডের মূল্যে ১ হাজার টাকা কমানোর ঘোষণা দেন ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রীকে সম্মান জানিয়ে রডের দাম সাময়িকভাবে কিছুটা কমানো হয়েছে। তা ছাড়া তিনি সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা (ব্যবসায়ীরা) এক পা এগিয়ে দিন তাহলে সরকার দুই পা আগাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শহিদউল্লাহ, সাবেক সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ, বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান প্রমুখ।