গাড়ির পর এবার বাড়ির ঋণ পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা

উপসচিব থেকে তার ওপরের পদের সরকারি কর্মচারীদের বিনা সুদে গাড়ির ঋণ দেওয়ার পর এবার সব কর্মচারীর জন্য বাড়ির ঋণও দিতে চাইছে সরকার। ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা। তবে গাড়ির মতো এ ঋণ বিনা সুদের হবে না।

ঋণের সুদ ১০ শতাংশ ধরে নিয়ে সরকার এগোতে চাইছে বলে জানা গেছে। বাজারদরে ঋণের সুদ যাই থাকুক না কেন, সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে ৫ শতাংশ, বাকিটা দেবে সরকার। ঋণ দেওয়া হবে সরল সুদে অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ নেওয়া হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তৈরি করা ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদানসংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮ ’-এর খসড়া বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫ বছর চাকরি আছে এমন সরকারি চাকরিজীবী বর্তমানে ৭ লাখ। তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশকে ঋণ দেওয়া হলেও বছরে আবেদনকারী দাঁড়াবে ৭০ হাজার জন। বিভিন্ন ভৌগোলিক এলাকায় বসবাস করায় গড়ে প্রতিজনের ঋণের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা করে হিসাব করলেও বছরে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকারকে বছরে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে।
অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকের মতামত আমলে নিয়ে নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’ নতুন এই ঋণসুবিধা আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে পারে।
শুধু বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই নীতিমালা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কর্তৃপক্ষগুলোতে যাঁরা স্থায়ী পদে চাকরি করেন, তাঁদেরই দেওয়া হতে পারে এই ঋণসুবিধা। সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা তৈরি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীদের এ নীতিমালার বাইরে রাখা হচ্ছে।
সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কারও জন্য এই ঋণের সুযোগ রাখা হবে না।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতনকাঠামোর পঞ্চম থেকে প্রথম ধাপে (গ্রেড) বেতন-ভাতা পাওয়া সরকারি কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি তৈরিতে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনায় ঋণের অঙ্ক হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
নবম থেকে ষষ্ঠ ধাপে বেতন-ভাতা পাওয়া কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ, জেলা সদরে ৫৫ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। দশম থেকে ত্রয়োদশ ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ, জেলা সদরে ৪০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ, জেলা সদরে ৩০ লাখ ও অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
আর অষ্টাদশ থেকে বিংশতম ধাপের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৩৫ লাখ, জেলা সদরে ২৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। ঋণ নেওয়া যাবে ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত।
তবে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা থাকলে বা দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঋণের অযোগ্য হবেন। তবে ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজেদের অন্তত ১০ শতাংশ টাকা থাকতে হবে।
তৈরি ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের পুরো অর্থ এক কিস্তিতে ছাড় করবে ব্যাংক। তবে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে ঋণের টাকা ছাড় করা হবে চার কিস্তিতে।