বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক দেয়

>
  • কাপড় ও জুতার ওপর যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে থাকে।
  • এসব পণ্যের রপ্তানিকারকদের যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ১০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। এর জবাবে চীন বলেছে, তারা যেকোনো মূল্যে পাল্টা লড়াই শুরু করবে। ফলে বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের কথার যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর কাপড় ও জুতার ওপর যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করে থাকে। ব্যাপারটা এমন নয় যে যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্টভাবে এই দেশগুলোর পণ্যে বেশি শুল্ক আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এসব পণ্যেই বেশি শুল্ক আরোপ করে, তাই যেসব দেশ এসব পণ্য বেশি রপ্তানি করে, তাদেরই বেশি শুল্ক দিতে হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, বাংলাদেশ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই ছিল পোশাক, জুতা, হেডগিয়ার ও সংশ্লিষ্ট পণ্য। যুক্তরাষ্ট্র যেসব বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করে, তার প্রায় সবকটিতেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শুল্ক দিতে হয়। পিউ রিসার্চ হিসাব করে দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ৫৭০ কোটি ডলারের রপ্তানির ওপর ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হয়, যা ২৩২টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের কাতারে অন্য যেসব দেশ আছে, তাদেরও প্রায় এই পরিমাণে শুল্ক দিতে হয়। ক্যাম্বোডিয়াকে দিতে হয় রপ্তানি মূল্যের ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামকে দিতে হয় মোট রপ্তানি অঙ্কের যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯,৮ দশমিক ৯ ও ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর সমগ্র পৃথিবী থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ আমদানি করে থাকে, তার মূল্যের ওপর দেশটি ১ দশমিক ৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে থাকে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের তুলনায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর তুলনামূলকভাবে কম হারে শুল্ক আরোপ করে। উদাহরণ হিসেবে মেক্সিকো ও কানাডার কথা বলা যায়, এই দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানির উৎস। অথচ এই দেশ দুটিকে রপ্তানি মূল্যের ওপর গত বছর যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১২ ও শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়েছে। অন্যদিকে জাপান ও জার্মানিকে দিতে হয় রপ্তানি মূল্যের ২ শতাংশেরও কম। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আছে। এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে যে ৭ হাজার ৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, তার ওপর তাকে মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।

ব্যাপারটা হলো, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করলে তার ওপর কত শুল্ক আরোপিত হবে তা নির্ভর করে দুটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত, শুল্কযোগ্য পণ্যের পরিমাণ এবং দ্বিতীয়ত, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র গড়ে যে শুল্ক আরোপ করে তার ওপর।

সাধারণভাবে দুই দশক আগের তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কের হার কম। এখন শুল্ক ছাড়ের তালিকায় পণ্যের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এটি ঘটছে। ১৯৯৬ সালে চীন থেকে আমদানি করা ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করত। গত বছর শুল্কযোগ্য পণ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর শুল্কের হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। শুল্কযোগ্য পণ্যের গড় শুল্ক হারের পরিপ্রেক্ষিতে (সামগ্রিক রপ্তানি নয়) বাহরাইন, হাইতি, বারবাডোজসহ ছোট কয়েকটি দেশ সর্বোচ্চ হারে শুল্ক প্রদানকারী দেশের তালিকায় ওপরে উঠে এসেছ। এর মূল কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের মোট রপ্তানির ক্ষুদ্র অংশের ওপর তাদের তুলনামূলক বেশি শুল্ক দিতে হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ বাজারসুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, পৃথিবীতে কেয়ামত ঘটে গেলেও যুক্তরাষ্ট্র আর জিএসপিসুবিধা ফিরিয়ে দেবে না। তাই বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।