আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫,৬০০ কোটি টাকা

>
• কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি দুর্বল হয়ে পড়ায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখনো বেপরোয়া ঋণ বিতরণ করছে।
• তিন বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন গুণ।


ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়ছে। গ্রাহকেরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ ও লিজ-সুবিধা নিয়ে অর্থ ফেরত দিচ্ছে না। নিয়মকানুনে অনেকটা ছাড় থাকায় ব্যাংকের চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসার বেশি সুযোগ পাচ্ছে। তবে ঋণের টাকা ফেরত না আসায় দুর্বল হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দেশে ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এদিকে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি দুর্বল হওয়ায় সেই সুযোগে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো বেপরোয়া ঋণ বিতরণ করে চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়লেও তা আলোর মুখ দেখছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রতিনিয়ত এ খাতের খেলাপি ঋণ শুধুই বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ২০১৪ সাল শেষে যা ছিল ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন গুণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শন এ দুটি বিভাগেরই দায়িত্বে আছেন এস এম মনিরুজ্জামান। গত রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খারাপ হয়ে গেছে। কীভাবে ভালো করা যায়, সে জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় আদালতের আদেশের কারণে গ্রাহককে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া পুনঃ তফসিলের সুবিধা নেওয়া গ্রাহকের সুদ আয় খাতে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১২ সাল শেষে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ও লিজের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে কিছুটা কমলেও ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম নয় মাসেই খেলাপি বেড়েছে ১ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানে সমস্যা হয়েছে। তবে দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও মৌলিক চাহিদা পূরণে ঋণ দিচ্ছে। এ কারণে গ্রাহকেরা আসছে।’

তথ্য মতে, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিজের ৮৪৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭৯৪ কোটি টাকার ঋণ ও লিজ খেলাপি হয়ে পড়েছে। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকার মধ্যে ৩৫৫ কোটি টাকাই খেলাপি। ফার্স্ট ফিন্যান্সের ৯৪৬ কোটি টাকার মধ্যে ২৯১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। এ তিন প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে ৫৭০ কোটি টাকা বের করে নেন কয়েকজন পরিচালক। তথ্য গোপন করে বিআইএফসি থেকে ৭০৯ কোটি টাকা বের করে নেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান। এ ছাড়া অনিয়মের মাধ্যমে ফার্স্ট ফিন্যান্স থেকেও ৩৫০ কোটি টাকা তুলে নেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের কয়েকজন।

এ ছাড়া ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ১ হাজার ২১৭ কোটির মধ্যে ২২৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। প্রাইম ফাইন্যান্সের ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৪১১ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠান দুটির অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।