বাণিজ্যযুদ্ধের দামামা বাজছে

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন মার্কিন ফলসহ নানা পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতে দেশটিতে মার্কিন ফলের দাম বেড়ে যাবে।  ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন মার্কিন ফলসহ নানা পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতে দেশটিতে মার্কিন ফলের দাম বেড়ে যাবে। ছবি: রয়টার্স

আলোচনার দরজা খোলা রেখেও শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখনো যুদ্ধংদেহী অবস্থানে। ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার আরও ৫০ বিলিয়ন ডলারের ১৩০০ চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় চীন সয়াবিন, রাসায়নিকসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করছে। এর আগে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্যে শুল্ক আরোপ করে। 

সারা পৃথিবীতেই এই ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে যে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। চীনের এই শুল্ক আরোপের পরিকল্পনায় বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপক পতন হয়েছে।
মঙ্গলবার চীন হুমকি দিয়েছে, তারা এই যুদ্ধের শেষ দেখে ছাড়বে। এর বিপরীতে ক্ষুব্ধ মার্কিন বাণিজ্যসচিব স্টিভেন মনুচিনও বলেছেন, সমাধান না মেলা পর্যন্ত উচ্চ আমদানি শুল্ক থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের শোরগোলের মধ্যেই চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, ‘চীন কারও সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চায় না। কিন্তু তাই বলে আমরা লড়াইকে ভয় পাই না।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের সম্ভাবনা হ্রাস করে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করার লক্ষ্যে চীন এই ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারে। তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান আক্সা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্সের অর্থনীতিবিদ আইদান আও বলেন, ‘এর মূল লক্ষ্য বাণিজ্যযুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া নয়, দুর্বলতা না দেখানোই এর উদ্দেশ্য।’
দুই পক্ষের ঘোষিত শুল্ক কার্যকর হবে নাকি এর মধ্যে ধীরে ধীরে উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যাবে, তা পরিষ্কার নয়। চীন বলেছে, শুল্ক কার্যকর করার দিনক্ষণ তারা পরবর্তীকালে ঘোষণা করবে। মার্কিন সরকার বলেছে, আগামী মাসে পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়নে তারা মার্কিন ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণশুনানি করবে। অন্যদিকে চীনের সহকারী অর্থমন্ত্রী ঝু গুয়ানগিয়াও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগের সময়টা হবে ‘আলোচনা ও সহযোগিতার সময়’। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্যাংক ওসিবিসির অর্থনীতিবিদ টমি সাই বলেন, নতুন এই শুল্ক আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কার্যকর হবে তার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হলে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে’।
ওয়াশিংটনের অভিযোগ, চীন তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এবং সে কারণেই এই শুল্ক আরোপ। চীনের আইন অনুসারে, বিদেশি কোম্পানি যদি চীনে ব্যবসা করে, তাহলে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ হস্তান্তর করতে হবে। সে জন্যই জার্মানির দ্রুতগতির ট্রেন প্রযুক্তি চীনা প্রকৌশলীদের হাতে এসেছে। নিজেদের বিশাল বাজারে প্রবেশাধিকারের বিনিময়ে চীন বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক গোপনীয়তাও হাতিয়ে নেয়।
কিন্তু চীনের সরকারি কর্মকর্তারা বুধবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চীনের সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং সুয়েন দাবি করেছেন, চীন বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষিত প্রযুক্তি হস্তান্তরে বাধ্য করে এই অভিযোগ ভুয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এই হস্তান্তর হয়ে থাকে।
কেউ কেউ বলছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। স্বাভাবিকভাবেই আরেক দল বলছে, চীন বহুদিন ধরে এ কাজ করে করে পার পেয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। চীন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পণ্য রপ্তানি করে, সেহেতু স্বাভাবিকভাবে তারাই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে। তাই বেইজিং এই শুল্ক লড়াই থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজবে।
তবে চীন ঘোষিত পথেই হাঁটছে। তারা একদিকে আলোচনার পথ খোলা রাখছে, অন্যদিকে শুল্ক আরোপের ঘোষণাও দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া তারা আগে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। চীন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধানের আলোকে চীনের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, বেইজিং এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশা করে। কিন্তু তিনি সতর্ক করে দেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এই আলোচনা হতে হবে। কেউ চাপ দেবে আর কেউ তা মেনে নেবে-এমনটা হতে পারে না।